আমি পুজা দাস, অষ্টম শ্রেণী, হোস্টেল রুমে থাকি
আমার কষ্টগুলিকে মনের গলিতেই চেপে রাখি,
আগে জানতাম, বদমাশ ছেলে-মেয়ে আসে হোস্টেলে,
বইখাতা দিয়ে পড়ানোর নামে গার্জেন যায় ফেলে;
আর আসে যারা আরো ভাল হতে চায় আগামীতে
আমার আসাটা সেসব কিছুনা শুনো মোর জবানীতে।
আগেকার মা’টা ভালোতে মন্দে ছিল ঘরে ক’বছর
বোনটা আমার হবার পরে মা ঘরেতে কমাল জোর
কি জানি কেমন উরো-উরো ভাব দেখতাম মা’র মুখে,
বাপটা আমাকে বকাঝকা দিলে মা’টা আসতো না রুখে।
প্রথম প্রথম খারাপ লাগত খুব কাঁদতাম রাতে,
বাথরুমে গিয়ে কাঁদতাম প্রায়, কখনোবা গিয়ে ছাতে
ভাল কারিগর মিষ্টি গড়াতে বাবা নামী পাড়াঘরে
গরীব হলেও বাবা চায়তো না গৃহবধূ কাজ করে।
তবু মাকে কিসে ভর করেছিল গেল বিড়ি বাঁধা কাজে
পাড়ার অনেকে বলত আমাকে, “কেন রে মা এত সাজে?”
আমি বলতাম, “জানি না কাকিমা, এমন হল মা কেন?
সারাদিন খালি বকাবকি করে ক্ষতি করি বুঝি যেন,
ঘরে মা যখন কাজ কাম করে আমি সামলাই বুনি
নিজ থেকে দুধ গুলে দি যখন বোনের কান্না শুনি।“
পাশাপাশি দুটি রুম ছিল একটি মা-বাবা-বোন
বাকিতে ঠাকুমা আর আমি মিলে ঘরে মোট পাঁচ জন।
পাগল গোছের ঠাকুমা ভীষণ বক বক করে যেত
দুপুর বেলার খাবার যেটা তা বিকেল বেলায় খেত।
হাঁসত কাঁদত আপন খেয়ালে ঝাপসা স্মৃতির বল,
ডোল ভরা জল উপছে পড়ত তবু টিপে যেত কল।
ঝগড়া বাঁধত ঠাকুমার সাথে সকাল দুপুরে প্রায়
দুই-এর মাঝে থাকতাম আমি, যাতে সামলানো যায়।
বাপটা আমার মনমরা হয়ে বেরোত ঢুকত বাড়ি
মা যেন অতিথি সেজে পুরোপুরি বাপটাই সংসারী।
বাহির ভেতর সব সামলাতে বাপ হিমসিম খেত
বুঝতাম আমি, আমার জন্য বাবাও কষ্ট পেত।
এভাবেও যদি কাটত জীবন তাও সহা যেত বুঝি
মা বোন উধাও, এক শীত ভোরে, পাওয়া গেল না খুঁজি।


(চলবে)