বিদায়ের সুর ঘনিয়ে এলে, সন্ধ্যা নামে ধীরে
কৃষক তড়িঘড়ি ফেরে, তাদের ঘরে ।
সারাদিনের কর্মক্লান্ত  পরিশ্রমের তরে
আঁধার রাত নীদ দিয়ে তাদের বরণ করে ।
পিছনে ফেলে আসা সহস্র ঝরা পাতা
এক-এক করে দৃশ্যমান দৃশ্যপট সৃষ্টি করে
দিগন্তে মিলে যায় কতো ছন্দ- ভাবানুরাগ
ঝড়ে ওলট -পালট  হয় কতো যোগ বিয়োগ
তবুও আশার সঞ্চার বুকে নিয়ে, মানুষ মাঠে নামে ।
বাতাস কখনো মোড় ঘুরায় নিকটবর্তী আঙিনায়
আর হাজারো স্মৃতিকথার সমষ্টি ঘটায় ।
কখনো ঝিঁঝিঁ ডাকে একা, নিয়ে তার অবসর
ঘণ্টা ফুরালে সেও হারায় শব্দ বেতার ।


খেলায় খেলায় কাটে হাজারো অবেলা
কতো ঘণ্টা আর কতো মুহূর্ত,
মিনার সুর কানে বাজলেও
সাড়া না দেয়ার সময় হয় গত ।
এক সময় –অচেনা পাখির আগমন টিনের চালে
দলপিপি পানকৌড়ি ঈগল যেকোনো একটি হতে পারে
মাঝে মাঝে মনে হয়,
এদের বাস কেনো এই মোহনায় ?
যাতনায় রাখে আমায়, আমারই আঙ্গিনায় ।
কতো বৃক্ষ কতো  তরু, রয়েছে তার বরাবর
বৃহৎ ভবে তাদের নিবাস  কেনো আমার  ওপর ?


ঘাস জন্মানো মাটির নীচে
এক সময় হয় স্থান,
প্রতিটি দাম্ভিক প্রতিটি সহৃদয়
করে এখানেই অবস্থান ।
নতুন ভোর নতুন দিন ঠিকই উদয়মান
বাতাসের ঘ্রাণটাও তাজা অফুরান
কার্নিশের কোলে চড়ুইয়ের কোলাহল
পুরনো সব জীবন্ত হলেও, নেই মহাজন।
রাখাল রোজ করে গাভীর যত্ন নেয়
চাষার চাষাবাদও একদম ফুরফুরে
মোরগের ডাক, হাঁসের নিয়মিত ফেরা
প্রতিটি ঘটনা এখনো চলছে নিয়ম করে ।
কিন্তু, যে শুয়ে আছে সমাধিতে
হবেনা ফেরা, হবেনা পূর্ণ তার  অধরা স্বপ্ন
পৃথিবীর ঘূর্ণন কোটি বার ফেরুলেও
মরীচিকা ন্যায় তার দুনিয়া মঞ্চ ।


শিশুবেলায় দৌড়ে যেয়ে মায়ের কোলে
জড়াত নিজেকে চুমুর আদরে
বাবার চোখকে বারবার ফাঁকি দিয়ে
পার হয়েছে জীবন, ভাটা জোয়ারে
আর কোনদিন জুটবেনা কপালে তার
ব্যস্ত গৃহিণী মায়ের চুলার আহার
সর্বদা কড়া ভাষায় বাবার স্নেহমুখর শাসন
দামি পালং আর চিরচেনা আসন ।
হাঁটুবেয়ে  উঠা হবেনা সিংহাসনের উপর
কুর্নিশ আর বাহবায় থাকবেনা শাসন ভার
ঘোড়ায় চড়ে ঘুরা হবেনা রাজ থেকে রাজ্য
রাজত্বের বাহাদুরি হবেনা আর গ্রাহ্য ।
অত্যাচার আর পীড়নে দিন কাটিত যত
উচ্চাভিলাষী হয়ে অন্যকে ঠকানোও হতো
লোকের উপর নিজ কর্তৃত্ব প্রভাব
প্রতিষ্ঠাই ছিলো অন্যায় স্বভাব ।
বংশের বড়াই আর ক্ষমতার দাপট
যাবতীয় সুখ আর সম্পদের বিলাস,
নিঃশেষ হয় এক এক করে এমন ভাব
নিশ্চিত এটাই সমাধিই মানবের চির নিবাস।
যতই থাকুক রুপ সৌন্দর্য অহংকার
ভেঙ্গে চুরমার হয় বিলাসিতা সকল,
মহাবিলাসিতা আর অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ি
নিমিষেই তছনছ হয় বাহাদুরি নকল ।
সবুজ ঘাসের নীচে যখন প্রস্থান
কোথায় বাহাদুরি আর উঁচু গর্দান ?
এভাবেই একদিন, সবকিছু হয় বিলীন
থেকে যায় শুধু কৃতকর্ম
দাম্ভিকের গর্দান নিচু হয়ে
উঁচুতে আরোহণ করে মানবধর্ম ।
কতনা জহরত রয়েছে ছড়িয়ে
গভীর আঁধার সমুদ্র তলে
কতো ফুল ফোটে অগণন
খোঁজ নেই তার, আছে বনতলে ।
অকালে হারিয়ে যায় শোভা সকল
দুর্লভ কোহিনূরের মতন,
দুঃসাহসী নাবিকরাও একসময়
ছেঁড়ে দেয় দুর্দান্ত জলযান ।
ক্ষমতার লোভে, ভীষণ বিক্ষোভে
যে করেনি রক্তপাত
মুচকি হাসিতে, সুমধুর বাচ্যে
বাড়িয়ে দিয়েছে হাত।
নিলাজ হাসিতে, মুখ ঢাকতে হয়নি কভু তার
স্বাক্ষর রেখে গেছে , কল্যাণে  মানবতার।
কভু ভজেনি সে সম্পদ বিলাসিতায়
দেখাতে হয়নি বুক উঁচিয়ে সম্মানের দাপট
উন্মত্ত জনতার লিপ্সা অপার,
ছিলো তার থেকে দূর পারাপার ।
হতে হয়নি কভু পলাতক, অপরাধের তরে
তার সময় ব্যায়, সৃষ্টির তরে, মানবতার তরে
হয়তো সে পাবেনা সমাধিতে তার
ফুলেল শ্রদ্ধা আর সম্মান বিচার,
এমন ব্যাক্তির তরে শ্রদ্ধা অগণিত
মানবের মনে, এই তার পুরস্কার ।
এটি কোন গল্প নয়, নয় কোন কবিতা
এটি তাই – যা মহাবিশ্বের মহা বাস্তবতা ।


অহংকারী কেউ পরোপকারী অন্যজন
একই জমিনের ভিতর দুই এরই ঠাই
ইতিহাসে একজন অসাধু লোক
অন্যজন উৎকৃষ্ট উপাধি পায় ।
যত অভাজন ভাবিছ এখন
জীবন আঁকবে কবিতায়
তাদের তরে বলি আমি, সুন্দর পথে
তোমার অস্তিত্ব করো ব্যয় ।
বিষণ্ণ তুমি, যেন কত অসহায়
বিস্তীর্ণ পাড়ে নেই তোমার সুখ
স্রষ্টার পানে হাত তুলে বলো
দয়ার সাগর- দূর করো আমার দুখ ।
হয়তো বা কোন ভাবুক রসিক
কোন স্থান নির্জন নিরালায়
অর্থ ছাড়া জীবন করছো পার,
প্রায়ই দিনে, প্রতিটি প্রভাতে
কোন এক বৃক্ষ ছায়ায়
সময় মূল্যহীন, করছো মিথ্যাচার ।
কাশফুল দোল খায় বাতাসের ছোঁয়ায়
মানব মন প্রশান্তি পায় মানব সেবায়,
হিংসা- হতাশা লোপ পাবে একদিন
মেঘের শেষে, দিন হবেই রঙিন ।
সর্বোপরি জীবন গড়ি
মানব কল্যাণে রেখে স্বাক্ষর ,
বিদ্বেষী- অসহনশীল না হয়ে
বিশ্বের বুকে হই অমর ।