অভুক্ত রাতের পর সকাল সকাল উঠে,
বলে: মা! ও মা! মাগো, খেতে দাও না - একটা রুটি,
বড্ড খিদে পেয়েছে আমার, কাল থেকে কিছু খাইনি।
বুলা, মুনা, টুনা -  সবাইতো রাতে  খেয়েছে, শুধু আমি পাইনি,
আমাকে ডাকলে না কেন মা,  কাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি।
মা বলল; তোর্ বাবা গেছে দোকানে, ঘরেতো কাল থেকে কিছু নেই,
গতকাল গিয়েছিল, দোকানী ধার দেয় নি,
জ্বরে তোর্ বাবা যে সাতদিন রিক্সা চালায় নি।


বছর পাঁচেক হলো পাটকলগুলি বন্ধ ধর্মঘটে,
দখলের জোর দেখাতে মরেছে, এক গুন্ডা পরশুদিন,
তাই নি:শব্দ রাজপথ আজ, নেই কোনো লোকজন, একেবারে শুনশান,
মানুষের খরা-ঝান্ডায় ভরা, রাস্তায় শুধু গর্জায় পাড়ার মস্তান।
দুদিন বন্ধের পর - দোকানের গোড়ায় হয়েছিল কৌতুহলী ভীড়,
অনেকের ঘরে রেশন নেই, লালনীল্ অপরূপ লাইনে কতক নিশ্চুপ শরীর।  
ফিসফাস শুনি - সকালে খুলেছিল, তাই ফাটিয়ে দিয়েছে মাথা দোকানীর।


মা বলেছিল: ম্যানেজার ছিল তোর্ বাবা - বেতন পেত ভালো,
চাঁদের হাট বসত ঘরে - সংসার ছিল কত সুন্দর বেশ গোছালো।
কাজ ও গেছে, বাড়িও গেছে, সাথে গেছে তোদের সুন্দর স্কুল জীবন,
এখন -শক্ত করেছি মন, প্রতিদিন করি কত পণ - মেটাবো খিদের জ্বালা,
কত চেষ্টা করি, প্রতিদিন তিনবার মরি - করেছি প্রশ্ন,
হে ভগবান !  কেন দিতে পারিনি পেটে তালা ?
  
এত কথা শোনার না আছে শক্তি, ছেলের নষ্ট সকল ভক্তি,
দেখতে হাঁড়িতে - ছুটে চলে সে, মা কি লুকিয়ে রেখেছে কিছু।
না আছে ভাতের ফেনা, না পেল রুটির কনা, ফিরে এলো দুঃখী মনে,
জানেনা সে, মা'র পেটে পড়েনি কিছু - গত তিনদিনে।
এক কিলো আটা, দুদিন ধরে খেয়েছিল রুটি,
বাবা আর তারা চারজন - যেটা এনেছিল মা, বেচে সব ঘটি বাটি।
তিনদিন ধরে -  মা দেয়নি মুখে, জানে না কেউ এই সংসারে,
ছেলে এখনও হয় নি যুবক, এসব বোঝাবে কি করে !
খিদের জ্বালা কত কষ্টের - বোঝার যে তার সময় হয় নি।
অবোধ সে কিশোর মন, বোঝেনা কোনো কারণ, যা সবাই জানে,
মুখভার তার, প্রশ্ন করে মাকে  - জন্ম দিয়েছিলে কেন ? - কি কুক্ষণে!