একদিন আসি,
বসেছিল হাসি,
গোটা দুই বুলবুলি,
জুড়ে মোর ঘরের ঘুলঘুলি ।
দোঁহাতে দেখি কী অফুরান প্রেম ,
ডানাতে জড়ায়ে ডানা, যেন রাধা-শ্যাম।
একজন করে যদি মধুর গায়ন,
আর জন করে যেন পাখায় বাদন ।
দিনভর কলতানে মুখর দু’জন,
আমিও ছিলাম তাহা শুনিতে মগন ।
এমনি কাটিতেছিল সোনামোড়া দিন,
বুলবুলি জোড়া ছিল স্বপ্নে রঙিন ।
একদিন শুনি ভীষণ অস্থির কূজন,
পাখিদের কি যে হল, শঙ্কা ভরে মন !
গিয়ে দেখি উঁকি দিয়ে ঘুলঘুলি খানা,
একজন বেড়ে তারা হয়েছে তিনজনা ।
অমন চাঁদের আলো দেখিনি বহুদিন ,
ভরিল পরানখানি সুখে অমলিন ।
নীরবে সরিয়া আসি সহাস্য মুখে,
পাছে না ধরা পড়ি পাখিদের চোখে ।
দিনে দিনে ওঠে বেড়ে পাখির ছানা,
ভাবি মনে আরেকবার দেখি মুখখানা ।
দিন কয় গেল কাটি এমনি করিয়া,
পাখিদের গল্প কিছু কেবল শুনিয়া ।
ছানাটি যখন হল আরেকটু বড়
একদিন হল তারা জানালায় জড়ো ।
ছানাটিরে দেখিলাম বহুদিন পর,
তাহার দারুণ রঙে ভরিল অন্তর ।
ঝুঁটিতে বাঁধিয়া তারা রঙিন পালক,
এদিকে চাইল যেন শুধু এক ঝলক ।
লোভ হল, কাছে গিয়ে ভাল করে দেখি,
টিপিয়া টিপিয়া  তাই মেঝেতে পা রাখি ।
যেইক্ষণে আসিলাম জানালার পারে,
অমনি ফুড়ুৎ করি গেল তারা উড়ে ।
হঠাতই বুকের ‘পরে বিঁধিল যে খাঁড়া,
মনে হল আমারই কেউ হল ঘর ছাড়া ।
ভাবিলাম ফিরিবে তারা সাঁঝের কালে,
খুঁজি তাই বারবার জানালার আলে ।
দিন যায়, রাত যায় পাখির দেখা নাই,
কোথায় যে গেল চলি কাহারে শুধাই ।
সেই হতে শূন্য হল ঘুলঘুলি মোর
থামিল পাখির গান, যত মধু শোর ।
ভাবিয়া পাইনা তারা কেন যে  আসিল,
কেন যে মায়ার জালে অযথা বাঁধিল ।
হয়তো এমনি করি ছিঁড়ি সব জাল,
ঘরেরে জানাব বিদায় আমিও এক কাল ।