নওসিন তাাসিন সাজের লেখা


আমি অতটা  মেধাবী নই।ভাল বলতে পারিনা।যারা ভাল লেখেন।ভাল বলেন আমি। তাদের মুদ্ধ ভক্ত।তেমনি একজন নওসিন তাসিন সাজ  এ লেখাটি লিখেঋেন....


যেটা ছিল না ছিল না সেটা না পাওয়াই থাক এর অর্থ বোঝার মত বয়সও যখন হয়নি আমাদের, তখন আমরা গলা ছেড়ে গাইতাম আমাকে আমার মত থাকতে দাও। তারপর আমরা বড় হলাম। দূরবীনে চোখ না রাখা শিখলাম। জানলাম, যেখানে শুরুর কথা বলার আগেই শেষ, সেখানে মুখ ডুবিয়ে খুঁজতে চাওয়ার লোক আমি ছাড়াও ঢের আছে। জানলাম, রোদ পালানো বিকেল বেলার ঘ্রাণ ক্যামন হয়। আড়াল পেলেই ভেঙে যাবার, নিখোঁজ হবার মানে বুঝলাম।


গভীরে যেতে বলে কেউ আমাদের বলে গেল - এই বুঝি তল পেলে ফের হারালে, প্রয়োজনে ডুবে যাও। শুনলাম তিস্তানে৷ যেখানে পাঁচ টাকা দিয়ে দিনের শুরু হয়, আর শেষ হয় ষোল টাকা দিয়ে৷ কী অবলীলায় একজন বলে গেল, যখন সময় অনেক দরকার সময় থাকবে না৷ কী সহজ সত্যি বলা হয়ে গেল ধুপ করে - তখন সময় তোমার পাশে নেই। একই সাথে মানুষ যে "আমার জন্য আলো জ্বেলোনা কেউ" আর "বাড়িয়ে দাও তোমার হাত" এর মত দুটো আলাদা কথা বলতে পারে, তাও দেখানো হয়ে গেল।


লেখা হল -
দূর হোক বানানের অকারণ চিন্তা,
হ্রস্ব ই দীর্ঘ ঈ হ্রস্ব উ দীর্ঘ ঊ।


কনফর্ম না করার প্রবণতা আমি এইসব পোয়েট্রিতে পাই। আমি আমার একটা অদৃশ্য দেয়াল ভেঙ্গে অনেক কিছু অবলীলায় লিখে ফেলতে পারি না। এই লোকটা লিখে ফেলে। আমাদের হয়েই লিখে ফেলে। লিখে ফেলে - ফাঁকা হোক ফুটপাথ হাঁটবো আরামে। কিংবা একরাশ বিপদের মাঝখানে কী করে বসন্ত আসার কানাঘুষো শোনা যায়, কবিদের মৃতদেহ কী করে চাপা পড়ে কাগজে, তার ছেঁড়া যন্ত্রের মাঝখানে শুয়ে আমলকী বনে কী করে বসন্ত আসে।


পালিয়ে যাওয়ার ছুতো করতে কী করে সুতো আলগা দেওয়া যায়, বুকের ভেতর মৃত নদীর মতো শীতে কী করে রোজ দূরে হেঁটে চলে যাওয়া যায় তাও এই মানুষটা বলে ফেললেন। বলে ফেললেন কান্না চেপে কী করে দুমড়ে যায় মানুষ। বলে ফেললেন অসংকোচে, পাখার ব্লেড-এর তালে সোজাসুজি কথা বলার কথা। দেখালেন কী করে পকেট ভরা সত্যি মিথ্যে রেখে দেয়া যায় ব্যাগের নীলে আর কী করে হয় তর্কে বহুদূর। আয়ুরেখা ধরে হেঁটে গেলেন, জন্ম-মৃত্যু ভেঙ্গে ভোর বেলা আলো হয়ে ফোটার গল্প শোনালেন। কখন নাগরদোলা ওলটে পালটে আমাদের জোনাকি ছিঁড়ে খেল তার ফিরিস্তি দিলেন।


বললেন রুপোর বালির কথা। বললেন কী করে সেই রুপোর লোভে বাড়ি ফেরা যেত রসাতল। লিখলেন আলস্যকে - যখন গ্রীষ্মের সকালগুলোতে পর্দা ঠেলে হাওয়া এসে ভাসিয়ে দেয় আমাদের, যখন আমাদের বিছানা ঘুম চোখের কোল ছাড়েনি। বললেন, আসলে সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই। বললেন, নতজানু হয়ে কেউ বসে নেই কোথাও। বললেন, আর একশো বছর আমি বাঁচবই, পড়ে দেখ, লেখা আছে স্পষ্ট দেওয়ালে। শেখালেন অভ্যেস বলে কিছু হয় না এ পৃথিবীতে, পালটে ফেলাই বেঁচে থাকা।


কী করে পেটের কথাগুলো ঠোঁটে আনা যেতে পারে তার থেকে ভাল করে জানতো? দেড়’শ বছর আগেও আমি তোমায় খুঁজে পথের ধারে, ক্লান্ত হয়ে শুয়ে ছিলাম এভাবেই ঠিক অন্ধকারে, এখন তুমি খুঁজতে এলে? - এইভাবে কে বলতে পারত?


আমরা শুনলাম ম্যানহোল আর কলেজ স্ট্রীটের গলিতে, Miyazaki আর সত্যজিতে মাখা, Truffaut এর দিনের কথা। কিংবা আমি আমি জানি জানি, চোরাবালি কতখানি গিলেছে আমাদের রোজ। তার গলায় ভাড়া করা সাইকেল রেসগুলো কখনো ব্যাকপাসে ছুটলো। দেখলাম কী করে নৌকোর মুখোমুখি হয় সৈন্যদল। বললেন কী করে একটা চালের ভুলে মন্ত্রী খোয়া গেলে আমরা বুঝে উঠতে পারি না কোথায় গিয়ে দাঁড়াব।


আমাদের যিনি এইভাবে পড়লেন, নিজেকে যিনি এইভাবে পড়লেন, পেশায় তিনি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। পড়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক্স এন্ড  টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনয়ারিং এ। ছিলেন গোল্ড মেডালিস্ট৷ এনালগ সার্কিট ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন বছর সাতেক। "আমাকে আমার মত থাকতে দাও" দিয়ে তাকে আমরা চিনলেও তারও আগে তিনি লিখেছেন আরো অসংখ্য জিনিস৷ সংখ্যাটা ভুলে গেছি। তবে সেটা একশো পেরোবে। এই মানুষটার কাছে আমি লিখতে শিখি। ছোট ছোট বাক্যে। সহজ সব সত্যি। Perseverence শিখি৷ আর শিখি কী করে বলতে হয় - নতজানু হয়ে কেউ বসে নেই কোথাও। শিখি অসংকোচে, পাখার ব্লেড-এর তালে সোজাসুজি কথা বলা। আর শিখি একশ বছর আমি বাঁচবোই বলে বেঁচে থাকার গান।


(এই লেখাটা অর্ধেক লিখে রেখে দিয়েছিলাম বহু আগেই৷ আজকে শেষ করতে ইচ্ছা হল। তাই বাড়ি ফিরতে ফিরতে অসংকোচে শেষ করলাম।)


আরও শীত কিংবা দূরবীনে চোখ রাখবো না |
দু'হাজার দশ থেকে তেইশ