আলোচনা ০৯
মানব জীবনের এক চিরন্তন সত্য কথন ফুটে উঠেছে কবি শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান  এর ‘একাকী জীবন’ কাব্যে। খুব যত্ন করে, মনের আবেগ মিশিয়ে আর অভিজ্ঞতার মিশ্রনে একাকী জীবনের চিত্রায়ন করেছেন। প্রকৃতির নিয়মে মানব জীবন নানা পর্বে বিভক্ত থাকে, তাৎক্ষনিক ভাবে আমরা ভাল-মন্দ বিচার করে থাকি যখন যে অবস্থায় থাকি কিন্তু প্রকৃতির সামগ্রিক বিবেচনা থাকে বলেই মানব জীবনকে নানা বৈচিত্র্য দিয়ে সাজিয়ে রাখে। সে জীবনে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত থাকে আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, সুখ-দুখ, দহন-বর্জন তেমনি আবার চরম ব্যস্ততা এবং একাকী জীবন। সবই থাকে জীবনের প্রয়োজনে আর প্রকৃতির আয়োজনে।


জীবনকে সার্বিক ভাবে দেখতে পারি না কিংবা চাই না বলে, আংশিক ভাবে দেখি এবং কোন কোন অংশ নিয়ে খুব ব্যথিত হয়ে পরি। একাকী জীবনের যেমন কষ্ট আছে তেমনি কিছুটা আনন্দও আছে যদি নেয়া যায়, জীবনকে ফিরে ফিরে দেখার আনন্দ, বার বার সময় নিয়ে দেখার আনন্দ। বর্তমানে বসে ভবিষ্যৎকে কল্পনা করে আমারা যেমন আনন্দ পাই তেমনি বর্তমানে বসে অতীতকে চিড়ে দেখার ভিন্ন রকম আনন্দ আছে যেখানে হারাবার কোন ভয় থাকে না। আমারা নানাভাবে, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ‘একাকী জীবনকে’ কেবল কষ্টের, কেবল দহনের বলেই ভাবতে শিখেছি, বলা যায় শেখানো হয়েছে নানা ভাবে, কবিতায় উপন্যাসে গল্পে কিংবা চলচিত্রে। আলোচ্য কবিতাতেও কবি একাকী জীবনের দহনের চিত্রায়ন করেছেন কিন্তু অপর পৃষ্ঠা বাকী থেকে গেছে। তবে এটা নিরেট সত্য একাকী জীবনে কষ্টের মাত্রা একটু বেশীই থাকে।


একাকী জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্ট সারাজীবন ধরে সবার মঙ্গলের অন্য ব্যস্ত থাকলেও  দিনশেষে নিজের প্রয়োজনের সময় আর কাউকেই সামনে পাওয়া যায় না যার সাথে মনের কথা শেয়ার করা যায়। সারা জীবনের স্বপ্ন, সফলতা, স্বপ্ন ভঙ্গের বিফলতা কোন কিছুই শেয়ার করার জন্য কাউকে পাওয়া না।


সাধারণত আমরা ধরে নেই ‘একাকী মানেই’, জীবনের শেষ পর্ব ফলে তেমন আর কিই বা থাকে বলার কিন্তু জীবনের মধ্যগগনেও একাকী হতে পারে, হতে পারে যুব বয়সের একাকীত্ব যখন আশা-নিরাশার দোলায় দুলতে থাকে জীবন, যখন শেয়ার করার অন্য খুব বেশী প্রয়োজন কাউকে, তখনকার একাকী জীবন আরও কষ্টের। একেক সময়ের ‘একাকী জীবন’ একেক রকম। কিন্তু ‘’কেউ খোঁজ রাখে না’ই একমাত্র মৌলিক সকল রকম একাকী জীবনের।  


একাকী জীবনের কিছু কষ্টের নমুনা কবি একেছেন যা পাঠকের মনকে ছুঁয়ে যায় বারবার (কিছু দুঃখ প‌কে‌টে ভ‌রে নীর‌বে ঘ‌রে ফেরা), পাঠক একাকী জীবনে অবস্থান না করেও অনুভব করতে পারেন একাকিত্তের বেদনা (কেউ রা‌খে না কা‌রো ‌খোঁজ, এইত সবার একাকী জীবন), দিনের আলোর মতই দেখতে পারেন একাকী মানুষের নিত্য দিনের যন্ত্রণা (কত কত দুঃখ ঘাম ঝ‌রি‌য়ে কতজন কতভা‌বে, ‌নি‌জে‌কে বিলা‌য়ে জগত সংসা‌রে) আবার নিজের জীবনের মতই আয়নায় দেখেন একাকী মানুষের থাকা হাসি কান্না (দৌঁড়া‌তে শেখায়, রোজ আমরা দৌঁড়াই এইভা‌বে হাসি আর কান্নায়।)।


কবির জন্য শুভেচ্ছা রইলো, চমৎকার এক কাব্য ‘একাকী জীবন’ উপহার দেয়ার জন্য। আরও একটি চমৎকার কাব্যের অপেক্ষায় থাকলাম আমরা সবাই আসরের পাঠক। ভাল থাকবেন।