আলোচনা  ১৪৫


কিছুদিন আগে স্ট্রিট চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলাম। স্ট্রিট টি স্টিল আমার পছন্দের জায়গা। এখানে কতো রকমের গল্প হয়, আলোচনা হয়, বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনা করেন, আলোচনায় অংশগ্রহন করেন। আমার কাছে একটা গবেষনাগার মনে হয়। সেদিন, চায়ের দোকানের, দুজন মধ্য বয়সী লোক গল্প করছিলেন, কোন একটা বিষয়ের প্রেক্ষিতে, একজন অন্য জনকে বোঝাচ্ছেন-


মনে করেন, আগে এখন আর সামনে,  হলো গিয়া, তিন ভাই, তিন ভাইয়ের মধ্যে যদি ঝগড়া বিবাদ থাকে তাইলে দেখবেন, অন্য একজন হেই সুযোগে নিজের কাজ করে নিবে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সব সময় মিলমিশ থাকতে হয়।  আগের কথাও মনে রাখতে হবে, সামনে কি হবে সেই চিন্তাও রাখতে হবে আবার এখন কিভাবে চলবো সেই বুঝও থাকতে হবে। এইটা না করতে পারলে, জীবন বরবাদ হয়ে যায়। কি অসাধারন অনভুব এবং ব্যাখা!!


সেই একই বিষয় নিয়ে কবি মোহাম্মদ বিন তারেক  লিখেছেন, তার কবিতা “সময়েরা তিন ভাই”। ভাবছিলাম, কিছু কিছু ভাবনা সব শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যেই থাকে কিন্তু তার প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন হয়। কিছু বিষয় থাকে যেগুলো জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন হয়, তার জন্য অনেক বই পড়তে হয় না, দার্শনিক হতে হয় না। জীবন নিজেই সে কথা বলে দেয়।


কবি, এখানে তিনকাল-কে উপস্থাপন করেছেন বেশ মজা করে। আমাদের ছোট বেলায় তিন কালের ইংরেজি (Tense) শিখতে গলদ্ঘর্ম হয়েছিল (past, present, future)। আমার মতো অনেকেরই Tense  শেখা নিয়ে নানা ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে হয়তো । কি কষ্ট করেই না শিখতে হয়েছিল!!! কিন্ত অন্যরা (নিরক্ষর) মানুষেরা তাদের জীবন অভিজ্ঞতা দিয়েই তা শিখে ফেলে এবং সফল প্রয়োগও করতে পারে।


কবিতাটির থীম “সময়”, বিষয়টিই খুব জটিল, ব্যাখা করা যায় বা সঠিক ভাবে। সময়ের সংজ্ঞা কি? সময় নিয়ে নানা বৈজ্ঞানিক থিওরী আছে, ধর্মীয় ব্যাখা আছে আবার কিছু দিন আগে সময়কে নিয়ে বেশ বড় একটা প্রবন্ধও পড়েছিলাম। ফলে, কবিতাটি পড়তে পড়তে বিশ কিছুক্ষন পুরনো ভাবনায় থমকে ছিলাম, থীম অর্থাৎ “সময়’ এর ভাবনায়।


কবি লিখেছেন, “তিন ভাই তিন মুখো”, এর কোন আক্ষরিক অর্থ নেই, সময় তিন মূখো কিভাবে হয়? সময় তো একটি রেখার তিনটি বিন্দু মাত্র, ফলে সময় এক রৈখিক, আবার সময়ের যে ‘বর্তমান”, তার কোন অস্তিত্বই নেই, মুহুর্তের চিন্তা কিংবা ন্যানো সেকেন্ডও অতীত হয়ে যায়। অন্যদিকে ভবিষ্যৎ শুধু কল্পনা মাত্র আর অতীত কিছু ঘটনার স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই না। ফলে সময়কে কেন্দ্র করে যে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত হিসেব করা হয়, তা শুধু হিসেবের সুবিধের জন্য, আদতে সময়ের কিংবা কোন কালেরই দৃশ্যমান কোন অস্তিত্ব নেই, খুব সহজেই এর কোন ব্যাখা নেই।


কবিতাটি পড়তে পড়তে বেশ কিছুক্ষন ভাবনা তৈরী হলো, একেক জন একেকভাবে ভাবতে শুরু করলো, কবিতা যখন মানুষকে ভাবতে শেখায়, তখনই তা সফল হয়।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।