ময়ুরপঙ্খী নৌকোয় চড়ে এক প্রত্যূষে
আমার ভাঙা ঘাটের সন্নিকটে এলে।
ঘাটপাড়ে বসে আমি তখন
দুর্বাঘাসের তীক্ষ্ণ ফলায় শিশিরবধ যজ্ঞ দর্শনে মগ্ন।
ভোরের সুর্য তেজদীপ্ত হয়ে উঠেছে প্রায়।
এখুনি মৃত্যু হবে রাতের অশ্রু এই শিশির কণার।
বেদনাবিধুঁর এ ক্ষণটিতে হতবাক আমি।
নদীর জলে বৈঠা ফেলার শব্দে সচকিত হই।
সেদিকে তাকাই।


মাঝি দূর থেকেই কিছু একটা বলতে চাইলো।
হাত ইশারায় থামিয়ে দিলে তাকে।
বললে কাছে যেতে।
ঘাটের কাছে নৌকো ভিড়লো।
বললে, 'উত্তরে যাবো। পালে চলা বজরা।
দক্ষিণের হাওয়া নেই এখন।
তাই থামতে হলো।
অনুমতি পেলে এ ঘাটেই নোঙর ফেলি।'
বললাম, 'কী সৌভাগ্য আমার!
ভাঙা ঘাটে কেউ বজরা ভিড়ায় না।'


নোঙর পড়লো ঝপ করে।
সিঁড়ি বেয়ে এক পা দু' পা করে নেমে এলে সন্তর্পনে।
আমার বুকের মাঝে তোলপাড়।
কী দিয়ে বরণ করি অতিথিকে!
দুরদেশী রাজকন্যা আজ আমার জীর্ণ কুটিরে!
বললাম, ' আমি এক অতি সাধারণ মানুষ।
তদুপরি একা।
কি দিয়ে করি আপ্যায়ন!'
বললে, 'রবো ক্ষণকাল।
কিছুই হবে না দিতে।
বজরাতে সবই আছে।'


শরতের আকাশে তখন নীল চাঁদোয়া।
সাদা সাদা বিচিত্র মেঘ।
বাগানে লাল গোলাপের কুঁড়ি পাঁপড়ি মেলেছে।
দক্ষিণা বাতাস বইতে শুরু করলো।


মাঝি বললো,' পালে হাওয়া লেগেছে।'
তুমি বললে,' তবে আসি। আবার দেখা হবে।'
বাগানের আধো-ফোটা গোলাপ কলি
তোমার হাতে দিয়ে বললাম,' বেশ।'
নোঙর উঠলো।
তোমার ময়ূরপঙ্খী সাঁ-সাঁ করে উত্তর দিকে ধাবমান।


সেই থেকে আমার কৃষ্ণপক্ষের শুরু।
প্রহর গোনা।
আবার কখন ভিড়াবে নৌকো আমার ভাঙা ঘাটে !
এভাবেই সকাল-দুপুর-রাত্রি কেটে যায়।
বলেছিলে,'আবার দেখা হবে।'
প্রতীক্ষায় আছি।


রচনাকাল: ঢাকা, ০৭ অক্টোবর ২০১৮