ইতালীর সিসিলি। একটা দ্বীপ । ভু-মধ্য সাগরে অবস্হিত। সেই অঞ্চলের একটি অন্যতম প্রদেশ পালেরমো । সাগরের কুল ঘেষে যার অবস্হান। একদিকে বিশাল সাগরের জলরাশি আর অপরদিকে আকাশচুয়া বিশাল উঁচু উঁচু পাহাড় মাথা তুলে দাড়িয়ে প্রদেশটাকে যেন পাহারা দিচ্ছে। চমৎকার,নয়নাভিরাম একটি প্রদেশ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই ধরনীটাকে সাজিয়েছেন কি যে এক নয়নাভিরাম অবয়বে যা শুধু সন্ধানী চোঁখই খুজে পাবে।


অনেক অনেক পুরাতন একটি শহর পালেরমো। শহরের বেশীর ভাগ বিল্ডিং গুলোতে মরিচা ধরেছে, অনেকটার গায়ের চামড়া উটে যাচ্ছে। ইতালীর সরকার যেন ইচ্ছে করেই মরিচাওয়ালা বিল্ডিংগুলো রেখে দিয়েছে। যাতে করে শহরের পুরাতন বৈশিষ্ট মানুষের চোঁখে ধরা পড়ে। মজার বিষয় হলো, পালেরমোর কিছু এলাকায় হাটলে আপনার মনে হবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কোন গলিতে আপনি ঢুকেছেন। শহরের বাহির অংশটা যতটা সুন্দর,শহরের ভেতরের অংশ ততটা নোংরা। রাস্তার ধারে খুলা এবং এলোমেলো ডাস্টবিন ইউরোপের আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। তবে হে, প্রতি রাতের বেলাই ডাস্টবিন গুলো পরিষ্কার করা হয়।


গিয়েছিলাম বেড়াতে নয়, একটি কাজে। একদিন বিকালে গিয়েছিলাম,মাঝে একদিন থেকেছি, পরদিন সন্ধা ৮ টায় আবার প্যারিসের উদ্দেশ্যে বিমানে উড়েছি।প্যারিস থেকে যেতে লাগে মাত্র ২ ঘন্টা , তার মধ্যে ১ ঘন্টা আপনাকে ভু-মধ্য সাগরের উপর থাকতে হবে। পালেরমো থেকে আপনি যখন বিমানে উড়বেন তখন রানওয়ে থেকে বিমান উড়ার পরই আপনাকে ভু-মধ্য সাগর পাড়ি দিতে হবে। সাগরের এতটা কাছাকাছি বিমান বন্দরটি, বিমানের মাথাটা মাটি থেকে উপরে তুললেই সাগর। আবার বিমান ল্যান্ড করতে গেলে সাগরের পানিতে যেন লেজ বিজিয়ে তারপর মাটিতে গড়াগড়ি।


আমার সাথে ছিলেন আরো একজন। আমরা দুজনে আসার পথে যখন বিমানে চড়লাম তখন সন্ধা ৮ টা, অর্থ্যাৎ মাগরিবের নামাজের সময়। আবার বিমান যখন ভু-মধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে ফ্রান্সের আকাশে তখন ৯ টা ১০/১৫ মিনিট ফ্রান্সের মাগরিবের নামাজের সময় । এরকম একটা সুন্দর সময় আমরা কাটিয়েছি বিমানে । এই বিষয়টা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।


পালেরমোতে কিছু বাংলাদেশী ভাইদের সাথে দেখা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সেখানকার বাংলাদেশীদের সম্পর্কে জানার কিছু প্রয়াস চালিয়েছিলাম। যা জানতে পারলাম,


-সেখানে প্রায় ১৬ হাজার বাংলাদেশী বসবাস করেন,যার ১০ থেকে ১১ হাজার বর্তমানে বৈধ ভাবেই বসবাস করছেন।


- এই শহরে ৭০ থেকে ৮০ টি বাংলাদেশী মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্টান রয়েছে। (একজন অবশ্য বলেছিলেন প্রায় ৩০০ ব্যবসা প্রতিষ্টান আছে)


- সেখানে ভালো লাগার আরেকটি বিষয় হলো,বাংলাদেশীদের পরিচালনাধীন ৬ টি মসজিদ রয়েছে এই পালেরমোতে।


- এই শহরে সিলেট,কুমিল্লা আর নোয়াখালির মানুষ ই বেশী ।


- ১৬ হাজার বাংলাদেশীদের মধ্যে পরিবারের সংখ্যা হাজার খানেক। তার কারন হলো বাংলাদেশীরা মাত্র বৈধতার কাগজ পেয়েছেন।


-বাংলাদেশের রাজনৈতি দলগুলোর মধ্যে আওয়ামীলীগ ও বি এন পি স্বনামে দলীয় কর্মকান্ড চালাচ্ছে। যদিও ৩/৪ টি গ্রুপ হয়ে মাঝে মধ্যে মারামারি করে খাটি বাংলাদেশী পরিচয় দিতে কার্পন্য করেন না।


- বাংলাদেশীদের মধ্যে একটি ইসলামিক সংগঠন ও রয়েছে।


সব মিলিয়ে পালেরমো ভালো লেগেছে। তবে আত্বীতেয়তার বিষয়টি এমন যে সব দেশেই বাংলাদেশীরা একে অপরের প্রতি খুবই আন্তরিক যা বলার অপেক্ষা রাখেনা।