প্রথমবার কবিতাটি পড়ার পর মনে হয়, ‘ভুলের সৃষ্টি’ খুব সাধারন এক শিরোনাম এবং কবিতার বক্তব্যও খুব সাধারন মানের কিন্তু একটু সময় নিয়ে আরও কয়েকবার পড়লে সাধারন শব্দের আড়ালে, সাধারন বক্তব্যের আড়ালে এক সামাজিক ব্যাধিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তা বোঝা যায়। কঠিন কোন শব্দ কিংবা বক্তব্য দেখলে আমার অনেকক্ষণ ভাবি, বোঝার চেষ্টা করি কিন্তু প্রতিদিনের প্রচলিত শব্দ কিংবা কোন বক্তব্য নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবি না কিংবা আলোচনায় থাকতে চাই না। ফলে সহজ সরল ভাবে উপস্থাপিত কোন কবিতা আমাদের আকর্ষিত করে না, আড়ালে থেকে যায় সহজের মধ্যে অনেক কঠিন বক্তব্য। আলোচ্য কবিতাটি অনেকটা সে পর্যায়ের কিন্তু পুরো কবিতাটিই ‘আচরণ বিজ্ঞান’ কে নিয়ে লেখা। সামাজিক আচরণ কিংবা ব্যক্তিক পর্যায়ের আচরণ, আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থা কিংবা ব্যক্তির জীবনকে কিভাবে এবং কতটা অস্থির করে তোলে তার চিত্রায়ন।  কবিতাটি অনেকগুলো বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে।


১। মানুষ ভুল করবে, মানুষের ভুল হবে, সেটাই স্বাভাবিক। ভুল করা মানুষের সহজাত মানবিক গুণাবলির মধ্যে একটি গুন।  কোন যন্ত্র কিংবা রোবট ভুল করে না, আমারা বলি যান্ত্রিক ত্রুটি, আবার অন্য কোন প্রাণীর ভুল নিয়েও আমারা মাথা ঘামাই না।  একমাত্র মানুষ, যার নিজস্ব চিন্তা, চেতনা, ভাবনা, মূল্যবোধ, নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছা আছে। ফলে ভুল করার অধিকার আছে আবার ভুল শুধরে নেবার  সুযোগ আছে।


২। ইচ্ছে করে ভুল করা আবার ভুল করে ভুল করা, দুটোর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও দুটোরই শোধরানোর সুযোগ আছে। প্রথমটি শোধরানো যায় প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে আর দ্বিতীয়টি ক্ষমা প্রাপ্তির মাধ্যমে। কোন ভুলই অনির্দিষ্ট কাল ধরে চলতে পারে না। যে কোন ভুলেরই সমাপ্তি আছে।


৩। মানুষের ‘ভুলগুলোকে’ আমরা কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি তার দিকেই ইঙ্গিত করেছে কবিতাটি। ভুলকে ‘ভুল হিসেবে’ দেখে ক্ষমার দৃষ্টিভঙ্গি, ভুলকে স্বীকার করে শোধরানোর দৃষ্টিভঙ্গি আবার ভুলকে ক্ষমার অযোগ্য ভাবার দৃষ্টিভঙ্গি ।


৪। প্রথম দুটি দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে ইতিবাচক ফলাফল বহন করে কিন্তু শেষ দৃষ্টিভঙ্গিটি সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে, ব্যক্তি জীবনকে বিষিয়ে তোলে।  একটি ভুল আরেকটি ভুল কিংবা অসংখ্য ভুলের জন্ম দেয়।  ব্যক্তি মানুষটি ভুল শোধরানোর সুযোগ না পেয়ে, হীনমন্যতায় ভোগে,  দহন হতে থাকে প্রতিনিয়ত, মুক্তির পথ খুজে পায় না।


৫।  আচরন বিজ্ঞান বলে,  সহনশীলতা, গ্রহনযোগ্যতা, সহানুভূতি ইত্যাদি বিষয়গুলো পারস্পরিক সম্পর্ক গুলোকে টিকিয়ে রাখে, অন্যদিকে অপরাধ বিজ্ঞান বলে, মানুষকে ভুল শোধরানোর সুযোগ না দিলে সে আরও বেশী অপরাধ প্রবন হয়ে উঠে।


ফলে ‘ভুলের সৃষ্টি’ কবিতাটি মূলত সামাজিক বিজ্ঞান, আচরণ বিজ্ঞান এবং অপরাধ বিজ্ঞান এর মুল বক্তব্যকে ধারন করে, সামাজিক আচার আচরণ এবং একটি ভুলকে কেন্দ্র করে ব্যক্তির নিজের জীবনের পরিস্থিতি কে তুলে ধরা হয়েছে।


অনন্যা এক কবিতা উপহার দেয়ার জন্য কবিকে ধন্যবাদ।