আলোচনা ৪৯


গতকালই একটি ট্রেনিং সেসন ফ্যাসিলিটেট করছিলাম, আন্তঃ ব্যক্তিক যোগাযোগ এর উপর। সেখানে আলোচনা করলাম Intra Personal Communication এবং Inter Personal Communication (IPC) এর উপর। আলোচনার এক পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের Intra Personal Communication বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। নিজের সাথে নিজের কিভাবে যোগাযোগ হয় কিংবা নিজের সাথে কেন নিজের যোগাযোগ করতে হয়। তখন কি জানতাম যে আজই এরকম একটি কবিতার উপর আলোচনা লিখতে বসবো। কবিতাটি সংগ্রহে রাখলাম, আবার যদি ট্রেনিং সেসন ফ্যাসিলিটেট করতে হয় তখন খুব কাজে লাগবে।


মুলত দুটো কারনে নিজের সাথে নিজের যোগাযোগ করতে হয়, প্রথমত- নিজের জানা বোঝাগুলো অন্যের সাথে আলোচনা করার আগে নিজের সাথেই যাচাই করে নেয়া, ভুল ভ্রান্তিগুলো শুধরে নেয়া কিংবা বোঝাপড়াটা ঠিক করে নেয়া আর দ্বিতীয়ত- অন্যের সাথে কিংবা পরিবেশের সাথে যখন নিজের ম্যাচ হয় না তখন গ্রিভেন্স ভেন্তিলেট করার জন্য।  মানুষ নিজের সাথেই সবার আগে যোগাযোগ করে। জেনে কিংবা না জেনে, বুঝে কিংবা না বুঝে, কোন না কোন ভাবে মানুষ নিজের সাথেই সবার আগে যোগাযোগ করে। কবি সুবীর সে্নগুপ্ত চমৎকার একটি   theoretical framework  দিয়ে ‘নিজের সঙ্গে’ কাব্যে Intra Personal Communication উপস্থাপন করেছেন।  খুব সাধারণভাবে এমন একটি কঠিন তাত্ত্বিক আলোচনা করা যায় তা শেখা হল আমার।


কবি নিজের সাথে নিজের যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা দিয়ে শুরু করেছেন তার কবিতা, “নিজের সঙ্গে কথাগুলো সব, যত রকমের ভাবনা আসে আর যায়, যায় আর আসে, কত তো মনেও থাকে না। নিজের সঙ্গে কথা না বলে কি একটাও দিন যায়! নিজের সঙ্গে কথা বলেই তো নিতে পারা যায় নির্ণয়| নিজের সঙ্গে সব কথা গুলো, থাকে না কারোর অধীনে, উল্টো পাল্টা যা খুশী বলো না, থাকবে মনের গহীনে”|


একজন লেখক কিংবা কবি, নিজের সাথে সবচেয়ে বেশী কথা বলে, নিজের সাথে ঝগড়া করে, নিজের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে আবার নিজের সাথেই সবচেয়ে বেশি সখ্যতা গড়ে তোলে। মনের কথাগুলো নিজের সাথেই শেয়ার করে।  সাধারনভাবে মানুষের সবচেয়ে আপন সঙ্গী সে নিজে, নিজের সাথে কথা বলতেই মানুষ সবচেয়ে বেশী পছন্দ করে।  নিজের উপরই সবচেয়ে বেশী আস্থা, সবচেয়ে বেশী ভরসা। তাই কবি শেষ করেছেন- “কথা থাকবেই নিজের সঙ্গে, তাই তো জীবন চলে, নইলে তো, কেটে যেত সব তাল, “জীবন ছুটত বেতালে|


নিজের সাথে নিজের কথা বলা, বিষয়টি বোঝা খুব সহজ বিষয় না। সাধারনভাবে মানুষ নিজের সাথে কথা বলাকে ‘পাগল’বলে আখ্যায়িত করে, কিন্তু পাগল আর আমাদের আলোচ্য বিষয় ‘নিজের সাথে কথা বলা’ এক বিষয় নয়, কবি সেটা খুব পরিস্কার করেছেন। কবির জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো।