গ্রাম থেকে পাঁচ ক্রোশ দূরে প্রিয় নেত্রকোণা,  
দাদার বাড়ি থাকলেও শহরে কেউ ছিলনা।
প্রায়ই মামার বাসায় যেতাম বেড়ানোর তরে,
বর্ষাকালে সবাই মিলে নৌকায় উঠতাম ভোরে।
পেরিয়ে হাওড়, খাল-বিল,নদী-নালা ঘুরে,
নৌকায় চড়ে যেতে হতো অনেক দূরে।  
খাল-বিল পেরিয়ে গোমাই নদী ছেড়ে,  
পড়েছি খরস্রোতা রাক্ষসী কংস নদীতে,
যুদ্ধ হবে এবার কংসের স্রোতের সাথে।  
মাঝিরা বিধাতাকে স্মরে এগোচ্ছে সাবধানে,
দু’ক্রোশ পরে মাঝিরা হাক ছাড়ল এতক্ষণে।  
“ঐ দেখা যায় বড়াইয়ের খাল  একটু দূরে,
টানো বইঠা আল্লাহর নামে আরো জোরে।”
মাঝির মুখে ফুটল হাসি বড়াইয়ের খালে পরে,
যেতে পারবে আরামে ভাটির স্রোতের টানে।
কিন্তু পাশাপাশি রেল ও সড়ক সেতু সামনে,
আল্লার নামে ধরতে হবে হাল  অতি সাবধানে,  
ধাক্কা লেগে বিপদ হতে পারে আনমনে।
অনেক নৌকাই ভেঙ্গে ডুবে যায় এখানে।  
ব্রিজ পেরিয়ে বাংলার বিলের পর,  
চার ঘন্টা সাধনায় এলাম নেত্রকোণা শহর   ।
সড়কের পাশে নোঙ্গর ফেলল নৌকা শহরের উত্তর।  
নতুন কাপড় পরে রিক্সায় চড়ে গেলাম মামার বাড়ি,
নেশা ছিল হিরামণে গিয়ে যেন সিনেমা দেখতে পারি।
যতবার গিয়েছি নেত্রকোণা দেখেছি সিনেমা মজা করে।  
বার মাইল হেঁটে যখন গিয়েছি প্রিয় শহরে,  
গয়ানাথের বালিশ মিষ্টি খেয়েছি শূন্যপেট ভরে।
এখন ভাবি কীভাবে স্থায়ীভাবে থাকবো শহরে।
মামাত ভাই বলে, এসো আমাদের বাসায় চলে,  
মামাকে বলে  আসলাম আমার স্বপ্নের শহরে।
ভর্তি হলাম ক্লাস ফাইভে দত্ত হাই স্কুলে।  
গ্রামের দুরন্ত বালক, কমলোনা আমার দুরন্তপনা।
ছিল আমার সমবয়সী দুষ্ট মামাত ভাই-বোনেরা,
বন্ধুরা মিলে ফাঁকে চষে নিতাম শহর নেত্রকোণা।  
মগড়া নদীতে প্রতিদিন সাঁতার কাটতাম দল বেঁধে,
পাকাঘাটে পানিতে ড্রাইভ দিতাম উপর থেকে।  
কাটলি-নাগড়ায় যেতাম ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতাতে,
গাছের মগডালে উঠে যেতাম কাটা ঘুড্ডি পাড়তে।  
রেল স্টেশনে গিয়েছি দল বেঁধে যখন তখন,  
কয়লার ইঞ্জিন দেখেছি প্রাণ ভরে শখ করে ।
দু’জনে সিগারেটের বান্ডি কুড়িয়েছি পকেট ভরে,
দূর্গাপূজায় সারা শহরের মণ্ডপ দেখেছি ঘুরে।  
একে অপরের বন্ধু, ভেদাভেদ ছিলনা ঘরে ঘরে।  
ভাড়া সাইকেল চালিয়েছি প্রতিদিন বিকালে,
এক ঘন্টার ভাড়া সাইকেল বাড়িতে গিয়ে তিনদিন,
নালিশ করে মামার কাছে জালেক ভাই প্রতিদিন।  
ফিরে এসে দিলাম দশ টাকা আর সাইকেল।  
জালেক ভাই বলে, আপনি এতদিনে আইলেন ,  
সাইকেল যে পেয়েছি ফেরত ভাল আমার কপাল।    
স্কুলের পরে সব কাজ সেরে যেতে হতো বাজারে,  
মামী বাজারে পাঠাতো এটা সেটা আনতে বারে বারে ।  
যখন ক্লাস সিক্সে, চলে গেলাম বাড়ি পল্লির টানে,  
পড়লাম গ্রামের বিদ্যালয়ে  সিক্স ও সেভেনে।  
যেতে আবার প্রিয় নেত্রকোণা আকুল হল মন,  
ভর্তি হলাম এইটে চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে এখন।  
বিরাশি সালে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হলাম আঞ্জুমানে,    
কি করে ভাল রিজাল্ট করি ভাবি মনে মনে,  
পাস করি এসএসসি পরীক্ষা উনিশ শ চুরাশি সনে।  
ছোট ভাই সোহাগও পড়ে ষষ্ঠ শ্রেনিতে  আঞ্জুমানে,  
মামার বাসা ছেড়ে এখন থাকি দু’ভাই মিলে অন্যখানে।  
দুষ্টুমি কমেছে, ভর্তি হয়েছি নেত্রকোণা সরকারি কলেজে।
এর পর ভর্তি হয়েছি অনার্সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে,
এখনো আছি ঢাকা শহর, কখনও যাই আমার প্রিয় শহরে ।