দূরে কোথাও কাজে গেলে, রসদ বেঁধে নেয় সাথে,
তাড়াহুড়া করে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়ে খুব প্রাতে।
যেতে যেতে কারো বাসন থেকে পড়ে যায় কুঞ্জল।


ধানের বিছালী বাঁধার সময় আঙুলের মাথা দিয়ে,
গলগল করে রক্ত পড়ে চামড়া ক্ষয়ে গিয়ে।
অস্ত্রে অঙ্গ কেটে গেলেও থাকে ওরা অবিচল!

বোশেখের খৈফোটা রোদে বিছালির বোঝা মাথায়-
নিয়ে, তপ্ত রাস্তায় দৌঁড়াতে গিয়ে জান বেরিয়ে যায়!
তবুও থামা যায় না, হাতে যে সংসারের হাল।


দু'দিন পয়সার মুখ না দেখলে প্রাণ করে আনচান
সংবৎসর কাজ করে ওরা বসে থাকে না কোন ক্ষণ।
গ্রীষ্ম-বর্ষা, শীত-বসন্ত মানে না কোনো কাল।


ওরা শ্রমিক, ওরা মজুর, ওরা হল চাষা,
গরীব ওরা, এরই মাঝে পায় বাঁচার আশা।
ওদের হাতে দেশবাসীর সব কর্ম হয় সফল।


গরীব হয়ে এসেছে বলে ওদের এহেন অবস্থা,
গৃহস্থের ঘরে জন্ম নেওয়া কী একেবারে সস্তা?
বড় ঘরে জন্ম নেবে, ওদের আছে সে কপাল?


কি মনোরম ওদের পরিবেশ, কী গভীর প্রীতি,
যেখানেই যায় সব সময় মনে পড়ে এ স্মৃতি।
এ দৃশ্য দেখলে চক্ষু পবিত্র, বুক হয় শীতল।


ওদের সামনে সূর্য ওঠে, অস্ত যায় নিত্য,
সকল কাজের কাজী ওরা, সরল এদের চিত্ত ৷
যদিও অশিক্ষিত তবু নয় তো উচ্শৃঙ্খল।


কাজ দেখে ওরা ভয় পায়না কঠিন হোক না যত,
ওদের হাতের স্পর্শে সব হয়ে যায় পানির মত।
খাল-বিল -মাঠ দু'পায়ে দলে ওরা তাপস দল।


কারো ওরা দেয় না ফাঁকি অমল-ধবল কাজ করে,
ঠকা হয়ে গেলে মনিবের কাছে দু'টাকা নেয় ধরে।
ফাঁকি দেবে কেনো ওদের গায়ে নেই কী শক্তি-বল?


পড়তা একটু বেশি হলে ওরা হল্লা দিয়ে উঠি,
কেউ বা আবার নিরব মনে হেসে হয় কুটিকুটি।
খুশিতে তখন কাজে বেগ হয়, মন হয় বিহ্বল।


তখন কেউ গান ধরে দেয়, কেউ করে রসিকতা!
হাসতে হাসতে, চোখে জল, বুক হয়ে যায় ব্যথা!
মনে তখন আনন্দ লাগে, দিন হয় মখমল।


দল বেঁধে মনের সুখে সারাদিন করে কাজ,
গরীব বলে খেটে খায় এতে কিসের লাজ!
নয় তো ওরা চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসীর দল!


ওদের কেউ ঘৃণা করলে তাতে আসে যায় না,
ঘৃণার পাত্র হলেও ওরা কারো সাহায্য চায় না।
ওরা সেবক, ওদের হাতে এদেশ হয় সবল।


কাজের শেষে সাঁঝে ওরা দল বেঁধে ঘরে ফিরি,
গোসল সেরে প্যাকেট নিয়ে বাজারে যায় শিঘ্রী।
সূর্যটা যবে পশ্চিম আকাশে ঢুলে করে টলমল।