শুনেন শুনেন ভাই বোনেরা শুনেন দিয়া মন
অভাগা এক মেয়ের কথা করব যে বর্ণন॥
এক যে ছিল ছোট্ট মেয়ে আঞ্জু তারই নাম
ঘরে ঘরে মায়ের সাথে করতো কতোই কাম॥


ডাহিয়াতে বাড়ি তাদের, নাটোর জেলার সিংরা
বাবার নামটি খলিলু্ল্লাহ মাতা ছামেনা ড়িংরা॥
কুঁড়ের ঘরে থাকতো তারা মা-বাবা-বোন মিলে
জীবন কাটতো দুঃখে তাদের সুখ নিয়েছে চিলে॥


ঘরের জায়গাটুকুই ছিলো, ছিলো না উঠোন
আরও কষ্টে কাটাতো দিন সবার বড় বোন॥
কাজের খুঁজে ঘুরতো বাবা নানান দেশে দেশে
ক্ষুধার জ্বালায় থাকতো মা'য়ে পাগলীনির বেশে॥


মরণ বেরাম ধরল বুঝি অভাগী সেই মা’ রে
ওষুধ ছাড়া রোগের সাথে যুদ্ধে কি আর পারে॥
দূরে সরে গেলো সকল আত্মীয়-স্বজন
যৌবনকালে মরতে চায় না কোন মানুষজন॥


ইশারাতে ডাকলো মায়ে বাছা কাছে আয়
ডাবের পানি খাইতে আমার মন যে বড়ো চায়॥
কোথায় পাবে ডাবের পানি আঞ্জু বসে কান্দে
জট পাকানো চুলগুলো মার কাঁপা হাতে বান্দে॥


অশ্রুজলে যায় যে ভেসে ভাঙা কুঁড়ের ঘর
কোথায় রইলা প্রাণের স্বামী লইলা না খবর॥
এদিক ওদিক চেয়ে খুঁজে কোথায় বড় মেয়ে
দুধের শিশু কান্দে দেখ খাবার নাহি পেয়ে॥


কথা শুনে দৌড়ে গেল বড় বোনের বাড়ি
মরার ভয়ে দিলো মেয়ে মায়ের সাথে আড়ি॥
ঘরে ফিরে দেখে আঞ্জু মায়ে কথা কয় না
ডাবের পানির জন্য তো আর করছে না বায়না॥


লাশের উপর ঘুমিয়ে আছে ছোটসোনা তারা
নিলো না তো কোনো খবর প্রতিবেশী যারা॥
কোথায় রইলা জ্যেঠা-জ্যেঠী এসে দেখো না
আমার মা’য়ে কেনো যে আর চোখ মেলে চায় না॥


কান্না শুনে জেঠীমা তার দরজা বন্ধ করে
আমরা বলো কিতা করবো, মা যদি তোর মরে।।
বাতি ছাড়া খালি ঘরে রইলো মায়ের লাশ
দ্বারে দ্বারে ঘুরে আঞ্জু কিনতে গোরের বাঁশ॥


ব্যর্থ হয়ে কাঁদতে থাকে মায়ের লাশের 'পর
এমন সময় বাবা আসার পেলো যে খবর॥
চিরদিনের বিদায় দিলো দু:খীনী মা’রে
শত ফুলেল শুভেচ্ছা তাই জানাই গো তারে॥


ক্ষুধার জ্বালায় আঞ্জুদের পেট তেমনি আজও জ্বলে
এই জীবনে সুখ পেল না পরাণেরই তলে॥
কাজেরর বুয়া হয়ে তারা জীবন করছে পার
এতোটুকুই জানাইলাম আজ আঞ্জুর সমাচার॥


এই বলিয়া শেষ করিলাম অভাগিনীর কথা
ওদের দুঃখে দুঃখী শুধু ফুল পাখি লতা॥
আমি রুনা লায়লা বলি, শোন মানুষ ওরে
মনে রেখো, মানুষেরা মানুষেরই তরে॥



[বি : দ্র : কবিতাটি আমার ঘরে কাজে সহায়তা করে প্রিয় “ আঞ্জু ’’ কে  উৎসর্গ করলাম।]