সকাল হতে না হতে সকলে জেনে গেল ঘটনাটা
মায়ের এমন পালানোতে হল মুশকিল পথে হাটা
যত দিন গেল কানাঘুষো সব থামল নিজের মত
বাইরে যাহোক ধামাচাপা গেল ভেতরে বাড়ল শত
পরের দোকানে কাজ করে বাবা যেতে হবে রোজ কাজে
ভেতরে ঝড়ের রোল উঠলেও লোক জানানো কি সাজে?
ভোর থেকে বাবা কাজে লেগে যেত: ঠুংঠাং শুনে যদি
কখনো যেতাম, বাবা বলে যেত, "ঘুমা উঠেনি রোদই,
ফ্লাক্সে চা আছে, মা উঠলে খাবি, খেয়ে পড়তে বসবি,
মাথা বেশ জোট বেধেছে, গরম জলে মাথাটা ঘসবি।"
তরকারি ভাত রেঁধে খেয়ে ঢেকে, বাবা চলে যেত কাজে
খাওয়া বাসন কোন কোন দিন ঠাকুমাই বসে মাজে
দুপুরের দিকে বাড়ি এসে বাবা ঝাটঝুটঁ দিয়ে খেত
আবার কিছুটা কাজ সামলিয়ে সন্ধ্যার দিকে যেত
পরবে পুজোয় বেশি চাপ হলে বাবার হত না আসা
সেসব দিনের কথাটা না হয় থাক বেবাক ধোঁয়াশা।  
দয়াপরবশ হয়ে প্রতিবেশ কেউ দিয়ে যেত ভাত
"আহা! বেচারির কি দশা রে আজ। মায়ে ছেরে দেয় সাথ?"
এভাবে সময় কাটল কষ্টে দিন এল ফের ভাল
জায়গা কিনল গঞ্জের কাছে, ভরল এঁদো খালও
টালি চাপা দিয়ে দোকান গড়ল, চালু হল ধীরে ধীরে
সংসারী হাল যা ছিল বেহাল, এল কিছু তার ফিরে
বাড়ির আকার বড় হল বেশ আরো তিন খোপ জুরে
কিন্তু মায়ের অভাব তখনো আসছিল ঘুরে ঘুরে
বড় ছাদ 'পরে শুরু হল খেলা পাড়ার মেয়েরা মিলে
তরিঘরি সব পালাত ছুটে ঠাকুমা বকুনি দিলে
ধীরে ধীরে তারা কমাল এখানে খেলতে আসার রেশ
ঘুরঘুর শুধু করতাম ছাদে আহারাদি হলে শেষ
ইশারাতে ডাক দিতাম তাদের, চুপিচুপি যেতে ছাতে
ঠাকুমার দোর ঠেকিয়ে দিতাম দেখতে না পায় যাতে
টিফিন না খেয়ে টাকা জমা করে  আনতাম কিনে গজা
লোভে যেন রোজ এখানেই আসে করতে দুপুরে মজা
এ চালাকি হায়! হারাল কোথায়, আসাতে দিলো ভঙ্গ
নিরুপায় হয়ে বাড়ি থেকে গিয়ে জুরলাম তাতে সঙ্গ।
বটতলা শেষে, যে বাগানটা মেশে, সেথা এক পোড়োবাড়ি
ছাতিমের ডালে, ছন্দের তালে দোল খেতে কাড়াকাড়ি
সেথা যায় সবে, জানলাম তবে, গজা টানে নাই আর
দঙ্গল ভরা, চিতকার করা, খোলামেলা কি মজার!
একা পড়া ঘরে সকাল ও সাঁঝে ভাসত দুপুরবেলা
লোক মুখে বাবা জানল সে কথা বন্ধ হল সে খেলা।
ছাতিমের তলে একজন ছলে বলেছিল কানে কানে
"জানিস কি তুই বিয়ে হবে তোর বাবার, অনেকে জানে"
বুঝি ইয়ার্কি করল জোনাকি বিশ্বাস করিনি তা
কিছুদিন পর স্কুল থেকে ঘর যেতে বলেছিল মিতা।