আলোচনা ১৪


শ্রম শোষণের ইতিহাস হাজার বছরের। সমাজ বিবর্তনের ইতিহাসে, সাম্যবাদ থেকে পুঁজিবাদ মাঝে নানা বিবর্তন কিন্তু শ্রম শোষণের ধারাবাহিকতা আজও প্রবাহমান। কবি কবির সরদার তার ‘কিষাণির দহন’ কাব্যে আবারো একেছেন শোষণের নির্মম চিত্র,  কিষান-কৃষাণির অন্তরজ্বালা।


কেবল একজন কৃষকই জানেন, ফসল ফলানোর কষ্ট কত!!!শুস্ক জমিকে শাসন করে তার বুক চিরে ফসল তোলা, হালের বলদকে বাঁচিয়ে রেখে তার শ্রমে সোনা ফলা, তপ্ত রোদে নিজের ফোসকা উপেক্ষা করা আর নির্ঘুম রাতের পাহারায় অবশেষে মুঠো ভরে সোনা তোলা, দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমা কেবল একজন কর্ষক অনুভূতিতে অনুভব করতে পারেন। ফসলের গায়ে কৃষকের ঘামের সোঁদা গন্ধ, শ্রমের প্রশান্তি আর তৃপ্তির হাসি মিশ্রিত থাকে। কৃষক বছর ব্যাপি  বিধাতার কাছে প্রার্থনা করে ফসল ভিক্ষে আনেন আবার নানা উৎসবের মাধ্যমে বিধাতার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।  ফসলের সাথে কৃষকের থাকে আত্মার যোগাযোগ, প্রানের নিবিড় সম্পর্ক। কিন্তু ফসল ভোগবাদের কাছে এসবের কোন মুল্য নেই। ভোগবাদী মানুষ কেবল ভোগ করতে জানে,  প্রানের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক বোঝে না।


আবার মাঠ থেকে ফসল উঠানো পরবর্তী কাজে কিষাণির ভুমিকা থাকে বেশী।  কিষাণি ফসল উঠানো চৈত্রের প্রখর রোদে, উঠানেতে বসে, নাওয়া খাওয়া ছেড়ে শেষ বলটুকু দিয়ে ফসলের দানা আহরণ করে যত্ন সহকারে রাখে গোলায় ভরে। প্রতিনিয়ত ফসলের দানার সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। নিজের সন্তানের মতই পরম মমতায় আর যত্নে কিষাণি ফসলের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।  কিন্তু জীবনের এক নির্মম পরিহাসে কৃষক-কিষাণি কেউই পুরোটা ভোগ করে না। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে তুলে দেন মহাজনের কাছে।


এতদিনের পরম যত্নে ঘরে তোলা ফসলের দানা অন্যের কাছে তুলে দেয়ার যে কষ্ট, বেদনা সেখানেই কবি ‘দহন’ দেখতে পেয়েছেন, সেখানেই কবির মন কেঁদে উঠেছে। তার উপর, দরিদ্র কিষান-কিষাণি মহাজনের কাছে ফসল ফলাতে অগ্রিম টাকা নিয়েছেন ফলে ফসল বিক্রির টাকাও পুরোটা পাবে না। তার এতদিনের ঘামের ফসল বেশীর ভাগ যাবে মহাজনের ঘরে।


তপ্ত আগুনে আর উপর্যুপরি দহনে, কিষান-কিষাণির হৃদয় ক্ষত বিক্ষত, সে ক্ষত পুজিবাদের ঔষধে জ্বলে বার বার, বছর বছর। মহাজন টাকার বিনিময়ে ফলস কিনে, মাসল দেখিয়ে উল্লাস করে, বাহাদুরি দেখিয়ে চলে আর কিষান-কিষাণি আবারো জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়।


কিষান-কিষাণির প্রতিনিয়ত দহন, জ্বালা-যন্ত্রণা, ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় কবি অনুভব করেন তার কাব্য ‘কিষাণির দহন’এ।অসাধারন এক শ্রম শোষণের, দহনের চিত্র একেছেন। অনেক শুভেচ্ছা রইলো কবির জন্য। ভাল থাকবেন।