আলোচনা ৫৪


ট্যাক্স নিয়ে দুটো বিপরীত মুখি ভাবনা কাজ করে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। একদল বলে এবং ভাবে, ট্যাক্স প্রদান নাগরিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য, প্রত্যেক নাগরিককেই ট্যাক্স  দিতে হবে। ট্যাক্স ছাড়া সরকার পরিচালনা করা যাবে না, জনগনের জন্য কোন উন্নয়নমূলক কাজও সরকার করতে পারবে না।


অন্যদিকে ট্যাক্স এর প্রয়োজনীয়তা কিংবা নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ না করলেও নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান এবং জনগনের প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অন্য দল। ট্যাক্স জাস্টিস নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেন।  সরকার যখন কোন জবাবদিহি মূলক আচরণের মধ্যে থাকে না তখন জনগনের প্রদেয় ট্যাক্স কোথায় ব্যবহার হয় কিংবা আদৌ ব্যবহার হয় কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। জনগন যখন সরকার থেকে কোন প্রকার সেবাই পায় না, তখনও কি ট্যাক্স দেয়া জনগনের দায়িত্বের অংশ হয় কিনা, সে প্রশ্নও থেকে যায়। আমার নিজের অবস্থান দ্বিতীয় দলের সাথেই।


কবি আর্যতীর্থ তার ‘ট্যাক্স’ কাব্যে চমৎকারভাবে ট্যাক্সের জাঁতাকলে পিষ্ট জনগণের জীবন বর্ণনা করেছেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, দিনের প্রতিটি সেকেন্ড কিভাবে ট্যাক্স প্রদানের সাথে জড়িত, প্রীতিটি নিঃশ্বাসের সাথে ট্যাক্স কিভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তার চিত্রকল্প তুলে ধরেছেন।  আমাদের মত দেশগুলোতে জনগন সকল সেবা প্রাপ্তির জন্য একবার সরকারকে ট্যাক্স দেয় আবার সেই একই সেবা প্রাইভেট সেক্টর থেকে কিনে নেয় যেমন, স্বাস্থ্য সেবা, যানবাহন সেবা ইত্যাদি। ফলে জনগনের  মধ্যে ট্যাক্স ফাকি দেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বিদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে ট্যাক্স ফাকি দেয়ার প্রবণতা খুব একটা দেখা যায় না, তারা নিশিতভাবেই জানে তাদের প্রদেয় ট্যাক্স আবার সেবা আকারে তাদের কাছেই ফিরে আসবে অন্যদিকে আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি, আমাদের প্রদেয় ট্যাক্সের টাকা কারও না কারও পকেটে চলে যাবে, সেই একই সেবা আবার প্রাইভেট সেক্টর থেকে কিনে নিতে হবে। ফলে যত রকম ফাঁকফোকর খুজে ট্যাক্স দেয়া থেকে বিরত থাকার উৎসাহ তৈরি হয়।


সরকার ট্যাক্সের ফাদে ফেলে জনগনের জীবনকে কিভাবে অতিস্ত করে তোলে তার এক চরম সাক্ষী এই কবিতা, কবি লিখেছেন- “ট্যাক্সের বাক্সটি যেন ফাঁকা যায়না, সাবান চিরুনি বা সোনা রূপো গয়না, দিতে হবে সবাইকে সবকিছু কর যে, ট্যাক্স দিও লাভ হলে ট্যাক্স দাও কর্জে”। ট্যাক্স ধার্য করার কত রকম ফন্দি, কত রকমের খাত সরকার তৈরি করে, তার বর্ণনা দিয়েছেন কবি-
“ট্যাক্স আছে জুতো মোজা বিছানা ও বালিশে; ট্যাক্স দাও হাসিমুখে আর বিনা নালিশে। ট্যাক্স দাও জমি জমা, ছোটো বড় বাড়িতে, বাসনে কোসনে ট্যাক্স, সসপ্যানে হাঁড়িতে। ট্যাক্স দাও ইনকামে, ট্যাক্স আছে খরচায়, ব্যাংকে রাখলে জমা, সেখানেও কর চায়। ট্যাক্স দাও ডিপোজিটে, ট্যাক্স বসে শেয়ারে, কাঁচকলা লাভ থাকে ট্যাক্স দিলে এ হারে”।


শুধু তাই না, ট্যাক্সের খাত আরও আছে, ট্যাক্সের পরিধি দিন দিনই বাড়ছে। সরকার জোর জবস্তি জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্সের টাঁকা আদায় করার নামে আসলে চাঁদাবাজি করে।  প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিটি সেকেন্ডে ট্যাক্স দেয়া শুরু হয়, প্রত্যক্ষ ভাবে শেষ হয় ঘুমুতে যাবার পরে কিন্তু আদতে শেষ হয় না, তখনও ট্যাক্স প্রদান চলতেই থাকে।  “ট্যাক্স দাও বাসেট্রামে, পেট্রোলে ডিজেলে, ট্যাক্স দাও ডাল ভাত শাক রুটি যা খেলে। জলে ট্যাক্স স্থলে ট্যাক্স , ট্যাক্স নাকি বাতাসে পকেটের খুচরোতে ট্যাক্স নেওয়া হাত আসে।  ট্যাক্স দাও শুরু করে , ট্যাক্স দিও পৌঁছে, স্বচ্ছতে ট্যাক্স দাও, ট্যাক্স দাও শৌচে। ট্যাক্স আছে উপহারে, ট্যাক্স আছে জমানোয়, যা আছে সব দিও, তার আগে থামা নয়”।

ট্যাক্স থেকে মানুষের কোন মুক্তি নেই। মৃত্যুর পরও মানুষকে ট্যাক্স দিয়ে যেতে হয়, যেমন, কবরের উপর ট্যাক্স । তাই কবি শেষ করেছেন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে, “  যদি ভাবো ট্যাক্স থেকে ছাড় পাবে মরণে, বদল কোরো হে বাপু চিন্তার ধরণে। যা কিছু রেখে গেলে আধুলিটি স্থাবরে, বংশধরেরা ট্যাক্স দেবে তার ওপরে” ।


কবির জন্য রইলো একরাশ শুভেচ্ছা।