দাদা, তুই রাখবি মনে আজকের এ দিন,
বেঁধে যাব আমিও তোকে বড় হব যেদিন
গ্রিলেতে বেঁধে আমায় পালিয়ে বেড়াস তুই,
কি আর করব, কাঁদি, চুপি, কখনো বা শুই,
টানাটানি করি খুব হাত পাঁচেকের দড়ি
কখনো পেট কষে যায় লাগলে জড়াজড়ি,
কেউ কাছে এলে তারা কষ্ট কিছু বোঝে
“আহা! বাছা!” বলে কেউ চোখের জল মোছে
আমি থাকি পথের পাশে মাটির বারান্দায়,
সাড়াটা দিন বহু হকার এ পথ দিয়ে যায়,
তাদের মধ্যে কেউ যখন নিতে আসে কোলে
ভেতর থেকে মা জেঠিমা ওমনি আসে চলে,
“না না, ও কোলে গেলে জুরে দেয় জোরে কান্না
দাঁড়িয়ে কেন আছেন দাদা? নিজের কাজে যান না।”
মা জেঠিমা আমায় রেখে যায় চলে ভেতরে,
জুড়ে দিই মিথ্যা কাঁদা নানান রকম করে,
ওদের সময় হলেই তবে যাবে নিয়ে স্নানে
আমি যে তবে মিথ্যা কাঁদি তারা কি তবে জানে?
দাদাকে আমি খেলতে দেখি ক্রিকেট বল হাতে
কখনো বসে  মাঞ্জা করে ঐ রঘুদের ছাতে,
বাবা জেঠু ঘুমিয়ে গেলে দুপুরে দাদা পালায়
কাঁচের খোঁজে পাড়ার ছেলে লুকিয়ে নামে নালায়,
কাঁচ গুঁড়ো করে, সাগু নিয়ে মাঞ্জা করার দিনে
সবাই সবার পয়সা মিলে সুতোর রিল কিনে,
কি মজা করে ঐ দাদারা দুপুর রৌদ্রে বসে!
জানালায় আমি মুখটি রেখে দেখে যাই আপসোসে,
“অই আই” আমি যতই করি বোঝে না কেউ কিছু
কি আর করি ওদের কাছে আমার দাবিতো  নিচু,
যতই আমি বোঝাতে চাই আমার মনের কষ্ট
ওদের কাছে আমার কথা এখনও হয়নি স্পষ্ট।
ট্যাপের কাছে গিয়ে আমি যেই দিই জল ছেড়ে
মা তাকায় কটমটিয়ে, “কে ওদিকে যায়, কে রে?”
দু চার ফোঁটা ট্যাপ থেকে জল পড়েছে হাতে যেই
মা টেনে নেয় জলদি এসে, “এই খচ্চর এই।”
ফেরার পথে যেমনি হাত দিতে যাই বালতিতে
ওমনি মা ওঘরে যাই আনতে আবার ফিতে
এমনি ভাবে বারে বারে হয়ে যাই আমি বন্দী
আমার বাবা দারুন চালাক নিশিত কুমার নন্দী
মাকে বলে, “খোকাকে  খাটে  এখানে দাও
তুমি কাপড়গুলো বরং ছাতে আনতে যাও।“
বাবা আমায় জাপটে ধরে থামিয়ে রাখতে চায়,
ওখান থেকে সুইচ বোর্ড সহজে টেপা যায়,
কায়দা করে মোটরটাকে যেই দিয়েছি চালিয়ে
ওমনি বাবা চেঁচিয়ে ওঠে, “দিবি সবকে জ্বালিয়ে”
সুইচ অফ করে বাবা মাকে ডাকে, “শোনো,
এমন ছেলের মা বাবা হতে চা’বে না একজনও”
সত্যি তোমরা বলো  তো আমি কি খুব খারাপ?
যার কারনে এমন কথা বলছে আমার বাপ।
আমার যদিও নাম আছে এক ‘কি জানি কি হবে’
‘গোলু মিয়াঁ, গোলু মিয়াঁ’ নামেই ডাকে সবে।
আঠেরো মাস হবে বয়স, সামনের মাস এলে
আমার অনেক দুখের কথা বলব সময় পেলে।
এসব কথা বোলো নাকো আমার বাবা মাকে
শুনলে তারা আমায় বুঝি পুঁতবে পচা পাঁকে।