“অষ্টাদশী রাত”- রচয়িতা কবি শ্রদ্ধেয় সুমিত্র দত্ত রায়।  


   মানুষ নেশা করে বুঁদ হয়ে থাকে নিকোটিনে। আর, আমি আছি একাকিত্বের নেশায় সারাটারাত। কথা বলার স্বাধীনতা নেই, রক্ষিত নয় সামান্যতম মৌলিক অধিকারটুকুও। এমন কি আমি শুনিনি তাদের নাম। তারা সম্পূর্ণ অপরিচিত শব্দ আমার এই অন্ধকারময় জীবনে।


     একটু একটু করে বন্দী হচ্ছি সব দিক দিয়ে। স্বাধীন মনটাকে বন্দী করার আনন্দে পরাধীনতা  উল্লসিত। আনন্দে আত্মহারা।  ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছি অতল সাগরে। সাগরের মধ্যে থাকার সুযোগ পেলেও প্রবাল মেলার কোন সুযোগ নেই। অন্তত শাঁখ পেলেও মনটা ভরতো। কিন্তু হায়...


    এত কিছুর মধ্যেও আমি কিন্তু নিরাশ হই না। যতক্ষণ শ্বাস আছে আশাও বেঁচে আছে ততক্ষণ। এত উদ্যমেও কণামাত্র আলোর দিশা পাই না গাঢ় অন্ধকারে। ভালোবাসা তো নয়ই, এতটুকুও ভালোবাসার সুঘ্রাণ মেলে না জীবনটায়। ঘুম নয়, আলস্য জড়ানো তন্দ্রা এসে চোখদুটোকে বন্ধ করে দেয়...


   হঠাৎ তন্দ্রা কেটে যায় ভৈরবী সুরের প্রভাতী গানে। হতাশার জীবন থেকে মুক্তি পাই আদর মাখানো  একচিলতে পেলব সৌরআলোয়। সুখস্মৃতি আনন্দ দেয় আমার জগতজুড়ে। বাঁধন হারা স্বাধীন মন ছুটে চলে আলোর ঠিকানায়। চেনা পরিচিত নয়, কোনো এক নাম না জানা পাখিকে খুঁজে পাই যেন!    
    
  তবু, কবিতাটির নামকরণ নিয়ে একটা দোলাচল থেকেই গেলো। কবি, “অষ্টাদশী রাত”-   নামটি রাখলেন কেন? প্রতিবেদকের ধারণা হল এই যে, আমাদের জীবনে দিন আর রাত দুটোই আসে।  আবার রাতের সব অংশ সমান নয় দিনেরও তাই। অষ্টাদশ, একটা যুগান্তকারী শব্দ আমাদের  জীবনে। প্রাপ্তবয়স্ক হই, আমরা অষ্টাদশে। রাতটাও তাই। নিকষ আঁধার যখন চারদিক ছেয়ে ফেলে, বড়ো একা  হয়ে যাই তখন। জীবনে তখন গভীর রাত।  রাত তখন গোধূলি বা  সন্ধ্যার  মতো নাবালিকা নয়। নাবালক সন্ধ্যায় একটু আধটু আলোর পরশ পাওয়ার সুযোগ থাকে। আর, “অষ্টাদশী রাত” তার সাবালকত্ব নিয়ে জীবনটাকে চারদিক দিয়ে অক্টোপাসের মতো মুষ্টিবদ্ধ করে।  মুক্ত শ্বাস নেওয়া তখন হয়ে ওঠে কষ্টকর। তবে, যতই সে শক্তিশালী হোক আশা জিইয়ে রাখলে জীবনে আবার ভোরের সূর্যের ঠিক দেখা মিলবে। আর, তাই একটা সুন্দর সম্ভাবনা দিয়ে সুন্দর সমাপনে শেষ হয় সুন্দর কবিতাটি।আর, সুন্দর কবিতাটি তার সার্থক নামকরণে মধুরতা বাড়িয়ে তোলে বহুগুণে।


  শ্রদ্ধেয় কবিকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই এমন সুন্দর এক কবিতাটিকে কবিতার আসরে উপস্থাপিত করার জন্য। জানাই আন্তরিক শুভকামনা।


ধন্যবাদ।