তখন কলেজে পড়ি। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করলেও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ মাধ্যমিক স্তর থেকেই জন্ম নিয়েছিল। হরফ প্রকাশনীর আব্দুল আজীজ আল আমান সাহেব যিনি "গতি" ও "কাফেলা" পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন, উত্তর ২৪ পরগণায় আমার প্রতিবেশী ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি পাকাপাকিভাবে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। সে সময় অর্থাৎ গত শতাব্দীর আশির দশকে আল আমান সাহেব প্রতি ইংরাজি মাসের চতুর্থ রবিবার কলেজ স্ট্রিটে তাঁর প্রকাশনা সংস্থার অফিসে সাহিত্য-আড্ডার আয়োজন করতেন। আমি প্রায় প্রতিটি আড্ডাতেই উপস্থিত থাকতাম। জ্ঞানী-গুণী মানুষদের ভিড়ে চুপটি করে বসে থাকতাম এক কোণে। আল আমান সাহেব প্রায়ই হাতের ইশারায় ডেকে নিয়ে পাশে বসিয়ে নিতেন।


         ঐ আড্ডায় প্রত্যেকেই যে যাঁর রচনা পাঠ করতেন।সেগুলি পরবর্তী সংখ্যার  সাপ্তাহিক গতি (পরে নাম হয় নতুন গতি) অথবা মাসিক কাফেলা  পত্রিকায় ছাপা হতো। পরে ঐ পত্রিকাদুটি  হাতে পেলে বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করতাম। ভাবতাম, এর অধিকাংশ রচনাই তো আগেই শুনে ফেলেছি। তবু সেগুলি ছাপার অক্ষরে দেখতে খুব ভাল লাগতো।আর নিজের লেখা দেখার তো আনন্দই আলাদা।আমার অনেক কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প পত্রিকাদুটিতে ছাপা হয়েছিল সে সময়।তাছাড়া " বর্তমান মুসলিম সমাজঃ আত্মসমীক্ষা" শিরোনামে একটা রচনা ধারাবাহিকভাবে লিখতাম সাপ্তাহিক গতিতে।


         যাই হোক সেই আড্ডায় বিভিন্ন সময় শঙ্খ ঘোষ, গৌর কিশোর ঘোষ, অধ্যাপক কবি কবিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের কবি আল মাহমুদ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শঙ্করলাল ভট্টাচার্য, রম্য-লেখক আব্দুর রাকিব,এ এম রফিকুল হাসান, ডাঃ নুরুজ্জামান প্রমুখ বহু কবি-সাহিত্যিককে যোগদান করতে দেখেছি।আল আমান সাহেব সে সময় তাঁর বিখ্যাত ভ্রমণ-সাহিত্য "কাবার পথে" ধারাবাহিক ভাবে  তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায় প্রকাশ করে চলেছেন।সেগুলি প্রকাশের আগে আড্ডায় তাঁর সুললিত কণ্ঠে পড়ে শোনাতেন।


          আজ সেগুলো শুধুই স্মৃতি! এই গতিময় যান্ত্রিক যুগে আড্ডা বুঝি আজ ব্রাত্য।


           একালেও আমরা কয়েকজন একটা লিটল ম্যাগের (তবুও দৃষ্টান্ত) সৌজন্যে একটা মাসিক আড্ডার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু অভিজ্ঞতা মোটেই আশাপ্রদ নয়। খুব উৎসাহের সাথে শুরু হয়ে ততোধিক উৎসাহের সাথে একদিন বন্ধ হয়ে গেল।তাই শ্রদ্ধেয় মান্না দে'র সাথে সুর মিলিয়ে গাইতেই হচ্ছে, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই আজ আর নেই ...