ফজরের আযান কানে এলো মোর
শয্যা থেকে উঠিনি আমি
কারন তখনও কাটেনি ঘুমের ঘোর ।
বিহান ছয়টা, কিংবা তার থেকে একটু বেশি
পূব আসমানে রবি হয়ত দিলো উঁকি
ওঠার পরতাল করছি না
বিন্দুমাত্রও নিচ্ছিনা কোন ঝুঁকি ।
ক্ষণিক পর পর দরজায় নক, ভেসে আসলো মায়ের ডাক
কিরে ওঠ, লগ্ন বয়ে যায়, পড়ে আছে কত কাজ
উত্তর দিলাম আমি, রোজ রোজ ভাল লাগেনা আর
বন্ধ করো ঠক ঠক, আর এই কর্কশ আওয়াজ ।  
আমার প্রতিভাসে মায়ের প্রতিক্রিয়া ছিলনা মোটেই
শুধু বলল, আমার কথা শুনে বিরক্ত বুঝি তুই এতই ।
আবার দিলো মা দরজায় ঠোকা, বলল খোকা ওরে
আমার কথার দিচ্ছিস না কোন দাম
ওঠে দেখ, এই সময়ের মধ্যেই কতজন
নিজের জন্যই ঝরিয়েছে কত ঘাম ।
ক্রোধিত আমি, বের হয়ে গেলাম ঘর থেকে
শুনে মায়ের উপদেশ মূলক কথা
নিশ্চয় মা পেয়েছে আমার আচরণে
মনে বিরাট কষ্ট, যা তার হৃদয়ে রইল গাঁথা ।
পিছন থেকে ডাকছে মা, কর্ণপাত করিনি তাতে
দ্রুত করিলাম প্রস্থান  আরও পীড়া পায় যাতে ।
আড্ডায় মাতলাম বন্ধুদের সাথে, সেই থেকে দুপুর পর্যন্ত
সিদ্ধান্ত নিলাম ফিরবোনা আর ঘরে, যাবো যত্রতত্র ।
মধ্যদুপুর পেরিয়ে তখন ভানুটা পশ্চিমের অভিযাত্রী
মনের ছোটখাটো ভ্রান্ত জল্পনা কল্পনা আমার সহযাত্রী ।
খিদাও লেগেছে প্রচুর, খাবোনা ইচ্ছে করেই
মান অভিমান রাগ এর কেন্দ্রবিন্দু এখন নিজ মাতাকে ঘিরেই  
ভাবছি আমি, অযথাই মা আমাকে দিয়েছিলো বকা
তাইতো এখন জেদ ধরে পথে হাঁটছি একা একা ।
গোধূলি বিকেলে হাঁটার সময়, যাবো কোনদিকে ভাবছি তা
ত্বরিত সামনে পড়ল এক বন্ধু, বলিল তোকে খুঁজছে তোর মা
প্রশ্ন করলাম তাকে আমি, পেলি কোথায় খবরটা
বলল সে, পাশ দিয়ে আসছিলাম দেখলাম তার অবস্থা ।
আচ্ছা বলে তাকে ছাড়লাম
মন গললো না তাতে আমার
ভাবলাম তখনই, এগুলো সবই হচ্ছে
লোক দেখানোর কারবার ।
যেতে যেতে উপনীত হলাম ঝিলের ধারে
তৎক্ষণাৎ প্রারম্ভ হল উপর থেকে বর্ষণ
চোখে পড়ল সামনের একটি মসজিদ
ছুট দিয়ে তাতেই করলাম পদার্পণ ।
মুশলধারে নামছে বাদল দেখছি বসে বসে
নামাজ পড়ছে কত মুসল্লি এই বৃষ্টিতেও এসে ।
কেউ কেউ এসে জিজ্ঞেস করছে আমায়
উষ্কখুষ্ক চুলে ধূলা বালি মিশ্রিত পোষাকে
কে ভাই তুমি, কিই বা তোমার পরিচয় ?
বললাম আমি পথ হারা পথিক আমি
রাত পোহালে যাবো নিজ গৃহে
আর কিছু কি জানার আপনাদের শখ হয় ?  
একে একে নামাজিরা সবাই ফিরছে তাদের ঘরে
অপরূপ দৃশ্য দেখছি আমি এই ঝড় রাত্তিরে ।
থেমে থেমে আবার শুরু হয় বর্ষণ
যেন এটাই বর্ষার চিরচেনা খেলা
প্রকৃতির অদ্ভুত প্রণালীই এটা
নিজ বিধান মানতে তার নেই কোন অবহেলা ।
আজব অদ্ভুত চিন্তার মাঝখানে ক্লান্ত শরীরে আমার
নিদ্রা দিলো তখন উঁকি
রাতও অনেক গড়িয়েছে, যাওয়ারও নেই কোন পথ
ভাবলাম তাই শয়নের দিকে দেই ঝুকি ।
আচমকা একটি কণ্ঠ শুনে ঘুম ভাঙিল আমার
দেখলাম বাতি হাতে দাঁড়িয়ে মা, বললেন ঘরে তো ফির এবার ।
বিস্মিত আমি এজন্যই যে, এত রাতে কি করে পেল মা আমার খবর
পরক্ষনেই জানলাম, সকাল থেকেই মা খুঁজেছেন আমায় হয়ে যাযাবর ।
ক্রন্দনরত আমি মাকে বললাম, মার্জনা করো আমায় করেছি অপরাধ
অশ্রু মুছে মা বলিল, সন্তানের জন্য মায়ের নেই কোন বাদ প্রতিবাদ ।
ভাবছিলাম তখন আমি এত কিছুর পরও কমলো না মায়ের
তিল পরিমাণ সমান ভালবাসা
অস্বীকার করতে কখনোই পারব না, মা আমার জান্নাত
আর মহান রবের পরে মা ই একমাত্র ভরসা ।