যেমনটা লালন বলেছেন  “বাড়ীর পাশে আরশিনগর, সেথা এক পড়শি বসত করে…আমি একদিন ও না দেখিলাম তারে”,  তেমনিভাবে ‘উপলব্ধি’ কাব্য কণিকায় কবি পারমিতা জীবনের গভীর বোধকে তুলে ধরেছেন।  অসাধারন দক্ষতার গুনে মাত্র ৮ লাইনের কাব্যে গভীর এক জীবন বোধকে, এক উপলব্ধিকে তুলে ধরেছেন।


নিজের ভেতর এবং বাইরের সাথে আমাদের প্রতিনিয়তই যুদ্ধ চলে। যা বলতে চাই তা বলতে পারি না, যা করতে চাই তা অনেক সময়ই করতে পারি না, মেনে নিতে চাই না কিন্তু মানতে বাধ্য হই, এ এক অবিরাম যুদ্ধ। এ যুদ্ধের শেষ ঠিকানা নেই, সময় জ্ঞান নেই। প্রতিনিয়ত যুদ্ধে আমরা ক্লান্ত, বিধস্ত হয়ে পরি তারপরও নিস্তার পাই না। ভেতরের মন চালিত হয় নৈতিকতা, আদর্শ, শিক্ষা, মূল্যবোধ আর মানবিকতার ধারালো অস্ত্রে কিন্তু বাইরের মন সব সময় আকর্ষিত হয় ভোগবাদিতা, চাতুরিতা, নৈরাজ্য আর অসংযমী আচরণ দ্বারা। নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ আবার নিজের সাথে পারিপার্শ্বিকতার যুদ্ধ, অশান্ত করে তোলে আমাদের জীবনকে, আমরা স্বস্তি পাই না, শান্তি পাই না, কেবল এক অস্থিরতা সর্বক্ষণ গ্রাস করে আমাদের।


তবে এটা সত্য, সবার এমনটা হয় না, সবাই জীবনকে এত গভীরভাবে উপলব্ধি করে না, তাদের যন্ত্রণা নেই, তাদের যুদ্ধ নেই, তারা কেবল জীবনকে উপভোগের নিমিত্তেই ব্যবহার করে, জীবন তাদের কাছে ‘যখন যেমন তখন তেমন” ধরনের। তারা নিজেকে বাস্তবতায় বিলিয়ে দেয়, উপভোগ করে জীবনের নির্যাস, ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় কিংবা ন্যায্য- অন্যায্য কোন কিছুই বিবেচ্য বিষয় নয় তাদের কাছে।


কবিতায় এক অমীমাংসিত প্রশ্ন এসেছে, আমরা কি তবে তাদের মতই বিলিয়ে দিব নিজেকে? আমারা কি গা ভাসিয়ে দিব, আমারা কি ভেতরের মনকে কবর দিব, নাকি বাইরের মনকে পরাজিত করে ভেতরের মনের জয় যাত্রায় অংশগ্রহণ করবো? পথের নানা শাখা প্রশাখা থাকবে কিন্তু নিজের স্বচ্ছ ধারনা, নিজের প্রতি অবিচল আস্থা, নৈতিকতার শক্ত অবস্থান আমাদের গাইড হিসেবে কাজ করবে। হয়ত নানা প্রতিকূলতার পথ পাড়ি দিতে হবে ‘চিৎ সাঁতার কিংবা ডুব সাঁতারে”, কিন্তু দিন শেষে আমরা পৌঁছাতে পারবো সঠিক গন্তব্যে এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন কবি।


অসাধারণ এক জীবন বোধের কাব্য রচনার জন্য অনেক শুভ কামনা থাকলো কবির জন্য। ভাল থাকবেন