রিক্সার ছাউনির উপরে বেশ বড় করেই লেখা ছিল,,,বেহেস্তের মার্কেটিং ।কিছু ছবি ছিল খেজুর বৃক্ষের কিন্তু সেই বৃক্ষের শেকড়ের ছবি ছিল আঁকা তার টুপিতে,,যে চালিয়ে নিচ্ছে রিক্সাখানি পরম যতনে,,,
তার নিচেই বসে কোথায় জানি যাচ্ছি,,,কোথায় যাবার কথা তাই যাচ্ছি,,,
পাশ দিয়ে বাতাস বইছে কভু বৈরি আবহাওয়ার মত,,আকাশটাও বেশ কালো,,কেন যে দশ নম্বর বিপদ সংকেত দিল না তা বুঝলাম না,,,
প্রয়োজন নেই হয়ত,,, তাই বিপদ থাকলেও সংকেতের আর কি দরকার?
ঠিক সেই সময় কিছু শব্দ বজ্রপাতের মত আমার কাছে লাগল,,,
কোন  জমায়েত কন্ঠের সমস্বরে বলছে,,,
শকুন চিনেন,,অবোধ গরুর মাংস খুব খায়,,,
দুধ খেলে কি মাংস খাওয়াটা খুব খারাপ? শকুনের কাছ থেকেও জেনে নিবেন,,,?
কথাটা কে বলল? চারদিকে তাকালাম,,কেউ একজন বলল,,,কিন্তু একটু খেয়াল করতেই শুনলাম না না কেউ নয়,,সমস্বরে হাজার মাটির পোকা আমার মাটির ভেতর হতে বলল এ কথা,,,আমি অবাক হয় নি,,অবাক হবার মত এ আর কি?  এত অভ্যস্থ এক সত্য,,,।
যা হোক এই সত্য পার হতে না হতেই শুনলাম,,,কোন এক বীর দুদর্ন্ড প্রতাপে বলছে এসে আমার কানের কাছে,,,মূর্তি কে ভাঙ্গে যে হাতুরী,,যে লাঠি,,যে কুড়াল,,
কাল থেকেই তাকেই পূজা করিও বোকা!!
পুরুনো অভ্যাসে সহে যাওয়া কানের তরঙ্গ লয়ে বললাম,,কথাটা কে বলল?কে?
মাথার উপর থেকে ছাউনি বলল,,আমি বলেছি,,,
তার উপর থেকে বাতাস বলল আমি শ্বাস দেই তোমায়,,,তাই আমিই বলেছি,,,তার উপর থেকে মেঘ,, মেঘের উপর থেকে আকাশ বলল আমি বলেছি,,,।
একদল লোক কুড়াল হাতে কাটছিল পথের পাশেই
দাঁড়িয়ে থাকা কাঠ,,,শুকনো ঘাসের বুকে লুকিয়ে থাকা পোকা মাকড়ের বসত ভাংগছিল কিছু উঠতি তরুন তারা চোখ রাঙ্গিয়ে বলল আমি বলেছি,,,রিক্সার চাকাটি হোট করে বোম গ্রেনেডের শব্দে তার বাতাস বের করে দিয়ে বলল আমি বলেছি,,,,
দশদিক হতে শুধু শুনলাম আমি বলেছি,,,
আমি বলেছি পহেলা বৈশাখ হারাম,আমি বলেছি বাংলা শব্দ হারাম,আমি বলেছি বাংলা পোশাক হারাম,আমি বলেছি বাংলা খাদ্য হারাম,,আমি বলেছি বাংলা গান হারাম,আমি বলেছি বাংগালিয়ানাই হারাম,,,হারাম হারাম হারাম,,,
ভয়ে কেপে উঠলো গা,,,দশজনের  দেশে দুজন যে মূল্যহীন এ কী শুধু গণতন্ত্র শিখায়,,,? নাকি হারামতন্ত্র? সেও,,,?
বন্ধ করলাম চোখ,,,ভয়ের চেয়ে ঘৃণার ডরে উন্মুক্ত হল না আর নয়ন,,,ঠিক তখনি,,,এক বিরাট শব্দ,,দেহ থেকে খসে পড়ার আয়োজন প্রাণের,,সম্পন্ন হল চালকের ভুলে,,,


ওরে বেজে উঠলো ডুমরো ঘন্টা,,নটরাজ চিত্তে ব্যাকুল হল মন,,,।গৌরি দেহের মত কোলে নিলাম তাকে,,নিস্তর দেহের নিস্তর চালককে,,,ভাংগা চৌচির রিক্সা খানি কেবল পড়ে রইল পথে,,,
পাঁজাকোলেই যাচ্ছি উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে,,,
এখনো আছে প্রাণ,,এখনো আছে জীবন এই দেহের অন্তরালে,,,এখনি তাকে বাঁচানোর সময় যে এখনো আছে প্রাণে প্রাণে বেঁচে,,,
রক্তাক্ত দেহে রক্তাক্ত লালায় যে  বলল আবারও,,
গরু খাওনি বলেই কি বাঁচাতে চাচ্ছ আমাকে?
মূর্তি পূজা করো বলেই কি বাঁচাতে চাচ্ছ আমাকে?
আমি প্রেমের সুধায় সিক্ত করে নয়ন,,
বললাম  না,,,নারে না,,,,
আমি তোমাকে বাঁচাচ্ছি না,,
বাঁচাচ্ছি তোমার ঈশ্বরকে।
তুমিও বাঁচিয়ে দিও মানুষকে!!!!