আলোচনা ১১


জীবনের খুব সাধারন দুটো অনুসঙ্গ ‘সুখ এবং দুঃখ’ নিয়েই কাব্য।  নিরবিচ্ছিন সুখ কিংবা নিরবিচ্ছিন্ন দুঃখের কোন অস্তিত্ব পৃথিবীতে কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি। আগে কিংবা পরে দুটোর’ই অস্তিত্ব আছে আমাদের জীবনে। আবার ‘সুখ’ এবং ‘দুঃখ’ প্রত্যয় দুটোকে কে কিভাবে অনুভব করি, তাও নির্ভর করে একেক জনের দৃষ্টিভঙ্গির উপর। বস্তুগত চাওয়া পাওয়ার ব্যবধান অনেক সময়ই সুখ কিংবা দুঃখকে নির্ধারণ করে আবার আধ্যাত্মিক  বিবেচনায়, বস্তুগত চাওয়া পাওয়াকে কেন্দ্র করে সুখ কিংবা দুঃখের পরিমাপ করা যায় না। ফলে এ প্রত্যয় দুটোকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের স্কুল অফ থট (School to Thought) তৈরি হয়েছে।


• সুখ কিংবা দুঃখ আসলেই বস্তুগত চাওয়া-পাওয়া এবং ব্যবধানের উপর নির্ভর করে
• প্রত্যয় দুটো দৃষ্টিভঙ্গি (perception) এবং সন্তুষ্টি (satisfaction) এর সাথে
    সম্পর্কিত
• ইহকাল এবং পরকাল সম্পর্কে ব্যক্তির ধারনা এবং বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত


কবি এমকে চৌধুরী রানা তার কাব্য ‘সুখ যখন কষ্ট’ রচনা করেছেন মুলত প্রথম School to Thought দিয়ে অর্থাৎ বস্তগত ভাবনা দ্বারা তাড়িত হয়ে সুখ দুঃখের চিত্র অংকন করেছেন। কেই কেউ কষ্টের সাগর পাড়ি দিয়ে, অভাবের মধ্য দিয়ে যাপিত জীবন পার করে যখন সুখের সময় অতিবাহিত করে ঠিক তখন পেছনের স্মৃতি মনে করে কষ্টে ভুগেন আবার কেউ কেউ তার উল্টোটা করেন,  পেছনের স্মৃতি মনে করে তখনকার কষ্টগুলোকে সুখানুভূতিতে পরিনত করেন। কবি প্রথম পথটি ধরেছেন, বর্তমানে যতই সুখ থাক, পেছনের স্মৃতিতে থাকা কষ্টগুলোকে ভুলতে পারছেন না ফলে সুখের মধ্যেও কষ্ট অনুভব করছেন, তাই কবিতার শিরোনাম হয়েছে ‘সুখ যখন কষ্ট’ কিন্তু যারা দ্বিতীয় পথে যাবেন তারা হয়তো লিখবেন ‘কষ্ট যখন সুখ’ এর কাব্য। একেক জনের ভাবনা একেক রকম হবে, এটাই স্বাভাবিক।


উপরের আলোচিত theoretical framework থেকে কবি তার পেছনে ফেলে আসা কষ্টের যাপিত জীবনকে বর্ণনা করেছেন গভীর বেদনার সাথে, “ বর্গা চাষার ছেলে আমি, ভেন্না পাতার চাউনি ঘরে; ছেঁড়া চটে শয়ন মোদের,সুখের নিদ্রা নয়ন ভরে’। যদিও খাবার দাবার কিংবা বাসস্থানের কষ্ট ছিল কিন্তু সুখের নিদ্রা দিতে পারতেন। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন রাতের ঘুম কেড়ে নিত না।  পরে আরও বর্ণনা দিয়েছেন খাদ্যভাবের, ‘পান্তা জলে পোড়া মরিচ,সকালে খাই পেট ভরে;লাল শাকে ভাত লাল করে,আহ্লাদে খাই দ্বিপ্রহরে”।


নিদারুন কষ্টের ভেতর দিয়ে জীবন এগিয়ে নিয়েছেন, ধৈর্য ধরে এগিয়ে গিয়ে জীবনের পট পরিবর্তন করেছেন, কিন্তু পেছনে ফেলে আসা কষ্টের ক্ষত ভুলতে পারেননি, পেছন ফিরে তাকিয়ে বারবার তখনকার কষ্টগুলো ভেবে এখনকার সুখের বিপরীতে একধরনের কষ্ট অনুভব করছেন। ইচ্ছে করলেই তখনকার কষ্টগুলোকে এখনকার সুখে পরিণত করতে পারতেন যদি দৃষ্টিভঙ্গি একটু পাল্টাতে পারতেন।


খুব সাধারণ এক বক্তব্য নিয়েই কবিতা কিন্তু প্রত্যেকের জীবনের গল্পগুলো তার অনুভুতিতেই পাঠককে অনুভব করাতে চান, কবি সে চেষ্টাই করেছেন।
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।