দিশাহীন হয়ে বসে আছি অনেকক্ষণ যাবত,
ক্লাসময় দিনটি লাগছে যেনো বিশাল পর্বত।
ভালো লাগছে না বসে থাকতে, করতে আর ক্লাস,
অবস্থা দেখে এক সহপাঠী বললো, -
“ক্লাস না করলে, পাওয়া যাবে না এ-প্লাস”।


বিরক্তিমাখা মুড নিয়ে, তাকালাম ঘড়ির দিক।
বাজতে চারটা এখনো বাকী মিনিট পাঁচেক!
সময়টা কাটছে না এতো হৈ হুল্লোড়ের মাঝে,
ভাবলাম এতোক্ষণ কেনো বসে আছি, জানি না কোন কাজে।


নতুন এক মুখের প্রবেশ, চারটা বাজার কিছু পর।
বুঝে নিলাম ইনিই আমাদের, কাঙ্ক্ষিত সেই টীচার।
পরিচয় পর্বে জানতে পারলাম,
নাম ওনার ফয়সাল আকবার।


পরিচয় পর্ব শেষ করে বললেন স্যার,
“বাংলাদেশ স্টাডিজ পড়ানোর বিষয় আমার।
এই বিষয়ে জানার থাকলে জিজ্ঞেস করো আমাকে।
বিস্তারিত পড়াশোনায় যাবো না আজকে।“


প্রশ্ন করা হলো না আমাদের আর;
একে একে প্রশ্ন করলেন স্বয়ং স্যার।
প্রথমেই শুরু হলো, দিয়ে “ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে অব বাংলাদেশ”।
তখন থেকেই বোঝা আরম্ভ করলাম
সোনালী ইতিহাসে ভরা আমাদের এই বাংলাদেশ।


রাজধানী যার ঢাকা, তবে এটি নয়তো কভু ফাঁকা।
দেশের মানুষ ফিরে পায় এই শহরে,
জীবনের গতির চাকা।


তিন দিকে যার ইন্ডিয়া, দক্ষিণে বে অব বেঙ্গল।
প্রাকৃতিক ঝুঁকিতে থাকলেও, বসবাসের জন্য নয়তো অমঙ্গল।


ছয়টি ঋতুতে গড়া এ দেশ, সামাজিকতায় শীর্ষে;
জনসংখ্যায় বেশী হলেও,
মিলেমিশে থাকতে নেইতো কারো হিংসে।
দুই ঈদের উৎসবে, খুশিতে যেমন মাতোয়ারা;
পূজা আর দেশীয় উৎসবে মেতে উঠতে, নেইতো কারো মানা।
মুসলিম, হিন্দু, উপজাতি, সবসময় একাকার;
এমন দেশে জন্ম, সৌভাগ্য আমার।


অর্থনীতি, শিক্ষা, সাধনা আর চেতনায়,
ক্রমশ হচ্ছে অগ্রগতি;
দিনে দিনে বদলে যাচ্ছে, দেশের পরিস্থিতি।


এই দেশেই রয়েছে, বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।
রয়েছে সুন্দরবন আর রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
আছে পদ্মার ইলিশ এবং ক্রিকেট মাঠের বাঘ,
যা এই জাতির সত্যিকারের অহংকার।


হঠাৎ শুনশান নীরবতা।
বুঝলাম, আজ নেই আর স্যারের কথা।
ভাবছিলাম, এ কোথায় আছি, যেনো রূপালী পর্দায়!
এতো রূপ-সৌন্দর্য, সুখ-শান্তি এই বাংলায়!
“আজকের মতো এখানেই শেষ”, বললেন স্যার,
“আগামী ক্লাসে উপাগতো থাকবেন,
কারণ সেই টপিক আরো মজার।“


এক সপ্তাহ পর শুরু হলো মজার সেই ক্লাস।
স্যার বললনে, “আজকের টপিক-বাংলাদেশের ইতিহাস।
এই দেশের হিস্টোরি, নয়তো কিছুদিনের।
খ্রিষ্টের জন্মের সাত’শ বছর পূর্বেও,
এই বঙ্গে বসবাস ছিলো মানুষের।
মৌর্য্য, গুপ্ত, গৌর, পাল আর সেনের রাজত্ব ছিলো এই বঙ্গে;
খীলজী, মামলুক, তুঘলক,
গণেশ, হোসাইন শাহ, তারাও ছিলেন বীর দর্পে।


সর্বজন আলোচিত মুঘল নবাবদের যুগ,
নানা বিষাদময়ী কাহিনী হয়েছিলো এতে যোগ।


চলছিলো খুব ভালোভাবে, বঙ্গের অগ্রগতি,
হঠাৎ কী এক ঝড় আসলো, নাম- মীর জাফর নীতি।
মুহুর্তেই সব ওলোট পালট, বঙ্গ হলো বৃটিশবন্দী,
এরপরই হলো শুরু, তাদের তাড়ানোর ফন্দি।
ফকীর, সন্যাসী, রংপুর ফার্মার,
বলাকি, ফরায়েজি, তিতুমীরের আন্দোলন সবই হলো ব্যর্থ।
তারপরও কাজ করেছেন রামমোহন রায়, আব্দুল লতিফ,
আমীর আলী, আহমেদ খান, ত্যাগ করে সব স্বার্থ।


এরই মধ্যে ঘটিত হলো বাংলা বিভাজন;
মুসলিম-হিন্দু বিতর্কটা হলো শিরোনাম।
ইংরেজের বিরুদ্ধে আন্দোলন যায়নি তবু থেমে,
পরাধীনতা থেকে মুক্ত হতে, মানুষ রাজপথে এসেছিলো নেমে।
স্বদেশী খেলাফত আর কোয়াইট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট
ছিলো যার জলন্ত প্রমাণ।
অবশেষে ’৪৭-এ হলো,
কাঙ্ক্ষিত ব্রিটিশের অবসান।


এরপর শুরু নতুন অধ্যায়, নাম যার পাকিস্তান।
একই দেশ হলেও এই দেশকে করেছিলো তারা গোরস্থান।
প্রিয় এই জন্মভূমি, শাসনের নামে করেছিলো শোষণ।
দিনে দিনে বেড়েছিলোঅত্যাচার আর দমন পীড়ন।


প্রথমেই হাত দিলো তারা মায়ের ভাষার উপর।
বদৌলতে, রফিক সালাম বরকত শফিউর শহীদ-অমর।
ভাইদের রক্তে রঙিন হলো ঢাকার রাজপথ,
উর্দু হবে না দেশের ভাষা; ছাত্ররা করেছিলো শপথ।
ভাষার জয়গান গাইলেও আসেনি চুড়ান্ত জয়,
অস্ত্র হাতে নিতে তাইতো, মুক্তিযোদ্ধারা করেনি ভয়।
বজ্রকন্ঠ ঘোষণা আসলো বঙ্গবন্ধু থেকে;
পিছু হটার নেইতো সময়, যেতে হবে যুদ্ধে।
শুরু হলো পালটা লড়াই,
এ লড়াই স্বাধীনতার পক্ষে, অপশাসনের বিরুদ্ধে।


নয় মাস যুদ্ধের পর গগণ হলো হালকা।
ঘোষণা হলো এখন থেকে এটি স্বাধীন বাংলা।
হারিয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু, চার বছর পরই।
ডুবে গেলো দেশ আবার এক প্রকার অন্ধকারেই।
এবার হাল ধরলেন মেজর জিয়া,
কিন্তু হায়, দেশ গঠনের আগে তিনিও উড়িয়া।
তারপর ক্ষমতায় জেনারেল এরশাদ,
নয় বছর দেশকে দিলেন স্বৈরাচারের স্বাদ।


’৯১-এ ফিরে এলো পুরনো গণতন্ত্র,
ধারা একই থাকলেও, রয়েছি আমরা এখনো ভ্রান্ত।
অমর কাহিনী শুনেই যাচ্ছি, আরো শুনতে মন চায়।
ভাবতেই অবাক লাগে, এই মাটিতেই ছিলো এতো চড়াই উৎরাই।


পরের সপ্তাহে হলো শুরু একই ক্লাস আবার,
টপিক - বাংলাদেশের সমস্যা এবং সমাধান তার।
ছোট্ট এই দেশে নেই সমস্যার অভাব,
সমাধানও খুবই সহজ, যদি বদলাই পুরনো স্বভাব।
রাজনীতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর যোগাযোগ ব্যবস্থা;
ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে, এই অবস্থা।
রাজধানী ঢাকায় আছে-
ট্রাফিক জ্যাম, দূষণ, জলাবদ্ধতা আরো সমস্যা যতো,
দারিদ্রতা, ঘনবসতি, অসচেতনতা, কোনটিই কম নয়তো।


বাড়িয়ে সবক্ষেত্রে গণসচেতনতা, গড়তে হবে দেশকে;
ভালোবেসে পূর্ণ করতে হবে স্বপ্নের সোনার বাংলাকে।


এখানেই ইতি টানলাম আমি, শেষ করলাম সিলেবাস।
আশা আমার- শিক্ষা সাধনা, তোমাদের কল্পনায় করবে বাস।


কথা দিলাম আমরাও, সবাই মিলে গড়বো এ দেশ।
স্বপ্ন এবার হবে সত্যি, গঠিত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।