মোবাইলে সাইলেন্ট মোড;
ইনকামিং কল বারবার ডাকে
হাত নেড়ে,
সারা পৃথিবীর থেকে
চোখ সরিয়ে শুধুমাত্র হাজার চোখ নিবন্ধ
মোবাইল স্ক্রিনে,
শরীর তাততে শুরু করে,
লক্ষ মশা পায়ে, পিঠে, ঘাড়ে রক্ত চুষে চ'লে;
প্রায় মফস্বল পিচ-রোড।
মিনিটে দু'চার জনের চলাচল,
রাত ন'টা
দোকান দু'একটা খোলা।
ফোন-কল রিসিভড্ হয়,
"কোথায় এখন?"
খুব চাপা গলা,
মনে হয়
ওপারের সেলটির দশ-বিশ হাত দূরে
সন্ধানী শিকারির আনাগোনা।
কল-গ্রহীতার শরীরে ঘাম বিন্দু বেরোতে শুরু করে,
মৃদু জ্বালা ধরে চোখে,
গরম ভাপ বেরোয় মুখ থেকে,
ভারি ভারি লাগে পা,
বুকে পরে দশ কিলো হাতুরির ঘা।
পনের সেকেন্ড পর
দিত্বীয়বার কথা:
"এখনো শুতে যায় নি বড়রা-
বাইরের আলো জ্বলছে।"
কল-গ্রহীতার হুশ নেই,
ঘাম বিন্দুগুলি
অজস্র উত্তপ্ত বল হয়ে গা
ছুঁয়ে ছুঁয়ে নামছে,
একটু শীত-শীত লাগছে।
পথে লোকজন কমেছে:
মিনিটে দুই কি এক।
লোডশেডিং হয়ে গেলে
যেন পৃথিবী জিতে যাবে সে।
তৃতীয়বার কথা:
"তৈরি থাকো"
কল কেটে যায় নিজে থেকে।
মিনিট তিন কাটল তিন যুগ পরে,
দু'একটা ঘরের আলো নিভে গেল
একে একে;
একটা জীপগাড়ি দূরে দিয়ে 'এল টার্ন ' নিয়ে
বাঁ দিকে ঘুরে চলে গেল।
দাঁড়ানো পাথরটি
দেড় সেকেন্ড জ্বলে উঠল।
ফের, সেলে ইনকামিং কল,
কম্পমান হাতে হয় রিসিভড্:
"তারাতারি এসো,
পাশের দরজাগুলি লেগে গেছে,
সদর দরজায় তালা দিতে যাচ্ছি
দরজাটা খোলা রাখছি;
কোথায় না-থেমে সোজা
ঢুকো;
সিঁড়ির কাছে দাঁড়াবে
আমি তালা দেবার পর
আমার পিছে পিছে চলবে,
গলা খ্যাঁকোর দিলে
নিশ্চুপে সিঁড়ির কোনে লুকিয়ে পড়বে।
তারাতারি.... "
পাথরটি চলতে থাকল
সামনের দিকে,
যেন কোন সম্মোহনী যাদুতে আচ্ছন্ন।
সদর দরজা সামনে,
বাইরের আলো নেভানো,
কাছাকাছি অন্য কয়েকটি বাড়ির
বাইরের-আলো-
তখনো জ্বলছিল।
দরজা সামনের দিকে সরে গেল,
যেন ভেতরের কারোর সহযোগীতা ছিল।
চোখ এর চেয়ে বেশি কখনো সজাগ হয় না,
কান এর চেয়ে বেশি কারো তীক্ষ্ণ হতে পারে না।
মনে হল তার:
কয়েক হাজার চোখ, কান, তলোয়ার বাগিয়ে
সারিসারি দাঁড়িয়ে আঁধারের গোটা হয়ে:
সিঁড়ির রেলিঙে, ঝুলবারান্দার ধারে।
এক ছায়ামূর্তি-
বরফের হাতে ধরল
আগন্তুকের হাত।
টেনে দাড় করাল
সিঁড়ির কিনারে,
ইশারায় উঠে যেতে বলল উপরে,
টিভি চলছে বন্ধ ঘরে,
খোলা দরজার উড়ন্ত পর্দা সরিয়ে
ঢুকে পড়ল আগন্তুক।
বুকে ঢিপঢিপ, কোথায় যেন
কারোর অস্পষ্ট ঘরোয়া কথা কানে আসে।
চোরের মত ঘরের মধ্যে এসে ঢুকেছে
কিছু কি লুটতে?
না কি লুটে যেতে?
বন্ধ ঘরের স্বাভাবিক দুর্গন্ধ দম আটকায়।
পনের সেকেন্ড কেটে গেল।
আর একটু হলেই হয়ত
আগন্তুকের বুকের পাঁজরা
ফেটে চৌচির হয়ে যেত।
বরফ-দেহী ঘরে ঢুকতেই
দুর্গন্ধকে কামড়ে খেতে লাগল
অলীক সুগন্ধ : ট্যালকম পাউডার, শ্যাম্পু চুল।
জোরা শ্বাসপ্রশ্বাস ফ্যানের বাতাসকে
হার মানায়;
কখনো ঠোঁটগুলি বড্ড সজাগ
কখনো ফিসফাস
কখনো বা.....
কোটি বছর পর দিকহারা
এক নাবিক পায়:
শিতল, উর্বর, মনোরম এক দ্বীপ
একান্তে......