কর্মসূত্রে আমার পোস্টিং একটি প্রত্যন্ত গ্রামে হয়েছে ।
অফিসের পাশেই নিজ খেয়ালে বয়ে চলেছে ইছামতি ।
একদিন নদী পার হওয়ার জন্য হাঁটছি,
পথের দু-ধারে সবুজের মেলা বসেছে ।
এমন সময়ে আমার দৃষ্টি কেড়ে নিল
একটি বছর চারেকের বালক ।
আমি থমকে দাড়ালাম পথের পাশে ।
বালকটি সম্ভবত তার বাবার জন্যে
খাবার নিয়ে যাচ্ছে মাঠে ।
তার মুষ্ঠিবদ্ধ দু-হাতে খাবারের থলে ।


সে সমস্ত গায়ে রোদ মেখে হেটে চলেছে
পথের পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে ।
তাকে দেখে আমার একবারো মনে হয়নি
সে পরিশ্রান্ত কিংবা ক্লান্ত ।
সে তার দায়িত্বে নিষ্ঠাবান ।


তাকে দেখে আমার একবার মনে হল,
তাকে দু-হাতে কোলে তুলে নিয়ে
আদর করি নিজের ইচ্ছে মত ।
এক পা এগোতেই আমার মনে হল
বালকটি হয়ত আমার আদরে বিরক্ত হবে ।
কেননা সে তার দায়িত্বে বদ্ধপরিকর ।
তার এখন একটাই লক্ষ্য...


বালকটির জন্য আমার অনুশোচনা হয়নি
তবে তার নীরব চলন আমায় নাড়া দিল।
হয়ত যখন সে সারা গায়ে রোদ মেখে
তার বাবার সামনে গিয়ে দাড়াবে
তার বাবা ধান ক্ষেত থেকে উঠে এসে
কাদা মাখা হাত নিজের শরীরে মুছে
তার সন্তান কে কোলে তুলে নেবে
এক গাল ভরা মূল্যহীন হাসিতে ।


কাদা মাখা পরিশ্রান্ত শরীর আবার সতেজ হয়ে উঠবে ।
বাবা-ছেলে মিলে মুখে তুলে নেবে খাবার ।
আবার ফলবে ফসল স্নেহ ভরা আদরে ।
বেঁচে উঠবে এ গ্রাম..!!
তার উপরেই ভর করে বাঁচবে
অট্টালিকাময় এ নারকীয় শহর ।