৪। দ্বিতীয় দেখা স্কুলে ...... তুমি কিছুটা ছুঁলে


দ্বিতীয়বার দেখা হল ইশ্কুলে,
কেঁদেছিলে? চোখ ছিল কিছুটা ফুলে,
ভালো লাগে সাদা শাড়ি, পার সবুজ,
এখানে পড়ো? মনে এলো কিছু বুঝ,
ধ্বনিত হৃদয় উঠল দেখে দুলে।।


উড়ে উড়ে যে পাখি খুঁজে ফেরে সুখ,
আজ সহসা দেখা গেল শুভ-মুখ,
বসল গাছে, জিরোতে ক্লান্ত ডানা,
দেখে সুখী হবে!  করুক সব মানা।
দেখে সুখ পাওয়া? এ নয় অসুখ?


ছেঁড়া ছেঁড়া দেখা যতই পেত সে
নিভৃতে গাছ বাড়ত অধিক জোশে
নরম বাতাস ভরাট করত শরীর,
যেন এ যাদু-শক্তি কোনো পরীর
দিন-রাত কেটে লাগল যেতে আশে।।


নানা ভাবে দেখা লাগল হতে বেশি
চুপচাপ থাকা, বন্ধ মেলামেশি,
প্রেয়ার, টিফিন কিম্বা ছুটি শেষে
মাঝে মাঝে গেট পেরোতে মৃদু হেসে
দেখার পরও বহুক্ষণ কাটে না  রেশই।


এভাবেই দেখাগুলিকে জড়ো করে,
শুতে গিয়ে ছাই, রাত পৌঁছায় ভোরে,
কত কি যে ভাবি ‘বলব আজি কথা!’
অমনি শিউরে উঠে বৃক্ষলতা।
বলতে গিয়ে কেন কথা যায় সড়ে ?


এভাবেই কাটে কত দিন, কি মাস
‘হবে, কথা হবে’ মনেতে থাকে আশ।
শুরু হল কথা হঠাৎ প্রাইভেটে,
যেদিন লিখে দিলাম গ্রামার খেটে,
কারণ? “আজ দেরি করেছিল বাস।”


কোথাও বুঝি ছিল তোমার যাওয়া,
এতেই হল আমার অতি পাওয়া,
তোমার সাথে আমাদের ব্যাচে এলে,
দিন পনেরোর জন্য কোথাও গেলে
এসবে উঠে গেল নাওয়া-খাওয়া।।


কথা শুনতে  সে যে কত বড় সুখ!
এ কথা কভু বোঝাতে পারে না মুখ,
সুখবৃক্ষে ডালপালা কিছু হলো,
যেন সে ক’দিনে পেরিয়ে গেছে ষোল,
তাকে বাঁচাতে প্রতিক্ষণ উন্মুখ।।


দিন কুড়ি দেরি হয়েছিল ফেরাতে,
মাঝ রাতে ঘুম ভাঙত প্রতি রাতে,
বুক ভরা দম আসে তোমাকে দেখে
মনে হয়, কোন সুখের কাঠি, এ কে !
স্বপন সম দোলা দাও প্রতি প্রাতে।।


আমি এখন বিহঙ্গ ডানা খোলা,
প্রতিবেশীরা এ নিয়ে জল ঘোলা
করে যাই দেখি, তবু উড়ি প্রতিক্ষণ
বিভোর আবেশে সরস সবুজ মন ,
যাবে কি কখনো এ অধ্যায় ভোলা?


পুরোনো সেই এক্সচেঞ্জ গলিটায়
ছুটির শেষে সকাল সাড়ে ন’টায়,
‘শোনো, যদি কিছু মনে না করো, তবে
আমার একটা কথা বলা কি হবে?
বহুদিন ধরে এ ব্যাথা জ্বালায়।’


লোকজন কিছু পাশেতে ছিটেফোঁটা,
ভাবিনি বলে আরাম হবে এতটা,
বুক থেকে নেমে গেল কিছুটা বোঝা,
মুখ নীচেতে, মৃদু হেসে বললে, “সোজা
করে বলো, কি ঝাপ্সার ভাষা ওটা?”


ছপাছপ দাঁড় পরে যেন নদীতে,
বেগ বেড়ে যায় সে ক্ষুদ্র পানসীতে,
বাতাসের বেগ জোরে শোঁ শোঁ বয়,
জবাব কি হবে, ভেবে মোর ভয় হয়
কি জানি, কি আছে তার মতিতে?


মাথাটা যেন ঘুরে যাবে বনবন,
ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে এ মন
এমন সময়, “এসো, এই পথ ধরি,
ক’টা যে বাজে? তোমার আছে কি ঘড়ি?”
এ শুনে পানসী স্থিতু কিছু তখন।


প্রায় শান্ত মতি দেখে হাঁফ ছাড়ি,
বামে বাঁক নিয়ে বাস-পথে দি পাড়ি।
‘আমার ঘড়ি তো নেই; কেন তা, বলো?’
-“বাস পাব নাকো, একটু ধীরে চলো,
এতে কথা ফুরবে না দুজনার ই?”


পানসী এসে পরে সমতল জলে,
আমাদের গতি ঠিক তেমনি চলে,
এলোমেলো কথা সকল ফিরে চায়
যেটা বলার তা আসে না কেন হায়!
ব্যাথাটা বেড়ে যায় না বলার ফলে।


ডাকঘর ডানে রেখে মোড় পেরোই
“অফিসটা যে ফাঁকা, লোকজন কই?
কি যেন বলছিলে,জ্বালায়-টালায়?
বলা হয়ে গেলে আজ তবে পালাই।
ভারি লাগছে, ব্যাগে অনেকটা আজ বই।”


চাপা বেগ ঠেলে বলি, ‘তোমায় আমি...’
এইটুকু বলে নিয়ে কিছুটা থামি
দমটা বন্ধ হবে বুঝি আমার,
তবুও শক্তি নেই কেন যে থামার
‘দেখা না পেলে কেন বাড়ে পাগলামি?


কেন যে আরাম পাই তোমাকে দেখে,
ঘুম কেন আসে না মাঝরাত থেকে,
কোন ইশারে এল এ অবুঝ মতি,
যে ছিল এক মরা; ঘরকুনো, অতি,
অজান্তে কি জিনিস নিলো সে মেখে!’


নজর লুকিয়ে মৃদু হাস বার কয়,
দিশাহীন বায়ু এলোমেলোতে বয়,
উড়ো চুল ছুঁয়ে নেয় তব কপাল,
মনে ভাবি, এ কেমন তরো সকাল!
জুতসই এর সদুত্তর হয়?


স্বভাবে তুমি দেখি কিছু সেকেলে,
বলে গেলে সে নারকেল গাছে হেলে,
“সুস্থ শরীর ব্যাস্ত করে কি লাভ?
আন্দাজেতে এ জেনেছি হাবভাব।
কি হবে বেকার এ লুকোচুরি খেলে?”


কড়া কথা, তবে দরদ ছিল তাতে
মন্দ লাগে নি তোমার এই রা’তে
ক্ষানিক পরে গেলে চলে বাস পথে,
মোটামোটি মিল হয়ে গেল দু’মতে,
সুখের চলা শুরু হল তোমা সাথে।


৫। সুখ বৃক্ষের কথা ......যাতে গজিয়েছে লতা


সুখ বৃক্ষ জুড়ে উঠে হিল্লোল,
প্রাণে বাজে ঝঙ্কার কলরোল,
কতক্ষণ জানি এ হেন বাজা বাজে
ফুল-পাতা-লতা রূপসীসম সাজে
প্রতি শাখে তোলে কি মধুর যে দোল!


পানসী এবার সমতল গাঙে আসে,
বাধা নেই, সে আপন ছন্দে ভাসে,
দাঁড় ওঠানো। শব্দ না যায় শোনা,
মাঝি যে তার চেয়ে থাকে আনমনা
পুজো আসছে, পাড় ছেয়ে গেছে কাশে।


********


প্রতি ভোর থেকে রক্তের ছোটাছুটি
সে পথে কখনো হাঁটি, কখনো ছুটি,
যে দিকে তুমি হাঁটো তিন সকাল,
বদ্ধ ঘরে বাতাসেতে ফুলে পাল,
পাড়ি দেয় দূরে, ভাবনা নিয়ে দুটি।


সুখ বৃক্ষ আমার ভেতরে বাড়ে,
ডালপালা তার প্রায়শ উঁকি মারে,
কান, চোখ দিয়ে কখন বা কথায়,
কড়া ভাষায় বাধা দেওয়া না যায়
হৃদয়-রক্তে গড়ে তুলেছি যারে!


সে বৃক্ষে আজ কূজন অহরহ
একি অন্যায়? পাঠকেরা আজ কহ,
নিজ রক্ত-প্রাণে গড়া যে গাছ,
কি আনন্দ যদি দেখি তার নাচ!
হে সুগন্ধ, এ শরীর ছুঁয়ে বহো।


******


শতেক ঘোড়া ছুটছে ঊর্ধ্বাকাশে
মানিক রতন রাতদিন বাতাসে,
খেলে যায় কচি ধান গাছেতে ঢেউ
তাদেরই সাথে উড়াই আমাকেও
কারণ, তোমার ছুঁইছুঁই আশেপাশে।


সুখ বৃক্ষের প্রতি কনাতে রস
হৃৎপিণ্ডের অলিগলি অবশ
তবু যেন সুখ দোলা এ ছায়া তলে
বাতাস তব কথা এসে কানে বলে,
বাকি ব্যাস্ততা হয়ে গেল নিরস।


৬। তৃতীয় দেখা সকালে......জরালে গো মায়াজালে


সেদিনের পর তৃতীয় যেদিন দেখা,
সাত সকালে প্রাইভেট পথে একা,
রাস্তা সাফ করছিল সেই রাজা।
তোমায় দেখে আমি যেন তরতাজা,
হিসাবীর কাছে এ সম্পর্ক বেঁকা।


চলেছিলে হেঁটে আর যেমনি যাও
ব্যাগখানি ঝোলা বাম কাঁধেতে, তাও
ত্রিকোনা কপালে হলুদ টিপখানি
চোখে ঝাপসা কাজলের রেখা টানি,
ছুঁড়ে দিলে বুঝে দু’একটা রা ও।


“কখন আসবে, দাঁত হয়নি মাজা?
শোনো, ভালো কথা, তোমার এই রাজা
সাধন কাকুর দোকানে আসে যায়
আর বাবাও উঠে-বসে, চা টা খায়,
এ ‘দেখাদেখি’ দেখলে দেবে সাজা। ”


বাড়মুন্ডা, গেঞ্জিটা রংচটা
পরেছিলাম। কলেজের  পথে ঘটা
করে দাঁত মাজামাজি, ফর শো,
আসলে, তোমায় দেখেই কয়েকশো
চোখ, জমা রাখবে সে মুহূর্তকটা।


আমি বললাম, ‘যা হবার তা হবে
তবে সত্যি বলছি তোমায় যবে
দেখেছি, সেদিন উড়েছি আমি থেকে।’
শুনে বললে, “অকালে গিয়েছ পেকে;
খেয়াল রাখো, ফাইনাল ফল কবে?”


*******


পাঠকেরা শোনো, নানাভাবে ফন্দীতে
-ব্যাক আসবে, ভোগাবে ইংরেজিতে-
এ বলে তার  ব্যাচে আসাআসি শুরু,
শোনামাত্র সে কুঁচকেছিল ভুরু,
ইলেভেন ব্যাচ বুঝল এ দেরীতে।


*******


‘কবে রেজাল্ট? হয়ত কদিন পরে।’
“আজ্ঞে না, টিভিতে দেখলাম ঘরে;
তিনটে দিন পরে, ছাব্বিশে জুন।”
মুহূর্তেই কোথাও যেন হল খুন!
পায়ের তলে মাটি যেতে শুরু সরে।


পাশ হলে থাকা যাবে না তো সেথায়,
‘পাশের চেয়ে ফেলটাই বেশি চাই।’
কিছু তর্ক করলে আমার সাথে,
“কিছু কি বুদ্ধি থাকে না মাথাতে?
এ ছাই বিচারে কেউ কি দেবে সায়?”


দাঁত মুখ ধুয়ে ফুল বাগানে ঢুকি,
বাংলার নোট ঠিক মত না টুকি,
গুম ধরা মন, কথা না আসে ভালো,
নেভাতে আগুন, আকাশে মেঘ কালো
বৃষ্টির দাঁত খিচানো উঁকিঝুঁকি।


ফ্যাকশা মনেতে দাগ কাটে না কিছু
রেজাল্ট- ভুত সদাই করছে পিছু
যতটা তাড়ে ভাবায় তার চে বেশী,
পাশ হব’ জানি, মুখপুড়ি এলোকেশী
লিখছিল নোট মুখটি রেখে নীচু।


মাসে ছাব্বিশ ঘণ্টা যাবে কমে
এই ভেবে মন-মেজাজ থমথমে।
পাশ। কলেজ যেতে হল। ফার্স্ট ইয়ার
দেখা কম। মনে দাপাদাপি। ফিয়ার
এ মনে হাজার ফুটো এক লহ্‌মে।


পাঠকদের উদ্দেশ্যেঃ-
পাঠ করবার আগে মাথায় একটু রাখুন-
Single quotation-নায়কের উক্তি
Double quotation- নায়িকার উক্তি


৭। এক পথ হল শেষ ...... গড়ে দিল নব দেশ


(এই লেখাটি আপাতত বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছি। পরে সুযোগ সময় হলে আবারও চেষ্টা করব। ভাল থাকবেন বন্ধুরা।)