এই মেয়ে এদিকে শোন, বল না তোর নাম কি ?
- বলব না, নাম জেনে তোমার কাজ কি?
ওরে বাব্বা, এইটুকু মেয়ে, মুখে এত বড় বড় কথা ?
- কেউ কি জানতে চায় আমার মনের ব্যথা।
তাই বুঝি ? এখনই তোর মনে ব্যথা, কি বলছিস কি তুই ?
- কেন ওটা কি শুধু বড়দের, ছোটোদের কি তা নেই।
আচ্ছা, আচ্ছা শুনছি তা, তবে আগে বল তোকে কি নামে ডাকি ?
- ঠাম্মা রেখেছে ভালো এক নাম, ডাকতে পারো পিঙ্কি।


বা বা, নামটা তো বেশ ভাল, তা কোন ক্লাসে পড়িস ?
- এই তো ফাইভ পাস করে এখন সবে আমি ক্লাস সিক্স।
আছা বল এবারে, এখন কোন স্কুলে পরিস তুই ?
- সেতো শহরের এক নামকরা স্কুল, কাছেই দেখা যায় ওই।
আমার মেয়েওতো সেখানেই পড়ে, নাম সহেলী, তুই কি তাকে চিনিস ?
- হ্যাঁ চিনিতো, তবে এখন সবার সাথে আড়ি, তাই বন্ধুত্ত্বও ফিনিশ।
আচ্ছা আচ্ছা, এবার তো বল, কেন সবার সাথেই তোর আড়ি ?
- কেউ শোনে না আমার কথা, শুধু বলে যা, যা তুই বাড়ি।


আচ্ছা আছা শুনব তা, আগে বল স্কুলে আসা যাওয়া হয় কিসে ?
- ওই যে দেখছ দাঁড়িয়ে আছে, ওই বড় লাল সাদা বাসে।
তা বল এবারে কি হয়েছে, পড়াশুনা কি ভালো লাগে না আর ?
- না না সেটা ভালবাসি, শুধু বাসে আসতে ইচ্ছে করে না আমার।
কেন? বাসে কি হল, কেউ কি কিছু বলেছে, নাকি মেরেছে ?
- না কিছু বলেনি, শুধু আমার কথা শুনে স্কুলসুদ্ধ লোকে হেসেছে।
তা বল তো আমার বাছা এবার, শুনি কি হয়েছে তোর ওই বাসে ?
- বাসের কনডাকটর কাকুটা পচা, অ্মার গা টা শুধু মুখ-হাত দিয়ে ঘষে ।


ওমা কি বলছিস তুই ? স্কুলের ম্যাডামদের সেটা জানাস নি ?
- জানিয়েছিলাম, কিন্তু ম্যাডামরা কেউ শুনেও শুনতে চায় নি।
তোর নিশ্চয়ই ভুল হচ্ছে, ম্যাডামরা বোধ হয় বোঝে নি ...আরেকবার...
- ওরা বলেছে, তোরই সব দোষ, দরকার কি বাসে অত হাসি ও  
   কথা বলবার।  
   মেলা ফ্যাচকাস না আর, আবার বললে দেব নাম কেটে স্কুল  
   থেকে...
   এটুকু বয়সেই পড়াশুনা হবে শেষ, লোকে বলবে ঝুনো হয়েছিস  
   তুই পেকে।
   আর যদি তাও না সয়, তবে গিয়ে বল নিজের বাবা – মাকে ...
   যেন প্রাইভেট গাড়িতে করে পৌঁছে দেয় তাদের আদরের
   খুকুকে।


একি, একি শুনছি? এরা নাকি শহরের এতো নামী-দামী সব স্কুল...
কেন করে না স্বীকার কখনো এরা নিজেদের কোনও ভুল...
যাই হোক, তবে তুই নিশ্চয়ই জানিয়েছিস তোর বাবা-মাকে ?
তারা নিশ্চয়ই শুনবেন কথা, বুঝবেন তাদের আদরের মেয়েকে ।


- আমার বাবা ব্যাবসায়ী লোক, ব্যস্ত মানুষ, কাজের নেই কোনও  
   তার অন্ত...
   মা বলল-বিরক্ত কর নাতো, পড়াশুনা কর, অফিসের পরিশ্রমে      
   আমিও এখন ক্লান্ত।
   এক দিন যায়, দুদিন যায়, বাবার আশায় বসে থাকি আমি...
   একা বেদনায় ডুকরে ডুকরে রাতের আঁধারে কাঁদি আর থামি।


ও বাবা, এত ভয়ানক গল্প, তোর বাবা-মায়েরও সময় নেই বুঝি ?
- জানো ? একা একা সেই উত্তরটাই আমিও মনে মনে খুঁজি...
  সাতদিন পরে বাবার দেখা পেলাম... এক ছুটে কোলে
  ঝাপালাম...
  অবাক হয়ে বাবা জিজ্ঞাসা করল মাকে, কি ব্যাপার ?
  মা বলল- এটা ওর স্কুলে না যাবার চালাকি, ব্যাপারটা নয়
  কোনও হ্যাপার।  


মাও কি হয় নাকি এত আনমনা... আসল কথাটাই তুলল না ?  


- আসল কথা বলি এবারে তোমায়... আমিও ছাড়ার পাত্রী না...
   বাবাকে আমি নিজেই বললাম যাব না স্কুলে আর ওই বাসে,  
   যেতে চাই আমি তোমার আর মায়ের সাথে একসাথে খেলে
   হেসে।
   সব শুনে গম্ভীর মুখে বলল বাবা, আর যেতে হবে না ওই বাসে,
   আমি নতুন বাস ঠিক করে দেবো, পয়লা তারিখ, পরের মাসে।


হায় ভগবান, কি বলছিস?, তোর বাবা- মাও চলল হিসাব কষে...
রোজগারের নেশায় আজ মত্ত সবাই, হায় ! ভুলে যায় নিজ সন্তানকেও শেষে ?


- প্লীস, তুমি একবার বলে দেবে আমার বাবা- মাকে ?
   যেন তারাই শুধু নিয়ে যায় স্কুলে আমাকে।
   আমার ভীষন ভয় হয় এখন ওই বাসের কনডাকটর কাকুটা কে।
   পান চিবিয়ে হাসে, যেন লাল লাল দাঁতে ছিঁড়ে ফেলবে তোমার
   মেয়েকে...
   হ্যাঁ বাবা, ঘুম ভেঙ্গে চেয়ে দেখো আমায়, তোমার আদরের  
   সহেলী কে...।
   আমার খেলা-ধুলা, পুতুল, পড়াশুনা আজ সবই গেছে
   রসাতলে...
   চাও কি তোমার সহেলীও কাল হারিয়ে যাক ওই বিষাক্ত
   কালের অতলে..?


( কবিতাটি একটি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রানিত )