দুধের সরেও আজ বিড়ালের বেশ অনীহা,,
প্রতিযোগী যে নেই তার,,,।বাড়ির কর্তী আজ আর,,
বড় মাছের পেটিটা লুকিয়ে রাখে না  গোপনে ।
গাছের পেয়ারা পেঁকে পেঁকে মাটিতেই শুয়ে পড়ে
তবু কোন উদরের স্বাদ সে পায় না,,।
পাবে কেমন করে?
দশরথের প্রতিজ্ঞা ছাড়াই এ বাড়ির বড় ছেলে
আজ কয়েক বছর ধরে রাম নির্বাসনে,,,


তাই গোয়াল ঘরে গরুটা
দুধের যন্ত্রনায় কাতর  হচ্ছে রোজ,,,
বাছুরটাও খেয়ে খেয়ে ক্লান্ত,,
পুকুরের মাছ একের পর এক বংশবৃদ্ধি করেই যাচ্ছে,
চালতা ফুল থেকে ফল অত:পর বৃক্ষ,,,
নদীর উপর বাশের সাঁকোটা এখন
তীর বাকা রংধনুময় সেতু,,!
কিন্তু কেউ জানে না,,কেউই জানে না,,
সাঁকো  দিয়ে চলে যাওয়া বনবাস বিলাসী
প্রবাসী রাম
সেতুর উপর দিয়ে কবে ফিরবে অযোধ্যায়?
ফিরবে তো?


আর এই প্রশ্নে প্রশ্নে রামও অকাল রোদনে,,,
পুজা করছে ঈশ্বরে ;ভিন্ন মন্ত্রে,,,
মন্ত্রে মন্ত্রে বলছে চোখের জল কুমন্ডলে রেখে।
বাড়িতে আজ খিচুড়ি রান্না হয়েছে ঠাকুর,,
সঙ্গে বেগুন  আর পটলের ভাজি
বোনটা প্রতিসকালে দই,খই আর
খেজুরের গুড়ের সাথে
নাস্তা বানিয়ে ডাকে জানি কাউকে,!
বাবা প্রতি রাতে ভুল করেই  বলে ফেলে মাকে
খোকা কি  ঘুমিয়েছে খেয়ে?
মা নিশ্চুপ,,,
বোকা মা বোবা হয়েও আটকাতে পারে না
চোখের জল।
ছোট ভাইটা,,,অজ্ঞানেই বলে ফেলে
দাদা দাদা,,,,
মেলায় গেলে একটা বেলুন নিয়ে এসো
কিবা বাজ পাখি ঘুড়ি!
কিন্তু একি অল্পক্ষণ পরেও ঘুড়ির  কথাগুলোই যেন অদৃশ্য বেলুন হয়ে কোথায় যায়,,,উড়ে,,,।
উড়ে উড়ে একটি প্রশ্ন হয়েই ফিরে চারদিকে,,
মা,দাদা কবে আসবে?
খোকা কবে আসবে?
আমার নাতি কবে আসবে?
কবে, কবে আসবে যাদুধন?


এমন প্রশ্নের উত্তর ব্যস্ত রাম এই মাত্র
মন্ত্র পড়া শেষ করলো ঈশ্বর সম্মুখে,,
তবে এবার আর মন্ত্র নয় কিবা দাবী নয়
এবার আদেশ করার পালা,,,
ক্ষুধার্ত হৃদয়ের বেদনার্ত আদেশের পালা,,,


হ্যা ঈশ্বর,,,বিধির লিখন
আদেশ করছি তোমায়,,,
আজ তুমি আমার অযোধ্যা নগরে যাও পুত্র বেশে
ভরতের রাজ্যাভিষেক নয়,জীবনাভিষেক হচ্ছে
সানাইয়ের সুরে সুরে,,,
সেথায় একটু সামিল হও আমার হয়ে,,,
হ্যা ঈশ্বর আজ একটু আমার মায়ের কোলে
মাথা রেখে আসো,,,
দু তিন বার হেটে যেও বাবার নয়ন সম্মুখ  দিয়ে,,,
বোনটাকে আদর করে বলো,,,
ডিমের নুডুলস করে দে খুকি
নইলে খাবো না এই রাতে,,,
ছোট্ট ভাইটিকে একটু শাসন করে বলিও
পড়তে বস পাজি,,,পাশ করলেই পাবি বাজি।
অত:পর  ঠাকুরমার পাশে বসি শুনিও
ছড়া,কিচ্ছা আর গীত,,,
দয়া করে ঠাকুর বউদির কন্ঠে
শুনিতে ধামাইল করিও না ভুল,,,,
ভুল করিও না নাচিতে ঢোলের তালে মিলিয়া সকলে,,,
ভুল করেও আসিও না ফিরে
পাশের বাড়ির কাকীমাকে না দেখে,,,
জেঠিমা,জেঠু যে যাই তোমাকে দিবে খেতে
প্রাণ ভরে খেও ঈশ্বর আমার হয়ে,,,।
সারা রাত মায়ের কাছে বসি পড়িও পদ্মপুরাণ খানি,,,
গল্পের তরে কভু কারো সাথে হাটিও গায়ের পথ ধরি,,,
একবার যদি মনে হয় স্নান করার প্রয়োজন,,
নেমে যেও হাওরের জলে,মন চায় যতক্ষণ।
চাদনী রাতে বৈঠা বিহিন সমতল জলে
নাও ছাড়িয়া শুইয়ে ভাসিও,,,
তরী যতদূর ভাসে।
প্রাণ ভরে শুনিও বাঁশি মাঝরাতে কদম্ব তলে,,,
সুনারু গ্রামে মনভরে দেখিও সূর্যোদয় কাকে বলে,,,
গোধুলী বেলায়,,
রঙ মাখা হোলির আকাশ দেখিয়া সুখে,,,
মৃদু মৃদু কাপন তুমি বুঝে নিও এ বুকে।
যাও ঈশ্বর যাও তুমি
আমার স্বগ্রাম স্বদেশে,,,
বুক ভরা শ্বাস নিয়ে এসো
সুখ দুখের মিলন মেখে।
############
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
২৮/১১/১৭