আলোচনা ১৬
কবিতাটি পড়েছিলাম শিরোনাম এর কারনে আবার আলোচনাও করছি শিরোনাম এর কারনে, কিন্তু কারন দুটো ভিন্ন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ডিভাইস নিয়ে কবিতার শিরোনাম হতে পারে, একেবারেই ধারনার বাইরে ছিল, তাই আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম। আলোচনা করছি, একটা কনফিউশন থেকে।
এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের কারওয়ান বাজারের পাশে রেল লাইনের পাশের বস্তিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামুলকভাবে মোহাম্মদপুর এলাকার বস্তিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এর তুলনায় অনেক বেশী। কিন্তু দুটো বস্তির আর্থ-সামাজিক অবস্থা মোটামুটি একই রকম, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় একই, সক্ষম দম্পতির সংখ্যাও প্রায় একই। সকল পরিমাপক দুটো বস্তির ক্ষেত্রে একই, কেবল একটি ছাড়া, রেল লাইন। কারওয়ান বাজারের পাশ দিয়ে যে রেল লাইন গেছে সেখান দিয়ে রাত ৩ টায় এবং ভোর ৫ টায় দু দুবার ট্রেন যাতায়াত করে, কিন্তু মোহাম্মদপুর বস্তির ক্ষেত্রে এমন কোন ঘটনা নেই। সব তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকবৃন্দ শেষে পরামর্শ দিলেন, ট্রেন যাতায়াতের টাইম শিডিউল পরিবর্তন করতে পারলেই সেখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, অন্যথায় নয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি কিংবা নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে ডিভাইস এর ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু একমাত্র নয় এমনকি প্রধানও নয়। রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক কারন সহ নানাবিধ কারন জড়িত।
কবিতার শিরোনাম যদি পুরো বক্তব্যকে ধারণ করতে পারে তাহলে যথার্থ হয়, অন্যথায় মূল বক্তব্যকে ধারন করাটা জরুরী। কবি পি এম জাহিদ তার কাব্য ‘কনডম আর মায়াবড়ি হারাম” এ অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে এসেছেন-
• ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অনুমতি দেয় কিনা?
• ধর্মের নামে ফতয়াবাজি, কতটুকু গ্রহণযোগ্য ?
• জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করলেই কি সব সমস্যার সমাধান?
জনসংখ্যা নিয়ে নানা জনে নানামত, সবারই অকাট্য যুক্তি, তথ্য ও তাত্ত্বিক ভিত্তি আছে, আছে উদাহরণ দেয়ার মত নানা উপকরণ।
• একদল বলছেন, বাংলাদেশে অধিক জনসংখ্যাই মূল সমস্যা, মাথা পিছু আয়, মাথা পিছু চিকিৎসকের সংখ্যা ইত্যাদি তথ্য দিয়ে প্রমাণও করতে পারেন।
• অন্যদল বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা এবং সরকার পরিচালনায় কেন্দ্রিয় মনোভাবই মূল সমস্যা। জনসংখ্যা কোন সমস্যাই না বরং ‘পপুলেশন বোনাস’ এর কারনে বাংলাদেশ খুব ভাল অবস্থানে আছে। আগামী ১৫-২০ বছর পপুলেশন বোনাস সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে অধিক জনসংখ্যাই বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হবে। (আমি এ স্কুলে বিশ্বাসী)
এদিকে কবি, অধিক সন্তান জন্মদানকে তিরস্কার করেছেন (আবির্ভাবের মহাখুশিতেই আত্মহারা, যতসব অপদার্থের দল), সন্তান জন্মদানের আগে ভাবা উচিৎ, সন্তানের ভবিষ্যৎ, শিক্ষা, চিকিৎসা, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য ইত্যাদি। শুধু ফুটবল দলের মত সংখ্যা বাড়ানো কোন কাজের কাজ নয় (দেখনা মায়ের স্বাস্থ্য, করেনা শিক্ষার প্রসার, নেই সঞ্চয়ের ধারা, সন্তানের ভবিষ্যৎ) ।
আবার, সংসারের দায়িত্ব রেখে শুধু ধর্ম পালন কবির কাছে ভাল কাজ মনে হয়নি, ধর্মের নামে অধর্মীয় কাজকেও ঘৃণা করেছেন (সংসার রেখে হয়েছে ধর্ম যাজক, ইসলাম তিরস্কার জানায় ওদের), ভবিষ্যৎ চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু শুধু নামাজ কালাম নিয়ে থাকলে উপর থেকে কোনদিন সুখ বৃষ্টির মত ঝরে ঝরে পড়বে না, পরকাল ভাবনা ছাড়াও ইহকাল নিয়েও ভাবতে হবে (বাতায়নের ধারে বসে ভাবছে পরকালের কথা, তবুও ফজর ওয়াক্তে নির্দিধায় করে আরাম,মাথাপিছু নেই এক শতাংশ জমি, তবু বলে বেড়ায়, কনডম আর মায়াবড়ি হারাম)।
কবিতার মূল বক্তব্য হল, ধর্মের নামে ইহকাল বাদ দিয়ে, ধর্মের দোহাই দিয়ে শুধু ফতোয়া দিলে জন্সংখ্যার ভারে ন্যুজ হয়ে পড়বে এদেশ।
কবির জন্য শুভেচ্ছা রইলো , খুব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কবিতার মাধ্যমে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য। ভাল থাকবেন।