জননী এই শব্দটি বড় মধুর,
যা শ্রবণে ভেসে ওঠে একটিই রূপ,
যার মাঝে খুঁজে পাই অপার সুখ,
যার ছোঁয়ায় শীতল হয় দগ্ধ বুক ।।
এই জননীকে আমরা ডাকি নানা নামে,
কেউ বলি মা, কেউ আম্মা, কেউ বা মাদার,
কিন্তু মায়ের রূপ, কোনও বিভেদ নেই তার ।।
মা, আম্মা, মাদার প্রত্যেকেই বুক দিয়ে,
আগলে রাখে সন্তানকে, এই হল তার  রূপ ।।
একটি পক্ষী মা, একটি বাঘিনী মা, বা একটি
নাগিনী মা, সেও তো মমতায় জড়িয়ে রেখে,
কঠিন শ্রমের বিনিময়ে  খাবার জোগাড় করে,
ঝড়, দুর্যোগ থেকে আগলে রাখে তার সন্তানকে ।।
ঠিক তেমনি সকলকে আগলে রেখেছেন মোদের
ধরিত্রী মা, যার তলে, যার ছত্রছায়ায়,
হেসে খেলে বেড়ে উঠেছে সমগ্র জীবকূল ।।
কিন্তু আমরা, সন্তানরা, কেন পারি না মায়ের
সে রূপ বাঁচিয়ে রাখতে, তার উদ্ভিদকূলকে
রক্ষা করে, তার সৃষ্টিকে সুন্দর করে তুলতে ??
মোদের দেশমাতা, তথা বঙ্গমাতা, তথা ভারতমাতা,
দুশো বছরের পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে, তার সন্তানরা,
তাকে মুক্ত করল, স্বাধীন হল মা ও তার সন্তান,
মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নিয়ে,
কত বিপ্লবীর রক্তে রাঙা হয়ে, ধ্বনিত হল বন্দেমাতরম ।।
কিন্তু কেন আজ সেই মায়ের চোখে জল ??
কিসের হানাহানি, কিসের বিবাদ ??
একটি সন্তানের অকাল মৃত্যু, শূন্য করে,
একটি মা, একটি আম্মা, একটি মাদার, ও সেই
দেশমাতা, ও সেই ধরিত্রী মায়ের মমতার কোল ।।
পথেঘাটে নারীকে হেনস্তা করে, তার সম্মানহানী করে,
তাকে লাঞ্ছিত করে, কভু নির্বাক দর্শক হয়ে তা সহ্য করেও,
পরোক্ষভাবে এই আমরাই কলঙ্কিত করে ফেলি  সেই মাকে ।।
যে মা কঠিন পরিশ্রম করে সন্তানের মুখে,
তুলে দেয় অন্ন, বৃদ্ধ বয়সে সেই মুখেই অন্ন তুলে দিতে,
সন্তান আজ অক্ষম, মায়ের ঠিকানা তাই  বৃদ্ধাশ্রম ।।
মা মানেই গর্ভধারিণী ?? কভু না,
সন্তান গর্ভের কি, গর্ভের না, সে বিচার করে কোন মা ??
আমাদের সকলের মা, সারদা মা,
গর্ভে না ধরেও বিশ্ব জুড়ে তার মমতায়, তার স্নেহে
লালিত হয়েছে, তোমার আমার মত অগণিত সন্তান ।।
ছোট ছোট পিতৃমাতৃহীন শিশুদের বুকে টেনে নিয়ে,
তাদের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে, তাদের আশ্রয় দিয়ে,
ধীরে ধীরে এক আশ্রম গড়ে তুললেন সুদূর বিদেশ হতে
আসা অ্যাগনেস,  জন্ম তার বিদেশ হলেও, এ দেশে,
তিনি যে আমাদের সকলের মা, মাদার টেরেজা ।।
এই সকল মানবী মায়ের মাঝেই খুঁজে পাই দেবী মাকে,
কভু কালী, দুর্গা, কভু শীতলা, মনসা, এমনি নানা রূপে ।।
তাই তো কবির সেই বাণী, আজও বারে বারে বলি,
জননী তথা জন্মভূমির কোলের সুখ, স্বর্গসুখের অধিক নয় কি ??