যাচ্ছ কোথায়? কোথায় আবার, লক্ষ্যে!
ঘোর বিপদে করবে কে বা রক্ষে --
ভেবেছো তা  একটু থেমে,  কিছু?
জবাব কোথায়? করছো মাথা নিচু!


রাহা খরচ আছে না কি? আছে ।
গয়না-গাটি, প্রচুর টাকা, এসব!
মই নিয়েছো? উঠতে হবে গাছে --
যা আছে তা লাগবে কাজে সেসব?


সাঁতার জানো, সাগর-সাঁতার? জানি।
ডুব সাঁতার আর চিৎ সাঁতারে তুমি
বড় জোর এক সাগর-তরা প্রাণী--
ডুবুরি হও, মিলবে মুক্তো-ভূমি।
---------------


      কবিতার বহিরঙ্গ কবিতার মতই হওয়া উচিত বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। নারীর সৌন্দর্য যেমন নারীসুলভ পোশাকেই  তেমনই কবিতার সৌন্দর্য ছন্দময়তায়। গত শতাব্দীর শেষ দিকে সামাজিক, অর্থনৈতিক,  রাজনৈতিক ও নানাবিধ প্রেক্ষাপটের প্রভাবে ছন্দ ভাঙার একটা হিড়িক তথা হুজুগ উঠেছিল বটে, কিন্তু সেটাকে আজও টেনে নিয়ে যাওয়ার কোন অর্থ আছে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া একালের কবিতা-রচয়িতাদের বর্তমান আর্থ-সামাজিক  প্রেক্ষিত ও নবপ্রজন্মের মানসিকতার দিকটিকেও মাথায় রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। আমরা কেউ কেউ বলে থাকি, নিজের জন্য কবিতা লিখি। সত্যিই কি তাই? তাহলেতো নিজের ডায়েরির পাতাতেই লিখে রাখা যেত।  আসলে আত্মপ্রকাশের তীব্র বাসনাই কবিতার জন্ম দেয়। নিজের অনুভূতি পাঠকের সাথে শেয়ার করার জন্যই আমরা কবিতা লিখি। তাই পাঠকের কথা অবশ্যই মাথায় রাখা দরকার। যদিও সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি, একথা যেমন সত্যি, তেমনই সকলেই পাঠক (বোদ্ধা ) নয় কেউ কেউ পাঠক, একথাটাও সমানভাবে সত্যি।


          ইদানিং কবিতায় 'দুর্বোধ্যতা' কতদূর সঙ্গত তাই নিয়ে প্রায়ই বিতর্কের ঝড় উঠতে দেখি। দুপক্ষই যে যার অবস্হানে অনড়। 'দুর্বোধ্যতা' বিষয়টি আপেক্ষিক,  কথাটা মেনে নিয়েও বলছি, পাঠককে পরীক্ষার্থী ভাবাটাকে আমি সমর্থন করি না। যেসব খ্যাতনামা কবির কবিতায় আপাত দুর্বোধ্য শব্দসমাবেশ দেখি সেগুলো একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, কত নিপুণভাবে অর্থময় উপমার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন তাঁরা। কেননা, তাঁরা প্রকৃত শব্দশিল্পী। শব্দ তাঁদের সাধনাক্ষেত্র । রীতিমত গবেষণা চালান কোন একটি অভিনব শব্দ প্রয়োগের আগে। সস্তায় বাজিমাত করার চেষ্টা করেন না। শুধুমাত্র পাঠককে চমকে দেওয়ার মানসিকতা নিয়েও তাঁরা সেটি করেন না। কাজেই, আপাত দুর্বোধ্য অভিনব শব্দের প্রয়োগ ঘটানো যেতে পারে, যদি তা প্রাসঙ্গিক ও অর্থময় হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় কবিদের ভিড়ে মিশে থাকে কিছু অকবির দল। আমাদের প্রিয় কবি ও এডমিন বোদরুল আলম মহাশয়ের ভাষায়, 'কেউ কেউ কবিতা লেখেন, আবার কেউ কেউ কবিতার মত করে কিছু লেখেন।' এই শেষোক্তরা কবিতা-পাঠকের কবিতাপ্রেমে অন্তরায় হয়ে উঠছে। অথচ আমরা সকলেই চাই ভোগবাদের এই সন্ধিক্ষণে নবপ্রজন্মকে আরও বেশি বেশি কবিতার মত সুস্হ জগতে টেনে আনতে। তাই সস্তায় বাজিমাত করতে চাওয়া অকবিদের মুখোশ খোলাটা জরুরি। এই কবিদের উদ্দেশ্যেই একটি আলোচনায় ব্যাখ্যা চাওয়ার কথা বলেছিলাম। প্রকৃত শব্দশিল্পী কবিদের উদ্দেশ্যে নয়। তবু, জানি না কেন, অনেকেই বক্তব্যটাকে 'সকলের উদ্দেশ্যে' বলে ধরে নিয়েছিলেন।


          যাই হোক, শিবসঙ্গীতের পর এবার প্রসঙ্গে আসা যাক, আমরা জানি ছন্দোবদ্ধ রচনার নামই কবিতা। আর সেই জন্যই  কবিতাকে যাতে কবিতার মতই পাঠ করতে পারে পাঠক সেব্যাপারে রচয়িতাকে সদা সজাগ থাকতে হয়। প্রয়োজন হয় পাঠককে মাঝে মাঝে একটুখানি থামার সুযোগ দেওয়া । এই থামার জায়গাগুলোকেই বলা হয় যতি। দাঁড়ি,  কমা ইত্যাদি যতিচিহ্ন ছাড়াও পাঠসুষমা সৃষ্টির জন্য অন্যত্রও থামার প্রয়োজন হয়। যদিও পাঁচ রকমের যতির কথা বলা হয়ে থাকে, আমি কেবল কেবল তিন রকম যতির কথাই বলব। কারণ অন্য দুটি যতির তেমন গুরুত্ব নেই ।

        পঙক্তিযতিঃ- প্রচলিত অর্থে আমরা যাকে পঙক্তি বলি, সেটা ঠিক নয়।