বাদক
সাজেদুর রহমান


আজন্ম মুসাফির আমি হেঁটে বেড়াই ধূলিধূসর পৃথিবীর পথে;    
বাইসনের গুহা থেকে নীলনদের দেশে; দজলা নদীর পাড়ে আশুর শহরে,
জেরুজালেম থেকে ব্যাবিলন; ব্যাবিলন থেকে হরপ্পা নগরে,
দানিয়ুব নদীর কোল ঘেঁষে হেঁটে হেঁটে চলে গেছি মাঞ্চুরিয়া-এথেন্স-রোমে।
অবিরাম হেঁটে বেড়াই - কখনো মরুর বুকে, কখনো ফেনোত্তাল সমুদ্রে,  
কখনো গহীন বনে, কখনো বরফ-রাজ্যে; আলোয় কিংবা অন্ধকারে,    
সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতায়; জনপদ থেকে আরেক জনপদে ।

আমি কৃতদাস থেকে শাসক সকল মানুষের প্রিয়বন্ধু হয়ে
প্রিয়জনের মতন তাদের অন্তরে ডুব দিয়ে দেখেছি এক অনন্ত বিস্ময় -
সবার হৃদয়ে বসে এক প্রিয় বাদক তোলে নেশা লাগা এক অদ্ভুত সুর;
যে সুর পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ সকল মানুষের পথচলার প্রধান ফুয়েল !
যেমন একবার উত্তাল সমুদ্রে দিশাহীন এক নাবিকের ভয়ার্ত চোখে
দেখেছিলাম তার প্রেয়সীর বিদ্যুৎ-চমকিত মায়াবী মুখ! সে যেন
কাজল-মেঘ চোখে কাপাস্বরে বলছে - 'তুমি হালটি ছেড়ো না তবু;
ফিরে এসো তোমার একেবারে নিজস্ব 'আমার বুকটিতে' ।'
একবার গভীর বনের ভিতর রক্তরাঙ্গা হাতে একটি রাজ্যের রাণীকে
দেখেছি কি ভীষণ মমতায় তার পরাজিত প্রেমিক রাজার বুকের ভিতর -
এক নতুন যুদ্ধের নতুন সব বারুদ ঢেলে দিতে ।
লিডিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়-চূড়ায় এক মধ্যবয়সী নারীকে দেখেছিলাম
তার পিতৃহীন সন্তানের জন্য একটি মনোরম, শৈল্পিক গৃহ নির্মাণ করতে ।    
এভাবে আমি পৃথিবীর শহরে-নগরে, সমুদ্রে-পাহাড়ে, মরুতে-বরফে
মানব ও মানবীর সকল স্বপ্নে, সকল কাজে, সকল সৃষ্টিতে -
শুনেছি এক একজন বাদকের নেশা লাগা এক এক অদ্ভুত সুর -
সে সুর অনন্ত প্রেমের - কখনো মধুর, কখনো নিঠুর ।