হোচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম ছোটবেলায় একদিন,
পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখটা উঠে গিয়েছিল,
কি কান্নাটা না কেঁদেছিলাম আমি তখন।


যখন আমাকে কেউ দেখতে এলো, আদর করে বলল,
এ তেমন কিছু হয়নি, শুনে কান্নার তেজটা বাড়িয়ে দিতাম,
মনে পড়ে গেল ছোটপিসিমা এসেছিল দুদিন পরে,
বলেছিল; মনি, ব্যথা লাগছে, যেইনা হাত দিয়েছে পায়ে,
আমার কান্নার তেজটা ছিল ঠিক জাহাজের সিটির মত,
অনেকে আমার কান্না শুনে হেসেছিল। আমি বন্ধ করিনি তখন ও,
কান্নাটা থেমেছিল আমার, মায়ের স্নেহের চুমুতে, মায়ের আদরে।
অশ্রুভেজা চোখশুদ্ধ মুখটা টেনে নিয়েছিল বুকে।


মনে পড়ে, একদিন দাদার সাইকেলে পা ঢুকে গিয়েছিল আমার,
দাদা তো পিটুনি খেয়েছিল বাবার, দেখেছিলাম মা'র কি চিত্কার চেঁচামিচি ,
দৌড়ে এলো সাইকেলের কাছে, কোলে নিয়ে কতনা আদর দিলে আমায়,
দাদাতো সাইকেল ফেলে মামার বাড়িতে, দিব্বি কাঁচা আমের সাথে
লঙ্কা আর সর্ষে বাটার আঁচার খাচ্ছে ছোট মাসি আর মামার সাথে।


আমায় নিয়ে পড়ল মা দুদিন, পা টা ফুলে গিয়েছিল,
জলপট্টি আর হ্যারিকেনের মাথায় কাপড় রেখে সেঁক দিয়েছিল রাতভর,
বাবা কাজ থেকে ফিরে মাকে খবর দেয় - দাদা আছে মামার বাড়িতে।
মায়ের এলো মুখে হাসি, আমার তখন রাগ হয়েছিল মায়ের উপর,
দাদার খবরে মা কেন হেসেছিল, দিদি তো দাদাকে সমানে বকে যাচ্ছিল,
এমন করে সাইকেল কেউ চালায় ! আসুক ও,
ওর পা টা একবার এমনি করে সাইকেলে ঢুকিয়ে দেব !
দিদির কথায় আমার কি আনন্দ হলো, কান্না থামিয়ে হাসতে হলো।
মা তখন দিদিকে বকেছিল। বুঝেছি, ওসব চালাকি ছিল,
আমার কান্নাটা বন্ধ করারই ওটা এক কায়দা ছিল।


আজ আমার দেবু'র পা টা সুমি'র সাইকেলে আটকা পড়ে,
আমি বসে রয়েছি আমার ছেলেকে কোলে করে।
প্রায় তিরিশ বছর আগেকার সব চোখের সামনে ভেসে এলো।
চোখটা জলে ভরে গেল।  সুমি আর দেবু আমার হাতটা চেপে বললো -
এ আর এমন কি,  মা তুমি কাঁদছ কেন ?
মা আজ নেই -  মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।


**
আমার স্নেহের বোন্ শ্রীমতী কনকলতা’র শুভ জন্মদিনে এই কবিতাটি উত্সর্গ করছি। ছোটবেলায় একদিন আমার সাইকেল দুর্ঘটনায় সে আঘাত পেয়েছিল। ঘটনার পুনরাবৃত্তি আজও, এখন ছেলেমেয়ের সে যে মা হয়েছে।