বিরহের বেদনায় কাতর হয়ে এক যুবক এসেছিল আমার কাছে; জীবন তার ভাল লাগেনা।
আমি তাকে একটা প্রেমিকের গল্প শোনালাম -


‘সে নিমিষেই ভালবেসে ফেলে সেই বৃষ্টির মতো, দীর্ঘ খরার পর এক ঝুম বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা কৃষকের মতো; ভালবাসে সমুদ্রে হারানো ডিঙার সেই একমাত্র বেঁচে থাকা জেলের বাঁচার আকাঙ্ক্ষার মতো, যে এইমাত্র শুনল ঐ উদ্ধারজাহাজের ভেঁপু; ভালবাসে পথহারা নাবিকের পুব আকাশের তারার মতো, যে তারাই তারে দেখাবে সেই সোনালি তীরের পথ।


সে বৃষ্টি মাটিকে স্পর্শ করার আগেই থেমে গিয়েছিল,
সে জাহাজ জেলেকে না নিয়েই ফিরে চলে গিয়েছিল,
পুব আকাশের তারা পথ চেনার পূর্বেই খসে পড়েছিল;
পুবের আকাশে তখন কেবলই আঁধার।


তারপর হতাশ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে, ঈশ্বরকে প্রশ্ন করতে গিয়েও সে করেনি, কাঁদতে গিয়েও গিয়েছে থেমে, রাগে-অভিমানে থমকে গেছে গোরস্তানের স্তব্ধতার মতো! তখন সেই ছলনার বৃষ্টি, জীবনকে তাচ্ছিল্যকারী সেই জাহাজ, বিশ্বাসঘাতক সেই তারার বেদনা, অসীম একাকীত্বের মৃত্যুময় হতাশায়ও সে নেয়নি আত্মহননের পথ। অথচ ওরাই যে ছিল তার সর্বস্ব অপেক্ষা, বেঁচে থাকার আশ্বাসের অন্তিম ভালবাসা!!!’


হে বালক, আমি বেঁচে থাকতে জানি, তাই আমিই মরতেও জানি। মরুতে হারিয়েছি বলে দাসত্ব দেবার শর্তে যে আমায় পানি দেয়, আমি তা গ্রহণ করিনা কারণ এমনকি এই মৃত্যুই আমার স্বাধীনতা!


কেবল কিছু মুহূর্তই লাগবে আমার ভুলে যেতে সব; যেখানে কোন ঘৃণাই থাকবেনা। কেননা, আমি মরীচিকার জন্য বিলাপ করিনা। ভুলে যাব তাই বৃষ্টিকে নিমিষেই, ভুলে যাব জাহাজের করুণ ভেঁপু, ভুলে যাব অবিশ্বাসী সব খসে পড়া তারাদের। কেবল কিছু মুহূর্তই লাগবে আমার ভুলে যেতে সব, এতই তুচ্ছ যে ঘৃণাও নিষ্প্রয়োজন!
আমি বেঁচে থাকতে জানি, তাই আমিই মরতেও জানি। এমনকি মৃত্যুই আমার স্বাধীনতা!


আমিই সেই কৃষক, জেলে, নাবিক দাড়িয়ে আছি হে বালক তোমার সম্মুখে। আমার প্রেমিকা আমার খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে। মরীচিকার ঘাতকতায় তুমি ঝিলের সপ্ন ভুলনা যেন, নয়তো একদিন ঝিলকেই মরীচিকা ভেবে তুমি হারাবে জীবনের পিপাসা...


প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা সেই যুবক তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি বেঁচে থাকতে জানি, তাই আমিই মরতেও জানি”।


আমি তারে বললাম, বেঁচে থাকো। একটা মৃদু হাসি ফুটল তার ঠোঁটের কোণে, চোখের কোটরে, আমি তাতে দেখেছি অনন্ত প্রেম, দেখেছি স্বপ্ন, এমনকি দেখেছি আমার বেঁচে থাকার উপজীবিকা!