যে কথা লিখেছিলে,উড়িয়ে দিয়ে যাও--
   চকচকে চোখটি বিশ্রাম পাক।
   সন্ধ্যার লগ্নে আকাশের তারকা
এ চোখের পরশে ঝাঁক খুঁজে পাক।


-----------------------------------
               💄গদ্য ও পদ্য💄


কোমলে কঠোরে গড়া আমাদের এই ভুবনখানি ;
কাব্যভুবনে দুই সহোদরা,তোমাদেরও তাই মানি।


    💄একথা মানতেই হবে, ছন্দবদ্ধ কবিতায় যে কোমলতা থাকে গদ্যকবিতায় তা থাকে না। সেটা বোঝার জন্য কোন পণ্ডিত হবারও দরকার দেখি না।
তবু বিগত শতাব্দীর তিরিশের দশকে পরিবর্তিত পৃথিবীর কঠিন রূপ-কে তুলে ধরার জন্য কয়েকজন প্রতিভাবান কবি উপলব্ধি করেন যে, কেবল শ্রুতিমাধুর্য নয়, পঠনমাধুর্যেও গড়ে উঠতে পারে কবিতা। তারা প্রচলিত ছন্দরীতির নিক্তিমাপা বেড়াজাল ভেঙে ক্রমশ ভাবছন্দের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকেন। এই ভাঙা-গড়ার প্রয়াসটা বিদেশী সাহিত্যে শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। নেট-ঘেঁটে জানতে পেরেছি যে, গদ্যকবিতার প্রথম সার্থক প্রণেতা হলেন Aloysius Bertand যিনি গদ্য রীতিতে রচনা করেন Gespard La Nuit নামক কাব্যগ্রন্হ। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে 1869 সালে Bandelaire লেখেন Petis poems en prose.


      💄এখন প্রশ্ন হল, গদ্যকবিতাকে কি আদৌ কবিতা বলা যায়? আমি আগেই বলেছি যে, কিছু কিছু বিষয় আছে যা বোঝার জন্য কোন পণ্ডিত হবার   দরকার হয় না। সাধারণ বোধবুদ্ধিই যথেষ্ট। কিন্তু মুশকিলটা হল এই যে, প্রায় একই ধরনের কথা কোন অখ্যাত মানুষ বললেও  সাধারণের কাছে তা তেমন গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে না, কিন্তু  সেই একই কথা যখন  কোন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন তখন তা  সহজেই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে মানুষের কাছে। কাজেই এই চিরবিতর্কিত বিষয়ে আমার নিজস্ব মতামত তুলে ধরব বলে যেটা ঠিক করেছিলাম তা থেকে সরে আসার কারণেই  এই ষষ্ঠ পর্ব প্রকাশে এত দেরি। কেননা এ বিষয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিরা কি বলে গেছেন তারই তল্লাশে ছিলাম। প্রথমেই যাঁর কথা মনে এল তিনি হলেন একমেবদ্বিতীয়ম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কেননা আমার বরাবরের বিশ্বাস, এই মহান মানুষটি  (তাঁর সময়ের) এমন কোন বিষয় নেই যার উপর তিনি আলোকপাত করেননি। যাই হোক, হাতের কাছেই রবীন্দ্র রচনাবলীর সুবিশাল ভাণ্ডার মজুত ছিল যার অধিকাংশই আজও অপঠিত। সেখানে তল্লাশি চালাতেই মিলে গেল কাঙ্খিত ধন। আর্কিমিডিসের মত 'ইউরেকা' বলে চিৎকার করে উঠিনি ঠিকই, কিন্তু মনের ভার প্রায় পুরোটাই নেমে গেল। কেননা, গদ্যকবিতা সম্পর্কে নিজের বোধবুদ্ধি অনুযায়ী এতদিন যা ভেবে এসেছি প্রায় একই  কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম  'আজি হতে শতবর্ষ আগে' লিখে যাওয়া রচনাভাণ্ডারে। ফলে নিজের ভাষায় নয়, এবার কবিগুরুর ভাষাতেই গদ্যকবিতা সম্পর্কিত আলোচনাটি আবর্তিত হোকঃ-


    💄"ছন্দের মধ্যে যে বেগ আছে সেই বেগের অভিঘাতে রসগর্ভ বাক্য সহজে হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করে, মনকে দুলিয়ে তোলে, একথা স্বীকার করতে হবে । তবে ছন্দটাই যে ঐকান্তিকভাবে কাব্য তা নয়। কাব্যের মূল কথাটা আছে রসে, ছন্দটা এই রসের পরিচয় দেয় তার আনুসঙ্গ হয়ে। সহায়তা করে দুই দিক থেকেই। তবে মধুসূদন বাংলা সাহিত্যে সেই ধারা ভেঙে আনলেন অমিত্রাক্ষর ছন্দ। তাতে রইল না মিল, ছন্দের পদক্ষেপ চলে ক্রমাগত বেড়া ডিঙিয়ে । অর্থাৎ এর ভঙ্গি পদ্যের মত কিন্তু ব্যবহার চলে গদ্যের চালে। আজ তাই গদ্যকাব্যের উপর প্রমাণের ভার পড়েছে যে গদ্যেও কাব্যের সঞ্চারণ অসাধ্য নয়। ... কাব্য প্রাত্যহিক সংসারের অপরিমার্জিত বাস্তবতা থেকে যত দূরে ছিল, এখন তা নেই, এখন সে সমস্তকেই আপন রসালোকে উত্তীর্ণ করতে চায়। ... বাস্তব জগৎ ও রসের জগতের সমন্বয় সাধনে গদ্য কাজে লাগে, কেননা গদ্য শুচিবায়ুগ্রস্ত নয়।"  


      রবীন্দ্রনাথ নিজেই তাঁর পত্রপুট কাব্য গদ্যরীতিতে রচনা করে দেখিয়ে দেন গদ্যকবিতা কেমন হওয়া উচিতঃ--