বিশ্লেষণ -৩৮


কথায় বলে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবীও না, অর্থাৎ কোন কাজ করার আগেই তার ভাল মন্দ সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ ভাবা উচিত। কাজ শেষ হয়ে গেলে তার নেগেটিভ ফলাফল সম্পর্কে ভাবার কোন মানে নেই, তার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করারও কোন মানে নেই। কিন্তু মানব চরিত্র এই ভুলটিই করে বারবার। দিন শেষে প্রায়শ্চিত্ত করে, অনুতপ্ত হয় কিন্তু সময়ে সচেতন হয় না। কবি এম এ সালাম তার কাব্য ‘রিপুর তাড়নায়’ সে কথাই তুলে ধরেছেন যা সচেতনতাসৃষ্টি মুলক কবিতায়।


আমাদের প্রভু, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষ সৃষ্টি করে ধরায় পাঠিয়েছেন, সাথে দিয়েছেন কতগুলো রিপু (অনুভুতি) এবং ভাল মন্দ বিচার করার ক্ষমতা। মানুষ ক্রমাগত নানা রিপু দ্বারা তাড়িত হবে আবার নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে এমনটাই ছিল সৃষ্টির ভাবনা। মানুষ তার স্রষ্টার প্রতি অনুগত থাকবে, ক্রমাগত তার কৃপা প্রার্থনার মাধ্যমে আলোকিত থাকবে এবং সর্বোপরি ধরার সকল কাজের মধ্যে নিয়োজিত থেকেই সঠিক পথ নির্ধারণে সক্ষম হবে।


কিন্তু পুরো কবিতাটি মুলত রিপুর তাড়নায় তাড়িত হয়ে নানা রকম ভুল করে, জীবন শেষে প্রায়শ্চিত্ত করে পেছনের ভুল গুলো মনে করে। নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক, একে অপরের আবেগ উপভোগের মাধ্যমেই মানব জীবন পরিচালিত হবে সেটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কিন্তু পুরুষ, নারীর রূপে মোহে আপ্লুত হয়ে ভুলে যায় স্রষ্টার অপার মহিমা, নারী ভোগে লিপ্ত থেকে ভুলে যায় স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে। আবার পৃথিবীর নানা আকর্ষণে, নানা ভোগে লিপ্ত থেকে, মানুষ ভোগবাদী মানুসিকতা থেকে বের হতে পারে না। মুলত পেট এবং সেক্স (অর্থাৎ খাদ্য ভোগ এবং তার জন্য সম্পদ আহরণ, অন্যদিকে নারী সঙ্গ উপভোগ এবং তাকে কেন্দ্র করেই সমস্ত কার্যক্রমের জাল বিস্তার) এ দুটো ইন্দ্রিয় অনুভূতির কারণেই পৃথিবী ঘুরছে, মানুষ এ ঘূর্ণন চক্রেই আবর্তিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।


মানুষ সারাজীবন নানা রিপু দ্বারা জীবন পরিচালিত করে, কিন্তু জীবন প্রদীপ যখন শেষের পথে তখন তার পেছনের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়, স্রষ্টার কাছে মাফ চায়, ক্ষমা চায়, কৃপা প্রার্থনা করে, অনুতপ্ত হয়, অনুশোচনায় নুয়ে পরে, কবি সেটাই কবিতার ভাষায় লিখেছেন-“হেলায় হেলায় বেলা গেল, জীবন প্রদীপ নিভু নিভু, রাগ করিয়া দয়ার প্রভু, ভুলিয়া যেওনা কভু। মাফ করিয়া দাওনা প্রভু, তোমার দয়ার গুনে, ভবি জীবনে ভুল করিবনা, আমি জেনে শুনে”।
একটি অনুশচনা, অনুতপ্ত এবং আত্ম সচেতনতা মুলক কবিতা উপহার দেয়ার জন্য কবির জন্য রইলো অশেষ শুভেচ্ছা।