আকাশটা প্রায় কালি কালি ছিল মেঘ ভাসছিল বলে
ভাবেনি নীলিমা আঁধার এতটা ঘনাবে সন্ধ্যা হলে।
স্কুল ব্যাগে তার টর্চ আর ছাতা বরাবর ঢুকে থাকে
ভিজে গেলে ছাতা শুকিয়ে আবার নিজে রাখে ব্যাগ ফাঁকে।
আজকে হঠাত দিন বদলালো আকাশ ঢাকল মেঘে
থেকে থেকে মেঘ পশ্চিম পানে ব্যাস্ত সে ডেকে ডেকে।
ভীষন হিংস্র বাতাস উঠল কোথায় লুকিয়ে ছিল,
তার পথে যারা বাধা হয়ে এল তছনছ করে দিল।
কূলে বাঁধা নাও দৈত্যের মত রোষে, ছাড়া পেতে চায়
কখনো এদিকে কখনো ওদিকে বায়ুশক্তিতে ধায়।
মাঝিমাল্লারা ভেজা দেহে কাঁপে, কাহিল খাটার জোশও
হিঁদু বউ বেটি হাত জোরে বলে, 'পবন ঠাকুর বোসো'।
হুশ নেই কারো কতক্ষণ তারা নদী তীরে ছিল ঘেরা,
বাতাসের বেগ কমে গেল যেই মাথা চারা দিল ফেরা।
তারও কিছু পরে বারিশ ধরল একে একে এল লা'য়ে
নদী পাড় হয়ে চলে গেল কেউ কারো ঠোঁট ছুঁলো চা'য়ে।
মেয়েটির কাছে টর্চ ছিল তবে হাত ছাড়া ছিল ছাতা,
নদী পার কালে এক ছাতা তলে তাই এনেছিল মাথা।
সে অপরিচিত লোকটি  দাঁড়িয়েছিল কিছুটা তফাতে
পাশ কাটাকাটি করে চলে গেল যারা পার হল সাথে।
এক পা দুই পা করে নীলিমার পাও সামনের  দিকে
এগিয়ে চলল 'কি হতে কি হয়' শঙকাও হল ফিকে।
জরতা এড়িয়ে বলল মেয়েটি, 'ছাতাটা আসলে ভুলে
জানিনা কিভাবে.., তাছাড়া ছাতাটা..., ভিজেছিল আজ স্কুলে।'
"আপনার আলো, আমার ছাতায় পথচলা হোক আজ
পৃথক পৃথক দুটোই বেকার, এক হলে হয় কাজ।"
'দাদা, ঠিক তাই, চলুন এগাই।', এগোল দুজন সোজা
মল সেঁটে গেছে মেয়েটির পায়ে, পুরুষের ভিজে মোজা।
আকাশের আরো খেলা বাকি আছে ডাক হাঁক ছারে বেশ
মিলালো যেখানে লাল মাটি পথ মেয়েটির হাটা শেষ।
ভীত কয় জোরা চোখ জেগে আছে আঁধার গ্রামের ঘরে,
'''কতবার পয় পয় করে বলি, এত দূরে কেউ পড়ে?
উৎকন্ঠিত মায়ের আদর অচিরেই দেল দেখা,
'''এই দূর্যোগ, কিভাবে তু এলি, এই মেঠো পথে একা? '''
অনেক অনেক সাধুবাদ জুটে গেল ছেলেটির ভাগে
রাত বেড়ে চলে, "আর কথা নয়, বাড়ি যেতে হবে আগে"
তারাতারি করে উপকারী ছেলে, আঁধার পথে পা ফেলে,
মেয়েটি এগিয়ে দিতে আসে আলো,  টর্চটিকে হাতে জ্বেলে।
কাকিমার মত টুকটাক কথা শোনা গেল মহিলার
'''উপকার তুমি যা করলে বাবা ভুলব কি করে; আর
আলোটা তো সাথে নিয়ে যাও বাবা, পথে দরকার হবে,
চিনে গেলে ঘর, না হয় ফিরিয়ো,  এখানে আসবে যবে।'''
জল কাদা ভেঙে এগোলো বাতিটি, আকাশটা ভরা বাজে,
দুটি চোখ ছিল জানালার কোনে, ফাঁকি দিয়ে সব কাজে।