স্বপ্নের বিদেশ
বেগম সেলিনা খাতুন


আমরা দুটি ভাই বোন,একটি শাখার দুইটি ফুল,
মা বাবা আমার বেহেশত খানা ছিলনা তাতে ভুল
হাসি দেখিতে চেয়েছিলাম মা বাবার মলিন মুখটি
আনন্দে ঘুরে বেড়াবে পরির মতো বোনটি।


সেই আসায় পাড়ি দিলাম বিদেশ বিভূয়ে,
দিন যায় রাত আসে বছর আসে ঘুরে,
কাজের নাই কোন সন্ধান থাকি অনাহারে,
চাকরি খুজতে খুজতে ১২টি বছর গেল চলে।


পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থাকি গহিন ঝোপঝারে,
পেটে দেই পাথর চাঁপা খুদা নিবারণে।
চাকরির সন্ধানে ঘুড়ি কত দ্বারে দ্বারে,
অফিস, হোটেল,রেস্তোরা বাকি রাখিনি জেলে পাড়া।
পেলাম না কাজের সন্ধান,দিলনা চাকরি ধরা।


মায়ের মুখের হাসি কত দিন দেখিনা
বোনের সব বায়না গুলি,কতদিন শুনিনা
আকাশের ঐ তাঁরা হয়ে আছে বাবা
বলছে আমায় তুই করবি,মা বোনের সেবা।

বুকের মধ্যে হাহাকার, নিভু নিভু জ্বলে আলো,
আর কতদিন এই পৃথিবীর দু:খ কষ্ট সইবো
রাত পোহালে লুকিয়ে থাকি নির্জন কুটিরে
পেটের খুদার অন্য যোগাই গভীর অন্ধকারে।


ছোট্ট সেই বোনটি কেমন করে হয়েছে বড়ো?
আদর সোহাগ পারিনি দিতে হৃদয় গুড়ো গুড়ো।
মুখটি তোর ভেসে উঠে অশ্রুতে বুক ভাসে,
হাতটি তোর মাথায় বুলাতে পারিনি কলিজা যে  ফাঁটে।


পরানের গহীনে তোরে রেখেছি যতনে,
বন্ধী হয়ে আছি আমি বিদেশের কারাগারে,
বড় ইচ্ছে করে পাখির মতো উড়ে আসি মোদের প্রাসাদে,  
আর কটাদিন সবুর করো আসবো আমি ফিরে ।


মনে পড়ে না,কতদিন খাইনি যে ভালো খানা
তোদের সঙ্গে নিয়ে খাবো,সঞ্চয় করেছি আনা আনা,
পেতাম যদি যাদুর বাক্স,দুর করিতাম মা বোনের কষ্ট
মাগো!ঘুম পাড়াতে রোজ রাতে দিয়েছো নয়ন চুমো
আকুতি করি মাগো!
শিউলি ফুলে মোর সমাধি নিজ হাতে ঢেকো।


আকাশের চাঁদ খানা ধরতে যেয়ে হারিয়েছি কতো কিছু  
আলাদিনের চেরাগ খুঁজতে যেয়ে হাটলাম মরনের পিছু পিছু
জীবনের সন্ধ্যা নামলো গোপনে, বিদায় দিলো পৃথিবী নিরবে
তারা হয়ে গেছি আমি গভীর রাতের নীল আকাশে মিশে।