আলোচনা ০২
কবির লিখিত কবিতা


মধ্যবিত্তের জীবনে খালি ক্লান্তি ও হতাশা;
ধূসর অন্ধকারে শুধু ডানা ঝাড়ে নিরাশা।
দৃষ্টিতে জেগে ওঠে অলস স্বপ্ন,
নির্জন দ্বীপের মতো শান্ত নিঃসঙ্গ।


মধ্যবিত্ত রক্তের ম্লান জীবনে
কামনাও হয়ে যায় কখনো ক্লান্ত।
দীর্ঘশ্বাস আর টেনশন এর ক্লান্তি,
হোঁচটে ভরা দুর্মুখ ভবিষ্যৎ।


বাংলা পাইট আর সস্তা সিগারেটের ধোয়া,
ক্ষনিকের তরে জাগে মনে আশার ছোয়া।
রক্তকণিকা গুলো যেন শূন্য মরুভূমি,
না সেখানে কোনো ওয়েসিস, না নার্গিস ।


নভেম্বর ৩.২০১৭


শ্রেণী চরিত্রের কারনে ‘মধ্যবিত্ত শ্রেণী’ বরাবরই গল্প, উপন্যাস, কবিতা কিংবা গবেষণার কেন্দ্রে চলে আসে। জীবনের টানাপোড়ন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মান-অভিমান কিংবা দুঃখ-কষ্টের অলিগলিতে বিচরণ, মধ্যবিত্তের স্বপ্ন বিলাসী জীবনের এক চিরচেনা চিত্র। উচ্চবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত শ্রেণীর সে অর্থে জীবন নিয়ে তেমন কোন ভাবান্তর থাকে না, দুকিকের দুই প্রান্তিক অবস্থানে নিত্য নৈমিত্তিক কিছু ঝুট ঝামেলা ছাড়া আর তেমন কিছুই তাদের স্পর্শ করে না। মধ্যবিত্তের উপরে যাবার তীব্র বাসনা কিন্তু সক্ষমতার অভাব আবার নীচে পড়ে যাবার অশনি সংকেত সারাক্ষন তাড়িয়ে বেড়ায়।


চতুরমুখি চাপে পিষ্ট এই শ্রেণীর মানুষগুলোর জীবন সংগ্রাম নিয়ে কবি প্রবীর চ্যাটার্জী রচনা করেছেন ‘মধ্যবিত্ত সমাচার”।নিজের শ্রেণীর সাথে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা, উচ্চবিত্তের আগ্রাসন আর নিম্নবিত্তের খাবলে খাবার নেশা, মধ্যবিত্তকে নিজের অর্জনকেও উপভোগ করতে দেয় না, হতাশাগ্রস্ত করে তোলে, ক্লান্তিতে নেতিয়ে ফেলে, আশা নিরাশার ঝাপটায় উৎকণ্ঠিত করে তোলে।  জীবনের তেজ হারিয়ে অলস স্বপ্নে বিভোর হয়ে পরে, আলো হারিয়ে নিঃসীম অন্ধকারে নিজেকে বিসর্জন দেয় আবার কেউ বা দীর্ঘশ্বাসে ভবিষ্যৎকে চির বিদায় দেয়। জীবনের নিশ্চিত পরিনতি মেনে নিয়ে, সস্তা সিগারেটের  ধোঁয়ায় কখনও আবার স্বপ্নের ফানুস উড়ায়। দেশ কাল ভেদে আনুপাতিক ভিন্নতা থাকলেও, পুঁজিবাদী কাঠামোর শ্রেনিবিন্যস্ত সমাজে এ চিত্র উত্তর দক্ষিন সর্বত্রই এক ও অভিন্ন।


অন্য দুটো শ্রেণীর জীবন ধারায় খুব বেশী সংগ্রামী বৈচিত্র্য কিংবা চোখে পড়ার মত তেমন কিছু থাকে না, অনেকটাই স্থায়ি এবং পরিমাপযোগ্য  একটা ধারা দেখা যায়। কিন্তু মধ্যবিত্তের আরেকটি ধারা কবি’র চোখ এড়িয়ে গেছে, অনেকটা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কবি কেবল একটি পিঠ দেখেছেন, অন্য পীঠ এর এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস আছে। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, যে কোন সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক আন্দোলন, যে কোন পরিবর্তনের ডাক কিংবা দিন বদলের নেতৃত্বে থাকে সংগ্রামী চরিত্রের মধ্যবিত্ত শ্রেণীই।
কবিতার শিরোনাম যখন ‘সমাচার’ তখন  মুদ্রার দুটো পিঠই থাকা দরকার অন্যথায়,  খণ্ডিতভাবে পুরোটা দেখার সুযোগ নেই।


প্রবীর চ্যাটার্জী কে অসংখ্যা ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন। কবির নিজের অনুভূতিতে কবিতাকে দেখা হয়ত সম্ভব হল না, ভুল হলে ক্ষমা করবেন।