ক্লান্ত শরীর পেটে ক্ষুধা, দুই পা আর চলে না
পিছনে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ, সামনে অনিশ্চিত যাত্রা
ডানে বাঁয়ে লাশ আর লাশ।
এখনো তাজা রক্তের ঘ্রাণ বাতাসে ভাসছে
নাকে রক্তের বিশ্রী গন্ধ আসছে ।
এরই মাঝে চলছে বিরামহীন পথচলা।
কাঁধে ছয় বছরের সন্তান, কোলে দু বছরের
ক্লান্ত এক হাতে জড়িয়ে কোলের শিশুকে
অন্য হাতে পরম স্পর্শে কাঁধের শিশুটি ।
এভাবে চলছে সামনের পথে এগিয়ে চলা।


ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, গ্রামের পর গ্রাম,
জ্বলছে একটু দূরে দূরে,
ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে চূর্ণ বিচূর্ণ সব
ছাই হয়ে নির্মম খেলা করে ।
সমস্ত কিছু ছেড়ে এখন শুধু প্রাণ নিয়ে হাঁটা ।
কিন্তু পা যেন আর চলে না ।
এক সপ্তাহের বিরামহীন যাত্রায়
এখন খুব কাছাকাছি সীমান্তের,
আর একটু, এইতো সামনেই নদীগর্ভ দেখা যাচ্ছে ।
ওপারে যেতে পারলেই এইবারের মত প্রাণ রক্ষা।
কিন্তু পা তো আর চলে না।
তবুও শেষ প্রচেষ্টা… …
যাত্রা পথের সঙ্গী প্রায় সবারই এমন দশা
এখানের কেউ নিজের সন্তানের
কাটা মাথা ডিঙিয়ে এই পথে ভিড়েছে ।
কেউ বা আবার মা বাবা ভাই বোন সবার
খণ্ড বিখণ্ড দেহের পাশ থেকে উঠে এসেছে ।
একসময় ভগ্ন দেহ হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো ।


হঠাৎ যাত্রাটি ছত্রভঙ্গ, দিক বিদিক ছুটাছুটি ।
কোন একটি দিক থেকে বুটের শব্দ শোনা যাচ্ছে
কিছু বুঝে উঠার আগেই,
বন্দুকের নল শিশু দুটির মাথায় তাক করলো সেনারা ।
মুহুর্তেই ছন্দ পতন।
দুটি শব্দ, আর দুটি নিষ্পাপ প্রাণের অবসান ।
হাঁটার শক্তি নেই, পালানোর বৃথা চেষ্টা নেই,
ভ্রান্ত মন আরেকটি শব্দের অপেক্ষায় ।
এই বুঝি গুলি করবে সেনারা। কিন্তু না !!!
সেনারা হাসছে, নিষ্পাপ দুটি প্রাণের তাজা রক্তে,
তাদের জিহ্বায় নতুন স্বাদ জন্মেছে ।
এইবার অন্যরকম তৃপ্তি চাই তাদের ।
তাইতো একটি ধারালো তলোয়ার দিয়ে প্রথমে-
ক্লান্ত পা থেকে আঙ্গুল আলাদা করা হলো
ধীরে ধীরে থেকে উপরের দিকে তারা অগ্রসর হচ্ছে,
একে একে, গোঁড়ালি, হাটু, ঊরু ।
সাময়িক বিরতি ।
বিরতিতে সেনাদের বীজয়ের হাসি ।
তাদের হাসিতে শকুনের ছায়া ।
এই বুঝি তাজা রক্ত ও নরমাংস উল্লাস করে খাবে ।


প্রাণ যাচ্ছে যাচ্ছে বলেও যাচ্ছেনা ।
আরো কিছু হয়তো দেখতে চায় এই প্রাণ ।
একটু কাছেই আরো শতাধিক লাশ।
গাছের উপর মাথা ছাড়া ঝুলন্ত লাশ ।
ধর্ষণের পর নারী, কুচি কুচি করে কাটার পর পুরুষের
ক্ষত বিক্ষত লাশ। অঙ্গ ছাড়া বিকৃত লাশ পথে পথে ।
না, আর সওয়া যাচ্ছেনা ।
এই চোখ দিয়ে আর দেখা সম্ভব না ।
এইবার যদি প্রাণটা যায় তাহলেই বাঁচা ।


কয়েক মুহূর্ত পর শুরু আবার কাটাকাটি ,
এইবার হাত থেকে শুরু, আঙুল কব্জি কনুই বাহু …
বুকে পিঠে আরো অনেক গুলো কোপের দাগ
চূড়ান্ত সময় বুঝি চলেই এলো, প্রাণ পাখিটা উড়ে যাচ্ছে তাহলে।
মাথাটাও অবশেষে বিচ্ছিন্ন শরীর থেকে ।
সেনার চোখে মুখে বিজয়ীর হাসি।
এই হাসি এইবার ঠোঁটে দৃশ্যমান, সে যে বিজয়ী তার প্রতীক হয়ে ।
কারণ তার প্রতিপক্ষ কোন মানুষ ছিলোনা ।
যে ছিল সে মুসলিম রোহিঙ্গা ।