আজও সকালে অফিস বেরুবার আগে ,
আভিক ধমক দিল দেবলীনা কে –
এইতো সবে পাঁচ মাস বিয়ে হয়েছে , তার আগে পাঁচ বছরের প্রেম ।
বিয়ের পর দেবলীনা এত বদলে যাবে ভাবতে পারেনি অভিক –
অথচ দেব লীনাই বলত ,
ও সবুজ গ্রাম ভালোবাসে , গ্রামের মাটির রাস্তা , গ্রামের সহজ সরল মানুষ ,
তাই অভিক কে ভালোবেসে শুহুরে মেয়ে দেবলীনা  চলে এসেছিল গ্রাম্য জীবনে –
বাবর একমাত্র আদুরে মেয়ে ,
তা সত্ত্বেও মেনে নিয়েছিল দেবলীনার বাবা মা ,
অভিক গ্রামের দরিদ্র বাড়ীর ছেলে হলেও ,
দেখতে সুন্দর , ব্রিলিয়ান্ট কিন্তু একেবারে সহজ সরল ,
দেব লীনার মায়েরও বেশ পছন্দ অভিক কে ...
তবে অভিকের মাও  প্রথম থেকেই জানত দেবলীনার কথা -
প্রেমের বিয়েতে বাধ সাধেনি কোন পক্ষই,
শুধু দেবলীনার মা ,  ভাবছিল শহ রে মানুষ হওয়া দেবলীনার গ্রামে মানিয়ে নিতে পারবে তো ,
দেব লীনা বাবা বলেছিল ওদের তো দুই ছেলে মেয়ে নেই ,
তোমার মেয়েকে মেয়ের মতই ভালোবাসবে ।
ওরা গরীব হতে পারে ,কিন্তু মানুষ হিসাবে ভাল ,
এতদিন দেখছো তো অভিক কে ।।
অভিক মা অন্ত প্রান ,
আর নিজের গ্রামকেও এত ভালোবাসে -


তার গ্রামের কত যে  গল্প বলত  অভিক  দেবলীনা কে,
শালুক ফুলের গল্প , পাটকাঠি তে আগুন দিয়ে সিগারেট খাওয়ার গল্প ,
মায়ের হাতে বেধড়ক মার খওয়ার গল্প ...
এমনকি  যখন বিয়ে হয়ে গেল কলসি কাঁখে জল আনতে আসা লাজুক  মেয়েটা্র ,
তখন অভিক সবে ক্লাস টুয়েল্ভ ।
বাড়ীতে চাল না থাকার গল্প ,
না খওয়া দিনের গল্প ,
অন্যের জমিতে চাষ করতে যাওয়ার গল্প ,
অভিকের জীবনের অফুরান গল্পরা দেব লীনা কে
নিয়ে যেত শহরের থেকে বহু দূর দুরান্তের অভকিকের গ্রামে –
অত্যন্ত গরীব বাড়ির ছেলের এত ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট ,
দেব লীনা কে অবাক করে দিয়েছিল ,
এক মুর্খ মায়ের না খেতে পাওয়া সংসারে ছেলেকে মানুষ করার গল্প ।
সেদিন ছিল দেব লীনার জন্ম দিন ,
কলেজের ময়লা জামাটা পরেই বাকি বন্ধু দের  এসেছিল অভিক ,
খাওয়ার টেবিলে বসে শেষ পাতের সন্দেশে কামড় দিয়ে বলেছিল এত ভালো সন্দেশ ক খনো খায়নি সে...।
সব কিছুতেই অভিকের এমন উদাস সরলতা আর মুখে লেগে থাকা উজ্জল হাসি
যেন দারিদ্র দুঃখ যন্ত্রণা এসব খুব কোন ব্যাপারই নয় -
কিন্তু বিয়ের পর থেকে
অভিকের মুখের হাসিটা যেন কয়েক দিনেই মিলিয়ে গেল ।
আজ অফিসের চেয়ারে বসে ,
কাজে মন দিতে পারল না অভিক ,
না কিছু একটা হেস্ত নেস্ত করেই ছাড়বে ,
দেব লীনা কি একটু মানিয়ে নিতে পারছে না ।
একেবারে মেয়ের মত ভালোবাসে ,
নিজেকে অপরাধী লাগে অভিকের ।
মাকে কোন ভাবেই অপমানিত হতে দিতে সে পারেনা –
রাত আটতে বাড়ি ফিরতেই অভিক দেখল ,
দেবলীনা একটা ম্যাগাজিন পড়ছে বিছানাতে শুয়ে ,
অভিক চীৎকার করে বলল বাবার দেওয়া নরম বিছানা
ছেড়ে নামতে ইচ্ছে করে না বুছি ...
চিৎকার শুনে অভিকের মা এগিয়ে এসে বলল ,
কি হয়েছে বউমাকে এওবস্থায়  কেন বকিস বাবা ...  
দেবলীনা একটু সরে দাঁড়াল ,
মায়ের সামনেই বলে উঠল কেন আমার মা গ্রামের মেয়ে ,
অশিক্ষিত মুর্খ বলে ,
তোমার মত চার বার হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়না ,
বাচ্চাটা হলে , তার গায়ে হাত দিতে পারবে না বুঝি –
এই তোমার শিক্ষা
দেলীনার দুচোখ ভরা জল , তবুও দেব্লীনা তাকিয়ে আছে অভিকের দিকে –
অভিকের জামাটায় সারাদিনের  ক্লান্তির ছাপ , কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম –
এলোমেলো উস্কো খুস্কো চুল ,
অভিক বলেই চলেছে ,
কি  ভেবেছ তুমি ,
এ  সংসারে মানিয়ে চলতে না পারেলে চলে যাও , তোমার বড়লোক বাবার কাছে ,
তোমার নাটক আমি বুঝিনা ভেবেছ ,
আমি আমার বাবা মা ভাই কে ছেড়ে তোমাকে নিয়ে থাকব  শহরে ফ্ল্যাটে ,
এত নীচ মন তোমার , এত নির্লজ তুমি …এত সার্থ পর তুমি …
আমার মাকে তুমি মা বলে ভাবতেই পার না …
চোখের জল একদম ফেলবে না ।
অভিক ঘুমিয়ে গেলে অভিকের দিকে তখনো তাকিয়ে আছে দেব্লীনা –
ঘুমন্ত অভিকের কপালে একটু হাত বুলিয়ে দিল ভীষণ সন্তর্পণে -

সকালে অভিকের মা ঘরে এলেন ,
হাতে এক গ্লাস সরবত ,
বউমা সরবত টুকু খেয়ে নাও ,
রাতে তো কিছুই খাওনি ...
এ অবস্থায় খালি পেটে থাকতে নেই ।
সকাল বেলা মাকে প্রনাম করে   অফিসে বেরিয়ে  গেল অভিক ,
দেবলীনার সাথে কথা না বলেই –
অভিকের বাবা ও ঢুকে এল ঘরে ,
এত কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি ,
এই বাড়ীতে থাকবে খাবে আর দশ লাখ টাকা এনে দিতে পারছ না ।।
জানো আমার ছেলের জন্য কুড়ি লাখ টাকার সম্বন্ধ এসেছিল ,
সেখানে বিয়ে না বিয়ে দিয়ে তোমার সাথে বিয়ে দিলাম ।
বিয়েতে অভিক দাবী করতে দেয়নি আমাদের ,
কিন্তু তোমার বাবার তো উচিত ছিল ,
হাতে অন্তত দশ লাখ টাকা ধরে দেওয়া ।
এ সব কথা  দেব লীনা এই কথা গুলো বিয়ের পর দিন থেকেই শুনছে ,
না বাড়িতে বলেনি বলেনি ,  
আজ বাড়িতে অনেক লোক ,
মাছের ঝোল রান্না করল
দুপুরে দেব লীনার পাতে মাছ নেই ,
শাশুড়ি মা আদর করে  পোষা বেড়াল টাকে মাছ খাওয়াচ্ছেন ,
আর বলছে অবলা বেড়াল ,
মাছ ছাড়া কি ভাত কটা খেতে পারে …
আমার বউমা তো আবার মাছ মুখেই তোলে না ,
কত বলি এ অবস্থায় একটু মাছ , সবুজ তরকারি , দুধ খাতে হয় ...
বউমার আবার দুধেও গন্ধ লাগে ,
দেবলীনা র গলায় ভাত আটকে আসে ...  
মনটা ঘৃণায় ভরে যায়  
অথচ না এসব কথা  অভিক কে দেব লীনা এসব কখনোই ,
জানাতে পারবে না ,
অভিক মা অন্ত প্রান ,
অভিক আগেই জেনেছে দেবলীনা সবার্থ পর ,শহুরে ,শিক্ষিতা , খুব জেদী মেয়ে ,
অভিকের সহজ সরল মাকে ঘৃণা করে সে।