অষ্টাদশীর প্রথম প্রেমের গোলাপ এসেছে ঘরে
জানালায় রাখা মরা ফুলদানি যেন জীবন পেয়েছে ফিরে ।
সারাদিন আজ কেটেছে মেয়ের গোলাপের মুখ চেয়ে,
কবিতার বই ঝাঁপি ছিল খুলে, পড়েনি চোখ তাতে গিয়ে ।
ঘুলঘুলিতে দেয়া বাতাসের শিসে উদাস হয়েছে মন,
দুলেছে সে খোলা কপাটের মত হাওয়ায় সারাক্ষণ ।
কোন দিকে বেলা পড়েছে ঢলে সায়ন্তনের কোলে,
জানতে পারেনি অষ্টাদশী, নিজেতেই ছিল ভুলে ।
লাল নীল মেঘে বিকেলের রঙে লেগেছে আবেশ চোখে
ক্ষণিকেই সে হারাল নিজেকে রঙিন স্বপ্নলোকে ।
                                                                                                                                          
কালবোশেখীর বাতাসে হঠাৎ বিকেল হারাল ভরসা
নহবত তার ডেকেছে যেন সন্ধ্যা-ঝড়ের জলসা ।
টেবিলেতে খোলা বইয়ের পাতা ত্রিতালের ঠেকা দিয়ে
করেছে শুরু আলাপ এবার বিলম্বিতের লয়ে ।
জং ধরা গায়ে কপাটেরা বাজায় একটানা এস্রাজ
কখনো বেহাগ, কখনোবা দেয় মৃদু পূরবীর কাজ ।
ঘুলঘুলির ঠোঁটে চুমু খেয়ে যায়, বাতাসেরা রাশি রাশি,
পণ করেছে, মানাবে হার চৌরাশিয়ার বাঁশি ।
গোলাপদানির দেহ থরথর আকুল করা সে’ সুরে
ঘুঙুর হয়ে হারালো নিজেকে পাথুরে মেঝের প’রে।
গোলাপের ব্যথা বাজল বুকে, অষ্টাদশী ছুটে যায়,
কাঁচের কাঁটা আঁকল আলতা তার দু’খানি পা’য়।
জ্বললো বিজলী টিকলি হয়ে মেঘের কালো সিঁথিতে
সেই আলোতে দেখলো মেয়ে মিশেছে গোলাপে-শোণিতে ।
                                                                                                                                          
তন্দ্রা ভরা দু’চোখে দেখে সম্বিত ফিরে সহসা,
কোথায় গিয়েছে সন্ধ্যার ঝড়, কোথায় উধাও জলসা।
হারানোর ভয় বুকে নিয়ে সে জানালায় ফিরে দেখে,
প্রাণের গোলাপ তেমনি আছে ফুলদানিরই বুকে ।