গতকালই মুছে দিয়েছে উঠোন হতে গৃহকোণ,,
তুলসী তলায় গতকালই ছিল
শনির ব্রতের নানান পাচালি,,,
হাস গুলোকে আজ সকালেই ছেড়েছে
ফিরে আসবে বলে ঘরে।
কবুতর গুলি বার বার বসেছে চালার উপরে,,,
উঠানের কোনে পুরুনো গাছটার শিকড় হতে জেগেছে
নতুন আরো কয়েকটি কুড়ি,,,
মাটির নিচ হতে মাথা তোলে মুখ দেখাচ্ছে
কাকরোলের ফুল,,,,।
তাহলে কেন তাকে পালাতে হবে গৃহ হতে?
কেন তাকে চলে যেতে হবে নিরুদেশ মেঘের সাথে
ভেসে ভেসে?
আপন রাজ্য কি তার আপনার নয়?


ঘরের পশ্চিমের বেড়াতো কিছুদিনের মধ্যেই
ঠিক করার কথা ছিলো,,,,
সিন্দুকে রাখা নতুন আলতাটা পুরাতন পায়ে-ই
লাগানোর কথা ছিলো।
কথা ছিলো বোয়াল মাছের মাথা দিয়ে
মুড়িঘন্ট রান্না করে
জন্মোৎসব পালন করার।
তাহলে এসব কিছুই কী স্বপ্ন ছিলো?
ছিলো পুরাতন জীর্ণকে আরো পুরাতন করে,,,
আশাভঙ্গের স্রোতে বিসর্জন?


না সে বিসর্জনে সে যাবে না,,,,,
গ্রামের কাচকি থেকে রুই সব যেতে পারে পালিয়ে
তবে সে যাবে না,,,,,
বুলেটের চেহারা হয়ত সে কভু দেখে নি
তবে কালীর হাতে খরগ দেখেছে,,,,


দেখেছে কালীর সম্মুখে বলির অসুর দৃশ্য।
নাগিনীর বিষ হয়ত সাপুড়িনীর নখে নেই,,,কিন্তু হাত আছে মানুষের।
আসুক আসুক পাপী,জারজ পাক অস্ত্রধারী,,,
রক্ত তার পান করবেই করবেই এই বঙ্গনারী।
এর মাঝেই সারা গ্রামে আগুনের উত্তাল নৃত্য।
আত্ম চিতকারে পালাচ্ছে বক,,রাতের বটবৃক্ষ ছেড়ে।
নাগের দুঃসাহস আক্রমনে অসহায় বৃক্ষ যেন মরণ সম্মুখে মরণ কূপ।
শাড়ির আচলখানি কোমরে পেছিয়ে অবলা গৃহবধু কুমতিবালা
আজ নব দূর্গা।
কোন দেবতা হয়তো আসেননি করিতে দান অস্ত্র,,,
তাইই নিজ নয়নেই করিলো মন্ত্র পাঠ গায়ত্রীর।
ভৈরবী নৃত্যে চঞ্চল করে দিলো অশান্ত জল শান্ত হাওরের


ঝাপ দিল সে দিল পাথর নিয়ে হাতে হাওরের জলে,,,
গ্রাম জুরে পাক সৈন্য,,অসীম উল্লাসে
জল্লাদ চিত্তে প্রাণ হরে।
হরে প্রাণ,হরে মান নর নারী শিশুর ভেদ বিচারহীনে,,,
সুশীতল গ্রাম যেন জ্বলন্ত নরক পুরী
ক্রমান্বয়ে,,,


কিন্তু জানিতো কি পাক সেনা
এ গ্রামের চারিপাশে হাওরের জলে
লুকায়ে রয়েছে এক গ্রাম্য নারী।
দুর্গা দুর্গা বলে সে কোপ দিল
পাক পাঞ্জাবীর নৌকার তলে,,,,
নিমিষেই পাপিনী নৌকাখানি গেল সলিল আয়তনে।অত:পর!!


ধ্বংস যজ্ঞ শেষ করে ফিরিবার কালে
হায় হায় রব উঠিলো
কাপুরুষ পাক সন্তানে,,,
কোথায় গেল তরী খানি,কেমনে ডুবিলো তা এই হাওরের জলে
পেছনে আপন আগুনে জ্বলে গ্রাম,,,সম্মুখে সাগর হাওর
পাড়ি দিবে কেমনে?
এমনি সময়ে পেছন হতে জয় শ্রীরাম বলে,,,কুলবধু কুমতিবালা,,
তীর ধনুকে নিলো বেশ দেবীদূর্গা।
তূণের আঘাতে শরের বিষে দিল উপহার মৃত্যুর হার
গলে পরায়ে ওই পাক পাপী বীর্যের।


ভুতলে নামালো পাক পতাকা আপনার চণ্ডাল বেশে,,,
কাপালিক হাতে রক্ত মাখা দেহে সবুজ আচলের মাঝে,,,
গোল বৃত্ত করে রেখে দিয়ে রক্তের স্তুপ,,,
দাড়ালো পাক সৈণ্যের মস্তক উপরে পা রেখে,,,
ধরিলো গান অসীম সাহহে লাল সবুজের আচল উড়ায়ে
" ওমা বদনখানি মলিন হলে
আমি নয়ন জলে ভাসি"