হাতে আমার সময় নেই চলে যায় গবেষণা করে -
এগোচ্ছে আমার গবেষণা বেশ তরতর করে।
কয়েক রকমের ওষুধ আবিষ্কার করতে হবে,
মূল্য যৎসামান্য হবে কিন্তু কার্যগুণ অসামান্য রবে।
একবার খেলেই মানুষের শরীরে রোগ যন্ত্রণা খালাস,
খিদের জ্বালা মিটে যাবে চিরতরে, বলবে লোকে সাবাস।
খুব কঠিন আবিষ্কার যদিও, তবু চেষ্টা আমাকে করতেই হবে,
যাতে গরিব মানুষগুলো বাঁচে, সেটা মাথায় রাখতে হবে।
এই সুন্দর পৃথিবী, সূর্যোদয় আর রক্তিম সূর্যাস্ত,
চারিদিকে কত ফুল-পাখি, গাছগাছালি, দেখতে লাগে মস্ত।
খিদে আর রোগভোগের শত্রুতায়, মুখ সবারই শুকনা,
হাসি থাকবে সবসময় - আবিষ্কারের পর কেউ দু:খী রবে না।
বন্ধুকে এসব কথা শোনাতে - হাঁ করে খানিকক্ষণ তাকিয়ে দেখে,
ভাবে - গবেষণা সে আবার কি ! এক্ষুনি গিয়ে বলবে আমার মাকে।
ঢোক গিলে বলে, আমার কথাটা মাথায় রাখিস,
মাথা সারানোর ওষুধটাও আবিষ্কার করে রাখিস।
আরো বলে; পরে তোর অনেক কাজে লাগবে,
যে যা বলে বলুক লোকে, শত বাধাতেও আমার গবেষণা না পিছাবে।
আমি খেটে যাচ্ছি দিনরাত, এক দিন দেখাবো তাকে,
মগজসংক্রান্ত ওষুধ আবিষ্কার করে, দেব মালির বুদ্ধু ছেলেটাকে।
পড়াভোলার দুশ্চিন্তা থাকবে না ওর সেবন করলে একবার,
সারাদিনে একবার পড়ে, চিরকাল রাখবে ধরে, বাহ! কি চমত্কার!
গবেষণার বিষয়গুলো শোনার পর আমাদের হেডমাস্টারমশাই
শব্দ করে হুম, করে গুমা গুম, বেতটা এনে পেছনে দিল ভীষণ ধোলাই।
সেরা ছাত্র ধ্রুবজ্যোতি - অন্যদিকে তার নাই মতি,
সব বিষয়ে শত শতাংশ - কারণ সময়ের করেনা ক্ষতি।
পাত্তা কাউকে দেয়না - কারুর খবর রাখেনা,
শুধু করুনা দৃষ্টিতে দেখে আমায় - কারণ আমি যে অঙ্ক পারিনা।
বাবার চড়, মায়ের বকুনি - সঙ্গে ছোটকা দিয়েছে কানমলা,
খাতা বেরিয়েছে স্কুলে - পেয়েছি অনেক ছোটোবড় রসগোল্লা।
সবাই বলে আমায় - গাধা - এর দ্বারা কিচ্ছু হবে না,
আজ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান - ভাবলাম, বিদ্যালয়ে যাব না।
তবুও গেলাম সেখানে - দাঁড়িয়ে থাকি এক কোনে,
ধ্রুবজ্যোতি পেয়েছে অনেক পুরস্কার - আমি গর্বিত মনে মনে।
এমন সময় নাম ঘোষণা আমার - ডাকলো স্টেজে হেডমাস্টারমশাই,
চমকে উঠি - আবার কি পড়বে পিঠে, কি করে তা ঠেকাই।
পিঠ চাপড়ে উনি বলেন, তুমি ক্লাসের সব চাইতে সুভদ্র ছেলে,
খুব বড় মনের অধিকারী, সকল শিক্ষক এ কথা বলে।
শুনেছি মালির রোগাভোগা ছেলেটাকে খাওয়াও তুমি রোজ টিফিন,
বাড়ি থেকে ওষুধ নিয়ে দাও তাকে - দেখতে পারোনা তার মুখ মলিন।
এমন সুন্দর আর দরদি মনটাকে আগলে রাখতে পারলে ঠিক,
আগামীদিনে তুমি গণিত হবে দেশের সেরা নাগরিক।
তাই গুড কনডাক্টের জন্য এইটা তোমার পুরস্কার’,
এবার থেকে তোমায় কখনো করবো না তিরস্কার।
আরো বলেন তিনি - সবার আছে কোনোনা কোনো গুন,
সব মানুষের থাকে জ্যোতি - হয়না কেহ নির্গুণ।
বুকে চেপে বলেন উনি - তোর্ গবেষণা কত দূর এগোল !
গবেষনার কথা শুনে - আনন্দে আমার চোখ ছল ছল।
* এই কবিতাটি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত বিশিষ্ট লেখিকা শাশ্বতী নন্দী' মহোদয়ার "রোল নাম্বার ২৩" এর গল্প অবলম্বনে লেখা।
** প্রতিটি মানুষের কোনোনা কোনো বিশেষ গুন রয়েছে, উত্সাহ পেলে তা প্রকাশ পায়, উদ্ভাসিত হয়। অনুতসাহিত হয়ে চিরতরে বিনাশ হয়। উত্সাহে সকলের জয়।
*** এই কবিতাটি প্রিয়কবি প্রণব কুসুম দত্ত মহোদয়কে উত্সর্গ করছি।