দুঃখ নেবে গো - দু:খ !
আমার কাছে অনেক আছে, অনেক অনেক আছে - নেবে তুমি একটা দুঃখ !
এই যে দাদা-বৌদি, চাচা-চাচি, ভাই-বোনেরা,
দুঃখ নেবে ভাই - দুঃখ, অনেক - অনেক রকমের আছে দুঃখ।
আট আনার আছে, বারো আনার আছে,
এক টাকার ও আছে - দু-টাকা আর
তিন টাকার মস্ত ভালো দুঃখ আছে, খুব ভালো ভালো দুঃখ!
কোন লোকসান নেই, তাই বলি - দুঃখ নেবে কি ভাইয়েরা দুঃখ,
এবেলা না নিলে ওবেলা খাবো কি? - আমারি থেকে যাবে সব দুঃখ।


দেখো ভাই দেখো - কি সুন্দর ! চকচকে দুঃখ!
একেবারে করকরে, ঝকঝকে প্যাকেটে ভরা,
দেখে মন জুড়িয়ে যায়, হরেক রকম দুঃখ।
চারটা নিলে একটা ফ্রিতে ও পাওয়া যায়,
এ সুযোগ ছাড়লে - পাবে না সহজে, এমন দুঃখ!
তাই বলি বাড়িতে নিয়ে যান, এক একটি অসাধারণ নতুন দুঃখ।


ছোট ছেলেটির মা মারা গেছে, কেউ খেতে দেয় না,
খাওয়ার চাইলে লোকে তারে গালি দেয়,
তাই এর দাম রেখেছি একেবারে কম, মাত্র আট আনা -
কারণ লোকতো তারে কিছু দেয়, মুফত-মুফত গালি দেয়।


বাচ্চামেয়েটি সেদিন পর্যন্ত ভিক্ষা করত,
বাবু নিয়ে গেল দয়া করে - বাড়িতে কাজের জন্য,
গ্যাটলা বাঁধা চুলের মুঠি ধরে গিন্নি ভীষণ মারে
আর দিনরাত খাটায়, বদলে দুটো পোড়ারুটি পায় ।
গিন্নির আদরের ছেলে রনি - লাথির সাথে, করে চুল টানাটানি,
রনির মামা একটা দামা - মেয়েটির মুখে ঘষে ঝামা -
যদি লেট করে দেয় চা।  ভেবেছি দাদা - এই দুঃখটা, একটু সস্তায় দেই না!
এটার দাম রেখেছি আজকের জন্য, শুধুমাত্র বারো আনা!


বাবা করেছে উপার্জন - ঘর বাড়ি বানিয়েছে,
ছেলেমেয়ে পড়িয়েছে - বড় হয়ে তারা সব রোজগেরে হয়েছে,
সবার বউ সুন্দরী, বিরাট বাড়িতে চকচকে নাতিপুতিরা খেলছে।
বাধ সেধেছে বুড়োর রোগ - বুড়ি মরে, দিয়ে গেছে খুক-খুক কাশি,
বৌয়েরা বলে - বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাও বুড়াকে, একশ টাকা হাতে ধরিয়ে -
নইলে তোমাদের ঘরদোর থাক - আমরা চলি বৃন্দাবন, গয়া-কাশী।
দু-টাকার বদলে নেব আজ মাত্র - এক টাকা,
কেন জানো - একশ টাকার পকেটমার তারে দিয়েছে এক ধাক্কা,
বুড়োর উপরে গাড়ির চাকা - সোজা উপরে, একদম অক্কা!
আহারে - সোজা গেল উপরে, বেচারা ! আত্মীয়-স্বজনহারা বেচারা !!


আর একটা রয়েছে আমার ঝাঁপিতে,
ওটা যে নেবে, তাকে দেব বুড়োর অকালে মরা লাশটা ফ্রিতে।
হয়েছি কি জানো, তিনদিন আগে বুড়িটা মরেছে, বাছুরের দড়িটা গলায় নিয়ে,
বেচারী জনমের সময় অন্ধ ছিল না - হলো সেদিন ছেলেকে দান দিয়ে,
এক ছেলে তার - শিক্ষিত ডাক্তার, অন্ধ হয়ে যায় এক পথ দুর্ঘটনায়,
গরিবের ছেলে - শুধু কেঁদে মরে - কি হবে তার বাকি আছে যে অনন্ত জীবন,
স্বামী হারা মা, দিনরাত কাঁদে - কি হবে উপায়, বন্ধ করে রন্ধন,
হাতে পায়ে পড়ে - শত ডাক্তার ধরে, জানিল চক্ষুদান করিলে হবে সব রক্ষা,
না ভেবে সাত, টাকা নেই পাঁচ, ছেলেকে দিল নয়নের মণি - করেনি সে অপেক্ষা ।
ছেলে বলে তার, দুঃখ ঘোচাবো তোমার, নিয়ে আসবো বিয়ে করে দাসী,
স্বর্গের সুখ পাবে তার কাছে। কিছুদিন পরে আসে সুযোগ, চলে বিলাতে,
বিয়ে সেখানে করে - মাস খানেক পরে, জানায় মাকে,
তুমি ভালো থেকো মা, না জানিয়ে করলাম বিয়ে, কিন্তু আছি এখানে খুব সুখে।
এটা শুনে হায় - লোকে অভিশাপ দেয় - যে দিয়েছে তার মাকে এত দুঃখ,
ভুললি কি করে - এই মার তরে - দেখলি যে নতুন  বিশ্ব,
গেছিস চলে দুরে - মাকে লাথি মেরে - অভাগিনী হয়েছে একেবারে নিঃস্ব।
আহা! কি করুন, মন যে তরুণ - গালাগালি দেয় তারে,
আর কি আছে বেচারির দুঃখ,
নাও তিনটাকা দিয়ে, যাও চোখ ঘসে ঘসে - এরকম পাবে না দুঃখ,
বেচে বাড়ি যাই -তাই বলি ভাই, কেউ নেবে গো দুঃখ,
আমার ঝাঁপিতে আছে অনেক অনেক দুঃখ। দুঃখ নেবে গো দুঃখ !


** এই কবিতাটি প্রিয় কবি বিভাংশু মাইতি মহোদয়কে উত্সর্গ করছি। উনার কবিতা "মা গেছে বউ খুঁজতে"  খুব ভালো লেগেছিল। প্রেরণা যুগিয়েছে হৃদয়স্পর্শী কবিতাটি ।