কবিতাটি পড়বার আগে অনুগ্রহ করে শেষের অংশটি
আগে পড়ে নিন।


বাপ-ব্যাটা চোর সাজে বাজারেতে গেলে,
বাপ যেটা আটে বেচে, দশ বলে ছেলে,
এক মাল, তবু কেন বিকে ভিন দরে?
কবিতাও তার ঘরে এ সুত্র ধরে,
সেথা তিন হাট চলে ভিন্‌ ভিন্‌ নামে,
কোথাও বা দর ছোটে, কোথাও বা থামে,
যে ‘লঙ্কা’ “এক হাটে” দু’টাকায় মেলে,
তিন দিতে হয় কড়ি “দুই হাটে” গেলে।
‘তিতিক্ষা’ “এক হাটে” বসে তিন সিটে,
সেটাই আবার “দুয়ে” চারেতেই মিটে।
‘ভিক্ষাবৃত্তি’ “দুয়ে” গেলে হয় ছয়,
সেটাকেই “এক হাটে” চারে বেচা হয়,
সিট গুনে “এক হাটে” বসে শব্দটা,
ধ্বনি ভেঙ্গে শুরু হয় “দুই হাটে” ছোটা,
‘আক্ষেপ’ ধ্বনি ভেঙ্গে ‘আক্‌ খেপ ’ পাই,
‘আক্ষেপ’ চোখে দেখি, কানে নাহি যায়,
কানে যায় ‘আক্‌ খেপ্‌’ চার সিট নিয়ে,
চোখকে ঠেকানো যায় তিন সিট দিয়ে
চোখের দেখাটা বেচি “এক হাটে” এসে
কানের বাছাকে নিই “দুই হাটে” শেষে।
এইভাবে ভেঙ্গে দেখ শব্দখানাকে
‘মাত্রা গুলিকে’ জেনে বাড়াও জানাকে,
‘কবিতা’ তিন মাত্রা একেও দুয়েও,
তিনের কয়েক দেখঃ ‘কদিন শুয়েও
থেকেছে দুর্গা ক্ষুধায়’ কি বোঝা গেল?
এক দুই হাটে যাওয়া গুটিয়ে ফেল।
মোটামুটি “হাট এক দুই” হল চেনা,
তবুও এখনো হাট “তিনটি” অচেনা
যুক্তাক্ষর ভাঙো সাবধানে তবে,
প্রথমেতে এক, তবু পরে দুই হবে,
যেমনটাঃ ‘ক্ষয়’  টোটাল মাত্রা দুই
‘যক্ষা’ “তিনকে” একেবারে নিল ছুঁই।
এসো দেখি “তিন হাটে” কি সেথা বিকায়?
দল দল ভেঙ্গে এরা ‘উ-ঠুন’ নিকায়
‘সরকার’ ভেঙ্গে দেখো দুই দল পাবে
এ শব্দ “তিন হাটে” দু’মাত্রা যাবে।
‘পূর্ণিমা’ ভেঙ্গে গেলে ‘পুর-নি-মা’ আসে,
চার দল হবে দেখ, আছে ‘সে-লু-কা-সে’
দলগত হাটে ছন্দ গড়বে “তিন”
“দুই হাটে” ধ্বনি শুনে, কান শুধে ঋণ ।
“এক হাটে” সিট মত বসে অক্ষর
মিলেমিশে বসে ওরা দিতে ধ্বনি জোর ,
কোল পরে কেউ বসে, কেউ গায়ে গায়ে
আপত্তি কার হবে? সমঝোতা সায়ে।
না-বলা অনেক কথা গেল বাকি থেকে
চলে চলে তোমরাই যাবে ঠিক পেকে।


ছন্দ : মাত্রাবৃত্ত


১। বিশ্লেষনঃ
এভাবে পড়বেন-
শব্দ – অক্ষরবৃত্ত (মাত্রা)***মাত্রাবৃত্ত(মাত্রা)***স্বরবৃত্ত(দল)
লঙ্কা- ল ঙ্কা(২)** ল ঙ্‌ কা (৩)** লঙ কা(২)
অক্ষর- অ ক্ষ র (৩)*** অ ক খ র (৪)*** অক খর(২)
তিতিক্ষা- তি তি ক্ষা(৩)**** তি তি ক খা(৪)*** তি তিক খা(৩)
ভিক্ষাবৃত্তি-ভি ক্ষা বৃ ত্তি(৪)**** ভি ক খা বৃ ত তি (৬)*** ভিক্‌ খা বৃত্‌ তি(৪)
আক্ষেপ-আ ক্ষে প(৩)****আ ক খে প(৪) ** * আক খেপ(২)
কবিতা-ক বি তা(৩)*** ক বি তা(৩)*** ক বি তা(৩)
ক’দিন-ক দি ন(৩)*** ক দি ন(৩)*** ক দিন(২)
শুয়েও-শু এ ও(৩)*** শু এ ও (৩)*** শু এও(২)
দুর্গা-দু র্গা(২)*** দু র গা(৩)*** দূর গা(২)
ক্ষুধায়-খু ধা য়(৩)*** খু ধা য়(৩)*** খু ধায়(২)
থেকেছে-থে কে ছে(৩)*** থে কে ছে (৩)*** থে কে  ছে(৩)
ক্ষয়-খ য়(২)*** খ ই (২)*** খয়(১)
উঠুন-উ ঠু ন(৩)***  উ ঠু ন(৩)*** উ ঠুন(২)
সরকার-স র কা র(৪)*** স র কা র (৪)*** সর কার(২)
পূর্ণিমা-পূ র্ণি মা(৩)*** পু র নি মা(৪)*** পুর নি মা (৩)
সেলুকাসে-সে লু কা সে(৪)*** সে লু কা সে (৪)*** সে লু কা সে(৪)


২। বাংলা ছন্দের তিন মৌলিক নামঃ অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত এবং স্বরবৃত্ত নামগুলি একটু বড় হওয়ায় কবিতার ছন্দ মেলানোর স্বার্থে CODE ধরে নেওয়া হল, কবিতা পড়ার পর সেগুলিকে DECODE করে নিয়ো, কেমন?
CODE:
এক হাটঃ অক্ষরবৃত্ত / মিশ্রকলা বৃত্ত  / তানপ্রধান ছন্দ
দুই হাটঃ মাত্রাবৃত্ত / কলা বৃত্ত / ধ্বনি প্রধান ছন্দ
তিন হাটঃ স্বরবৃত্ত / দল বৃত্ত / শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ