শ্রাবণের বিক্ষুব্ধ নদী শান্ত হয়ে আসে শীতের চাদর মুড়িয়ে,
বাঁক বদলায়, পথ বদলায়,
জীবনের মতোই কি তার গতিপথ?
প্রতি সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে আমি দেখি পৃথিবীর কোল জুড়ে নেমে আসছে অন্ধকার,
বিষাদের রঙ যে ওরা বলে কালো ঠিক তার মতোই কি এই অন্ধকার?
একদিন আমি ছিলাম পাহাড়,
সবুজ ছিলো, পাখি ছিলো, ছিলো কতক প্রাণী।
তারপর আঁধার রাতে সভ্যতা জানান দিয়ে গেলো,
ফসলের মাঠ, জোয়ারের জল রাস্তার ধারে পরে থাকা শিশুর মতো কাঁদছে।
আমার বুক কাঁপছে,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার কেবল আমার মুখে,
সমতল তো সুখ চেনে নি,
দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ছুটছে মহাকাল,
ওই যে ওরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বের হয়েছিলো সমতার লোভে,
ওদের বুকে আজ তাজা রক্তের স্রোত, মাথায় বুলেটের ফুটো,
এখানে কেউ সাদা ফুল খোঁজে না,
আগুন জ্বলছে, আলোর তীব্রতা বাড়ছে,
দালান উঠছে, কমছে মনুষ্যত্ব।
এ এক অন্য ক্ষুধা,
শেয়ালের মতো ক্ষুধা, কাকের মতো ক্ষুধা, শকুনের মতো ক্ষুধা।
লোভ বাড়ছে অসমাপ্ত ইচ্ছার মতো,
যে চোখ আকাশ দেখেছে,
যে কান বাতাসের ধ্বনি শুনেছে,
যে মুখ গেয়েছে ধরনীর গান,
যে বুকে ফুটে ছিলো একশ একটা লাল গোলাপ,
আজ তারা মরুর বুকে ধুলোর গল্পের ধ্বজা উড়ায়।
শেষ কবে আনন্দের হাসি হেসে ছিলো এই জনপদ,
জ্যোৎস্নাহীন দুর্ভিক্ষ জানান দেয় বিপদের,
নিদ্রাহীন রাত্রি জেগে পাহারা বসিয়ে ছিলো যৌবন,
তারপর দেখেছি করুন কংকাল, মৃত করোটির স্তুপ।
ওরা বাঁচতে দেয় নি, কথা বলতে দেয় নি।
অনাহার পেটে নিয়ে দেখি সভ্যতার লাঙ্গল চুরমার করছে মাটির পিণ্ড,
চোখে স্বাধীনতা নেই, বুকে বিশ্বাস নেই,
রোবট হয়ে ঘুরছি কতক মৃতদেহ।