চা-জলখাবার সময় মাফিক টেবিলে হাজির  রোজ
মনের ভেতরে কি যে হাহাকার কারো নেই তাতে খোঁজ।
রহিমা খাবার ঢেকে রেখে দিয়ে চুপিসারে যায় নেমে
এঁটো কাঁটা সব তুলে নিয়ে যায় কিছুটা সময় থেমে।
বউদের মত তারও অপছন্দ বুড়ির বকবকানি
অকাজের কথা বলে ফেলি বটে সেটা যে অচল জানি।
কিন্তু কি করি আমিও তো চাই, বলি কথা কারো সাথে
বলুক শুনুক নিজের মতন হাত দিক কেউ হাতে।
বুকের ভেতর ফুলে ফুলে উঠে ফেটে যেতে চায় তারা
নিষ্ফল কথা নিজ মনে বলি পাইনা কারোর সাড়া।
সুন্দর রঙা পরিপাটি করে গুছান দালানবাড়ি
এসবের মাঝে মনের খোরাক আমা থেকে গেছে ছাড়ি।
হাতের নাগালে টিভির রিমোট, সেলফোন, 'ডাকা বেল'.
দরকার হলে কল দিতে হয় বিজ্ঞানের কি খেল!
'উপর উপর' চিকন প্রলেপ,  ভেতর সবার ফাঁকা,
গরীবের তাও কিছু কনা আছে, নেই যার আছে টাকা
জানালায় চোখ লাগিয়ে পাড়ার কিছু ঘটনায় শিখি,
গরীবের মত হলে বোধ হয় কমত দুঃখ সিকি।
টাকার অভাবে তেতলা হয় না, ঠাঁসাঠাসিতে বাঁচন
দশের কথন দশ কানে যায়, হইচই সরাাক্ষন।
নিরুপায় বলে ছড়াতে পারেনা পাঁচজন পাঁচ  দিকে
হাসি কান্নায় ভাঙায় গড়ায় একসাথে থাকা শিখে।
টিভি ও রেডিয় দেখায় শোনায় একমুখো বিনোদন
মানুষকে 'দেখে, শুনে, কথা বলে' তাজা হয় 'মরা- মন'।
জনসমুদ্রে যারা ডুবে থাকে বোঝে কি একার জ্বালা?
মিলনে ফুলের শোভা দেয় যা তা একাতে কাঁটার মালা।
ব্যালকুনি থেকে চেনাজানা লোক দেখা হলে ডাকি বলে
এখন অনেকে এ পথ এড়িয়ে দূর পথ দিয়ে চলে।
সকালবেলায় সব্জীওয়ালা এপাড়া ও পাড়া ঘোরে
বচসা বাধাই নানা ছুতো নিয়ে এলে আমাদের দোরে।
"এত বীজ ভরা বেগুন, ভিন্ডিগুলোতে পোকার দল
পটল কুমড়ো ক'দিনের বাসি? শাক বলে বেচো জল।"
শুনে রেগে মেগে চোখ রাঙা করে বেচারা গাঁয়ের ছেলে।
কিছু বলবার আগে বৌমা আসে, দৌড় দেয় টাকা পেলে।
ঝগড়া করার সুজোগে কিছুটা মনের কষ্ট কমে
হলে হবে হোক বৌমাদের মুখ শুনে কিছু থমথমে।
কেন তেতলায় আমাকে রাখার আয়োজন ? শোন তবে-
ছেলেদের বাবা ক্যানসার রোগে গত হয়েছেন যবে
তারপর থেকে বেশ তো ছিলাম দোতলার এক ঘরে
যেখানে আজকে ডাইনিং রুম, বৌমারা রান্না করে।
কথায় কথায় আমি নাকি খুব বৌদের ফরুং কাটি
সেই কথা নিয়ে বাড়িতে বাঁধল দারুন ঝগড়াঝাটি।
মেয়ে উড়ে এল চেন্নাই থেকে বাড়িময় তোলপাড়
তিন ছেলে এল দোকান লাগিয়ে শুধরাতে সংসার।
বহু আলোচনা বহু মিমাংসা নানাজনে গেল বলে
বুঝলাম আজ ছোট নয় ওরা যারা ছিল এই কোলে
                 (চলবে)